নেত্রকোনায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দিলীপ হত্যাকাণ্ডে কেউ শনাক্ত-গ্রেপ্তার হয়নি
Published: 14th, January 2025 GMT
নেত্রকোনায় অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক দিলীপ কুমার সাহা রায় (৭১) হত্যাকাণ্ডের চার দিন পার হয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ; কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি। তাঁর পরিবারের সদস্যরা দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
দিলীপ কুমার সাহা রায় নেত্রকোনার আবু আব্বাছ কলেজের কৃষিশিক্ষা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মাইজার এলাকায়। তিনি নেত্রকোনার শহরের বড়বাজার এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানা–পুলিশের পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (পিবিআই) একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে, হত্যার রহস্য উদ্ঘানসহ জড়িত ব্যক্তিদের আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিলীপ কুমার সাহা রায় ও বিভা সাহা দম্পতির এক ছেলে ও মেয়ে ঢাকায় থাকেন। কয়েক দিন আগে বিভা সাহা ছেলের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন। দিলীপ কুমার বাসায় একাই ছিলেন। গত শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিভা সাহা ঢাকা থেকে বাসায় পৌঁছে ঘরের দরজায় তালা দেখতে পান। একপর্যায়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় দরজার তালা ভেঙে তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন এবং খাটের নিচে স্বামীর রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান। তাঁকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ঘটনায় গত রোববার রাতে বিভা সাহা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়। পুলিশ আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মামলার বাদী বিভা সাহা বলেন, ‘কীভাবে, কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা আমরা বুঝতে পারছি না। আমার স্বামীর সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতাও ছিল না। আমার স্বামীকে তো আর ফিরে পাব না, কিন্তু আমি চাই, ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনসহ জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় প্রতিবাদ অব্যাহত, একজন গ্রেপ্তার
পাবনা শহরের কালাচাঁদপাড়ার নিজ বাড়িতে জওহরলাল বসাক তুলশী (৭৭) নামের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শহরের আবদুল হামিদ সড়কে জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও সেচ্ছাসেবক দল মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনায় করা মামলায় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ঢাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাঁর নাম–পরিচয় প্রকাশ করেনি।
আরও পড়ুনপাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখম, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন২৮ জুলাই ২০২৫স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকেই জেলা শহরের বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুপুর ১২টার দিকে জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে মানববন্ধনের আয়োজন করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সেই সঙ্গে অবিলম্বে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দাবি করা হয়।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মাসুম, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক হিমেল রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ইয়ামিন খান, সদস্যসচিব কমল শেখ, যুগ্ম আহ্বায়ক দীপঙ্কর সরকার প্রমুখ।
বক্তারা জানান, জহুরলাল বসাক সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষক। তিনি মানুষ গড়ার কারিগর। দেশব্যাপী তাঁর হাজার হাজার ছাত্র রয়েছে। তাঁর মতো একজন মানুষের ওপর এই হামলা ন্যক্কারজনক। এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি করছেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
নুর মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ‘স্যার (জওহরলাল বসাক তুলশী) একজন সাদামাটা ও হাসিখুশি মানুষ। তাঁর মতো মানুষের ওপর হামলা আমাদের জন্য লজ্জাকর। আমরা ছাত্র হিসেবে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি।’
এ প্রসঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরই পুলিশের বিভিন্ন শাখা আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি হামলার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁকে ঢাকা থেকে পাবনায় আনা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত অন্যজনকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত বিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, আহত জওহরলাল বসাক পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। গত রোববার বিকেলে দুই ব্যক্তি তাঁর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে কুপিয়ে আহত করে ও আসবাবপত্র তছনছ করে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন জওহরলাল বসাক। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার দুপুরে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবং শহরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যানারে মানববন্ধন করেন।