‘মিউজিক ইকো রিসোর্ট’ সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম কর্নারে ছেঁড়াদ্বীপ-সংলগ্ন শেষ রিসোর্ট। পরিবেশবান্ধব এ রিসোর্ট সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অক্ষত রেখেছে। একেবারেই নিরিবিলি। অবারিত ঢেউ আর উত্তাল সমুদ্রে যাদের ভয় নেই, যাদের স্মার্টফোন আর গেজেটে আসক্তি নেই, যারা অবারিত উন্মুক্ত স্থানে বসবাস করতে আগ্রহী এবং যারা অ্যাডভেঞ্চারাস তাদের জন্য এ রিসোর্টটি উপযুক্ত। মোট কথা, এ রিসোর্টে প্রকৃতির আসল রূপ দেখার অফুরন্ত সুযোগ পাওয়া যায়। অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা পেতে জীবনে একবার হলেও যেতে পারেন মিউজিক ইকো রিসোর্টে। ততটা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও প্রকৃতি উপভোগ করার জন্য সত্যিকারের প্রকৃতিপ্রেমীরাই সেখানে যান।
ছেঁড়াদ্বীপ-সংলগ্ন এ রিসোর্টের দু’দিকেই সমুদ্র। চারদিকে রয়েছে ম্যানগ্রোভ আর কেয়া গাছের বাউন্ডারি। রিসোর্টের ভেতরে আছে অসংখ্য বৃক্ষরাজি। মনে হবে একটা অরণ্যে ঢুকেছেন। রিসোর্টের মূল ফটক থেকে বেরিয়েই স্যান্ডি বিচ। এর পূর্বদিকে রয়েছে নয়নাভিরাম ম্যানগ্রোভ। স্থানীয়রা তাই এ কর্নারকে ‘সুন্দরবন’ বলে ডাকেন।
জোয়ার-ভাটায় এর দৃশ্যপট একেবারেই আলাদা। পশ্চিমে অর্থাৎ পেছনের ফটক দিয়ে বের হলে মনকাড়া রক বিচ। যেন সিক্রেট বিচ; যেখানে বসে সান্ধ্যকালীন চা-নাশতা খেতে খেতে সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায় অনায়াসে।
এখান থেকে ১০ মিনিটে হেঁটে ছেঁড়াদ্বীপ যাওয়া যায়। পরিবেশবান্ধব কনটেইনার হাউস ও তাঁবু ঘরে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মেনু দেখে খাবার অর্ডার করা ছাড়াও রয়েছে দৈনন্দিন খাবারের প্যাকেজ। অভিজ্ঞ রাঁধুনির কাঠের চুলায় সামুদ্রিক মাছের স্বাস্থ্যকর রেসিপি এবং সুস্বাদু বারবিকিউয়ের আসল স্বাদ পাওয়া যাবে এখানে। নারিকেলবীথির তলায় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। মনে হবে যেন প্রকৃতির সবুজ ছাতার নিচে বসে খাচ্ছেন, নিজের বাড়িতেই আড্ডা দিচ্ছেন।
এখানে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন খেলা ছাড়াও লোকাল বোটে চড়ে অর্থের বিনিময়ে মাছ শিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে ছেঁড়াদ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটক আগে থেকে অর্ডার করে সকাল, দুপুর বা রাতের খাবারও খেতে পারবেন।
এ পয়েন্ট থেকেই সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। এখানে সমুদ্রের শো শো গর্জন, কেয়া আর নারিকেল পাতার মর্মর ধ্বনি, পাখির ঐকতান সৃষ্টি করে মায়াবী সুর। সুরের অবাধ সাগরে কাটান দিন-রাত।
খুব বেশি মানুষের আনাগোনা নেই এখানে। যারা নিরিবিলি ও নির্জন পরিবেশে সময় কাটাতে চান, এ রিসোর্ট তাদের জন্য আদর্শ। চাইলে (সম্পূর্ণ প্রাইভেসি নিয়ে) ছোট-বড় গ্রুপ, যে কোনো ফ্যামিলি, করপোরেট পার্টির ক্ষেত্রে পুরো রিসোর্ট ভাড়া নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে অগ্রিম বুকিং কনফার্ম করে যেতে হবে। রুম ভাড়া (২ জনের জন্য) ৪ হাজার টাকা এবং তাঁবু ঘর ভাড়া ৩ হাজার টাকা।
লোকেশনটি খুঁজে পাওয়াও খুব সহজ। সেন্টমার্টিন দ্বীপে জাহাজ ঘাটে নেমে যে কাউকে বললেই হবে ‘সুন্দরবন যাব’। তাহলে আর কোনো লোকেশন জানার দরকার নেই। স্থানীয় বাহনে আধা ঘণ্টার যাত্রায় দ্বীপের অনেকটাই সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আপনি পৌঁছে যাবেন দ্বীপের শেষ রিসোর্ট দক্ষিণ-পশ্চিম কর্নার ‘মিউজিক ইকো রিসোর্টে’। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস