১ লাখ ৬০ হাজার বছরের মধ্যে প্রথম দেখা যেতে পারে বিরল এ ধূমকেতু
Published: 14th, January 2025 GMT
বিশ্বের আকাশে দেখা যেতে পারে এক উজ্জ্বল ধূমকেতু। আর সেটি হলে তা হবে ১ লাখ ৬০ হাজার বছরের মধ্যে বিরল এ ধূমকেতু দেখার প্রথম ঘটনা।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলেছে, কোনো ধূমকেতু কতটা উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে, তা আগেই ধারণা করা খুব কঠিন। কিন্তু ‘সি/২০২৪ জি৩ (আটলাস)’ নামের এ ধূমকেতু খালি চোখে দেখার মতো যথেষ্ট উজ্জ্বল হতে পারে।
গতকাল সোমবার ধূমকেতুটি পেরিহেলিয়নে অবস্থান করছিল। এটি এমন একটি পয়েন্ট, যা কোনো গ্রহকক্ষের সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী বিন্দু। ধূমকেতু কেমন উজ্জ্বল হবে, সে বিষয়ের ওপর এ অবস্থানের প্রভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোমবার রাত থেকেই এটি দেখা যেতে পারে।
কোন কোন স্থান থেকে এ ধূমকেতু দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা এখনো অজানা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুক্র গ্রহের মতো উজ্জ্বল হতে পারে আর সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যেতে পারে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে।কোন কোন স্থান থেকে এ ধূমকেতু দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা এখনো অজানা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুক্র গ্রহের মতো উজ্জ্বল হতে পারে আর সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যেতে পারে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে।
নাসার ‘টেরেস্ট্রিয়াল–ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেম’–এ গত বছর ধূমকেতু ‘সি/২০২৪ জি৩ (আটলাস)’ শনাক্ত হয়।
কিংস কলেজ লন্ডনের অ্যাস্ট্রোপার্টিকল ফিজিকস ও কসমোলজির গবেষক শ্যাম বালাজি বলেন, ধূমকেতটির বর্তমান গতিপথের হিসাব–নিকাশ এ ইঙ্গিত দিচ্ছে, এটি সূর্য থেকে প্রায় ৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন (৮৩ লাখ) মাইল দূর থেকে অতিক্রম করবে; যা একে ‘সান–স্কার্টিং’ ধূমকেতু হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ১ লাখ ৬০ হাজার বছরে মাত্র একবারই এ ধূমকেতু দেখা যায়।
আরও পড়ুন৭০ বছর পর আবার পৃথিবীর কাছে আসবে যে ধূমকেতু২৩ মার্চ ২০২৪শ্যাম বালাজি বলেন, এ ধূমকেতু দেখার সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে স্থানীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও এটির আচরণের ওপরে। তিনি আরও বলেন, ‘অন্য সব ধূমকেতুর সঙ্গে তুলনা করলে এর দৃশ্যমানতা ও উজ্জ্বলতা অননুমেয় হতে পারে।’
এই গবেষক বলেন, দক্ষিণ গোলার্ধে বসবাসকারী লোকজন সূর্যোদয়ের আগে পূর্ব দিগন্তে এ ধূমকেতু দেখতে পাবেন। আর পেরিহেলিয়নের পর সূর্যাস্ত শেষে পশ্চিম দিগন্তে দেখা যাবে এই ধূমকেতু। এটি এ গোলার্ধ থেকেই সবচেয়ে ভালোভাবে দৃশ্যমান হতে পারে।
দক্ষিণ গোলার্ধে বসবাসকারী লোকজন সূর্যোদয়ের আগে পূর্ব দিগন্তে এ ধূমকেতু দেখতে পাবেন। আর পেরিহেলিয়নের পর সূর্যাস্ত শেষে পশ্চিম দিগন্তে দেখা যাবে এ ধূমকেতু। এটি এ গোলার্ধ থেকেই সবচেয়ে ভালোভাবে দৃশ্যমান হতে পারে।শ্যাম বালাজি, কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকবালাজি বলেন, ধূমকেতুটি ‘বেশ উজ্জ্বল’ হবে বলে ধারণা করা হলেও কোনো ধূমকেতু কতটা উজ্জ্বল হবে, তা অনুমান করা খুবই কঠিন। এর আগে যেসব ধূমকেতু উজ্জ্বল হবে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, সেসবের অনেকগুলো ছিল ক্ষীণ আলোসম্পন্ন।
বিশ্লেষকেরা জানান, যুক্তরাজ্যসহ উত্তর গোলার্ধের অন্যান্য দেশ থেকে এ ধূমকেতু দেখা কঠিন হতে পারে।
যাঁরা এ ধূমকেতু দেখতে চান, তাঁদের আলোর দূষণমুক্ত স্থান বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বালাজি। আর এটি দেখতে হলে বাইনোকুলার বা ছোট টেলিস্কোপ ব্যবহারের পরামর্শও দেন তিনি।
আরও পড়ুনছবির এই ধূমকেতু ৮০ হাজার বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে১৩ অক্টোবর ২০২৪এ ধূমকেতু দেখার ক্ষেত্রে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের ক্ষণ বিশেষভাবে স্মরণে রাখতে বলেন এই বিশেষজ্ঞ। বলেন, ধূমকেতুর অবস্থান নির্ণয় করা ও তা দেখার জন্য সময় গুরুত্বপূর্ণ।
জ্যোতির্বিদেরা এরই মধ্যে ধূমকেতুটির যাত্রাপথের ওপর নজর রাখতে শুরু করেছেন।
গত শনিবার নাসার নভোচারী ডন পেটিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধূমকেতুর একটি ছবি শেয়ার করেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে তোলা হয়েছে এটি।গত শনিবার নাসার নভোচারী ডন পেটিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধূমকেতুর একটি ছবি শেয়ার করেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে তোলা হয়েছে এটি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ডন পেটিট লেখেন, ‘কক্ষপথ থেকে ধূমকেতু দেখতে পাওয়া দারুণ বিস্ময়ের। আটলাস সি২০২৪–জি৩ আমাদের এখানে সফর করছে।’
আরও পড়ুনলেজ ছাড়া আলোহীন ধূমকেতু শনাক্তের দাবি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের১৭ ডিসেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।