বিএনপি দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় পাবনার সুজানগরে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ১০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। 

বহিষ্কৃত আট নেতাকর্মী হলেন- সুজানগর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শেখ আব্দুর রউফ, সুজানগর পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান খাঁন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য কামাল শেখ, সুজানগর পৌর সভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি রুহল খাঁ, বিএনপি নেতা লেবু খাঁ, পৌর যুবদলের সদস্য মানিক খাঁ, যুবদল নেতা মনজেদ শেখ, যুবদলকর্মী হালিম শেখ, উপজেলা ছাত্রদল নেতা শেখ কাউসার ও সুজানগর এনএ কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি শাকিল খাঁ।

এদিকে ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো মামলা বা কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করা হলেও পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি।

দলীয় সূত্র জানায়, একজন মেয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শেখ আব্দুর রউফ গ্রুপের সমর্থকরা সুজানগর পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান খানের গ্রুপের সমর্থক সবুজ খানকে ছুরিকাঘাত করে। এ ঘটনার জের ধরে ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে পৌর বাজারের নন্দিতা সিনেমা হল রোডে উভয় গ্রুপ তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ উভয় গ্রুপের অন্তত ১৫ জন আহত হন। 

সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র, ককটেল ও লাঠিসোঁটা ব্যবহার করা হয়। এ ঘটনায় গোটা উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। এছাড়াও জনমনে আতঙ্ক দেখা দেয়। ফলে সৃষ্ট এমন পরিস্থিতিতে দলীয় স্বার্থে তথা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করা হয়। 

এদিকে দলের হাইকমান্ডের এ সিদ্ধান্তকে যথার্থ এবং সময়োযোগী বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপির শান্তিপ্রিয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ।

বিএনপি নেতা মজিবর রহমান খান সমকালকে বলেন, ‘শেখ আবদুর রউফ ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে দলকে ডুবিয়েছে। তার বহিষ্কার ঠিক আছে। আমাকে বহিষ্কার করা ঠিক হয়নি। ১৬ বছর বিএনপিকে আমরাই টিকিয়ে রেখেছি। আশা করি, দল আমাদের বিষয়ে বিবেচনা করবে।’

সুজানগর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শেখ আব্দুর রউফ হাসপাতালের বিছানায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি দলের জন্য জেল খেটেছি। আমাকে হত্যা করার জন্য ফ্যাসিবাদের এজেন্ট হয়ে মজিবর খানরা কাজ করছে। আমাকে মেরে ফেললে এখানে কেউ আর বিএনপি করবে না।’

সুজানগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবিএম তৌফিক হাসান আলহাজ্ব সমকালকে বলেন, বহিষ্কারের বিষয়টি কেন্দ্র করেছে। গুরুতর আহত সদস্যসচিব শেখ আব্দুর রউফকে বহিষ্কারের বিষয়টি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন।

পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব সমকালকে বলেন, দুই পক্ষের ব্যক্তিগত দ্বদ্বের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে। এটা রাজনৈতিক কারণে ঘটেনি।

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত মো.

মুজবির রহমান সমকালকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে এটি সরাসরি কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়। ব্যাক্তিগত শত্রুতার জের ধরেই সংঘর্ষ হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। ফলে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র স ন ত কর ম র সদস য র ব এনপ স জ নগর র রহম ন স ঘর ষ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ