যৌথবাহিনীর নির্যাতনে সাবেক ছাত্রদল নেতার মৃত্যুর অভিযোগ
Published: 14th, January 2025 GMT
নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে যৌথবাহিনীর হাতে আটকের পর নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাবেক এক ছাত্রদল নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
নিহত আবদুর রহমান (৩২) জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের হীরাপুর গ্রামের হাওলাদার বাড়ির মাওলানা ছাইদুল হকের ছেলে। তিনি সোনাইমুড়ি উপজেলার আমিশাপাড়ার ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি ছিলেন। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবি সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের অনুসারী।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নিহত আবদুর রহমানের ভাতিজা হাবিবুর রহমানকে (২৬) মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার সন্ধ্যার দিকে পুলিশ আবদুর রহমান ও হাবিবুর রহমানকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে এলে তাৎক্ষণিক তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবদুর রহমান মারা যান। অপরজনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের দুইজনেরই শরীরে জখমের দাগ ছিল।
নিহত আবদুর রহমানের জেঠাতো ভাই মো.
তিনি আরও বলেন, “থানায় সোপর্দ করার পর থানায় গিয়ে তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পাই। তখন তাঁরা পুলিশকে অনুরোধ করেন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। পুলিশ জানায়, আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতে পাঠানোর পর আদালতে আবেদন করলে সেখান থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। বারবার অনুরোধ করা সত্বেও পুলিশ শোনেনি। থানা থেকে তাদরেকে আদালতে পাঠানো হয় বিকেল পাঁচটার পর। আদালতে তাদেরকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার অদেশ দেন। পুলিশ তাদেরকে সন্ধ্যার পর নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর চিকিৎসাধীন অবন্থায় আবদুর রহমান মারা যায়। হাবিবুর রহমানকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই।”
তিনি দাবি করেন, “এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, “যখন তাদের পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়, তখন তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে রাইফেলের দুইটি গুলি ও তিনটি রাম দা উদ্ধার করা হয়েছে।”
ওসি আরো বলেন, “নিহতের লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। লাশের ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
ঢাকা/সুজন/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।