Samakal:
2025-05-01@15:55:32 GMT

আমলাদের চাপে পিছু হটছে কমিশন

Published: 14th, January 2025 GMT

আমলাদের চাপে পিছু হটছে কমিশন

আমলাদের চাহিদাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি এবং অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছিল কমিশন। তবে এখন কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে থাকছে না সেই প্রস্তাব। আমলাদের চাপে এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ক্যাডার কর্মকর্তাদের আন্দোলন আমলে নিয়ে নতুন করে সুপারিশ প্রতিবেদন তৈরি করছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ বাস্তবায়নে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জমা দেওয়ার সময় চেয়েছিল কমিশন। গতকাল মঙ্গলবার কমিশনের চাহিদার ভিত্তিতে তাদের এ সময় দিয়েছে সরকার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের দুই সদস্য সমকালকে জানান, খসড়া প্রতিবেদন তৈরির শুরুতে তারা বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের প্রশাসনের বিষয়টি বিবেচনায় নেননি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সুপারিশ প্রস্তুত করা হয়েছিল। এখন উন্নত রাষ্ট্রের প্রশাসন কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বিশ্বে দুই মডেলে প্রশাসন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যেমন– ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাজ্যের প্রশাসনে পদোন্নতি হয় এসিআর বা কর্মদক্ষতা অনুযায়ী। আর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া প্রশাসনে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিটি পদের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। ডিসি-এসপিসহ সব পদে নিয়োগের জন্য প্রকাশ করা হয় বিজ্ঞপ্তি। সে অনুযায়ী যাদের যোগ্যতা আছে, তারা আবেদন করেন। এরপর স্বাধীন নিয়োগ কমিটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়। কমিশন উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের পদোন্নতির পদ্ধতিকে বেছে নিতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা দিতে চাইছেন না।
জানা যায়, কমিশনের প্রধান দেশের বাস্তবতা বিবেচনা করে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে ছিলেন। আমলাদের আন্দোলনের পর কমিশনের কয়েক সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কমিশন। 

পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো তথ্য দিতে পারব না। কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর পর জানতে পারবেন। 

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছিল। ওই সভায় কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছিলেন, এখন থেকে উপসচিব ও যুগ্ম সচিবরা পরীক্ষা ছাড়া পদোন্নতি পাবেন না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা নেবে। ৭০ নম্বর না পেলে পদোন্নতি পাবেন না। এ ছাড়া উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ সুপারিশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিসিএস স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে বের করে দেওয়ার প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী পে-কমিশন এবং অবসরের বয়স বাড়ানোর ব্যাপারে সুপারিশ থাকতে পারে। নিয়োগের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব না করার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা থাকবে। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করা যাবে। তবে রাজনৈতিক কারণে কাউকে নিয়োগবঞ্চিত না করার বিষয়ে প্রস্তাব থাকবে। সেনাবাহিনীর মতো সব ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে সুপারিশ থাকতে পারে। পদোন্নতি ও পদায়নের সময় যোগ্যতা, সততা ও দক্ষতা প্রাধান্য পাবে। কর্মকর্তাদের জবাবদিহি ও স্বাধীনতা থাকবে। কেউ দুর্নীতি করলে থাকতে হবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার বিধান। গবেষণা সেল গঠনের পাশাপাশি দেশের আট বিভাগ থেকে ১০ বিভাগে রূপান্তরের সুপারিশ করা হতে পারে। 

সেবা সম্পর্কিত সুপারিশ এখনও যুক্ত হয়নি
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কমিশন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ, ছয় জেলা এবং চার উপজেলা সফর করে অংশীজনের মতামত ও পরামর্শ নিয়েছে। এ পর্যন্ত ২০টির বেশি সভা করেছে কমিশন। লক্ষাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে জনপ্রশাসন সংস্কার সংশ্লিষ্ট অনলাইনে পাওয়া মতামত এবং নাগরিক পরিসেবা সম্পর্কে নাগরিকের কাছ থেকে পাওয়া সুনির্দিষ্ট অভিমত নিয়ে এখনও যাচাই-বাছাই চলছে। তা ছাড়া কমিশনের সদস্যরা ৬ থেকে ৭ জানুয়ারি কুমিল্লা ও চাঁদপুরের মতলবে অংশীজন এবং মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, যা সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত করার কাজও চলমান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনপ্রশাসনে নাগরিক সেবার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এটি সংস্কারের জন্য সবার আগে সুপারিশ করা উচিত।
সরকারি অফিসগুলোতে মানুষ নানাভাবে হয়রানি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঘুষ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। অথচ সংস্কার কমিশনের খসড়ায় মানুষের সেবা সম্পর্কিত বিষয়ে এখনও কোনো প্রস্তাব যুক্ত করা হয়নি। লক্ষাধিক মানুষ তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে যে মত দিয়েছে, সেগুলো এখনও পর্যালোচনা করেনি কমিশন।
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার সমকালকে বলেন, সরকারি অফিসে মানুষ যেন হয়রানি ও ঘুষ ছাড়া সেবা পাই, সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, মানুষকে সেবা দেওয়ায় জনপ্রশাসনের বড় কাজ। এ বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদনের সামনে রাখতে হবে।

যেভাবে কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন হবে
সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা হবে। এর পর প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ করবেন। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের মতামত প্রাধান্য পাবে। সবার মত নিয়ে সংস্কারের জন্য মূল প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দেশের সংস্কার কাজ চলবে।
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, জনপ্রশাসনের প্রধান সংস্কার হলো– ন্যায়ভিত্তিক কাজ করা সরকারের সদিচ্ছা। নিয়োগ শতভাগ স্বচ্ছ ও মেধাভিত্তিক হতে হবে। পুলিশি প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় নেওয়া যাবে না। 

কমিশনের প্রস্তাবেই ক্যাডার কর্তাদের ক্ষোভ 
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিসিএস প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্য, আলোচনা, সমীক্ষা ও মতামত ছাড়াই কমিশন একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিল, যা কাম্য নয়। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কমিশনকে খসড়া প্রস্তাব থেকে সরে আসার জন্য একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কমিশনের সুপারিশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৬৪ জেলার ডিসিরা।

গত ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে প্রতিবাদ সভার নামে শোডাউন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানকে আলটিমেটাম দেন প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। ২৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিজ নিজ দপ্তরের সামনে ‘কলমবিরতি’ করেন ২৫ ক্যাডারের সমন্বয়ে গঠিত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কর্মকর্তারা। কর্মসূচি শেষে পরিষদের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, দাবি আদায় না হলে ৪ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। তবে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে ওই সমাবেশের বদলে ‘জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস বিনির্মাণে করণীয়: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এসব কারণে কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সিভিল সার্ভিসের প্রত্যেক ক্যাডারের জন্য গঠন করা হয়েছে। অথচ এই কমিশন এককভাবে শুধু প্রশাসন ক্যাডারের মত নিয়েছে। অন্য ক্যাডারের এককভাবে মত নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, তারা কি সংস্কার প্রস্তাব দেবেন জানি না। তবে আমরা আমাদের দাবি কয়েকজন উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। তারা বলেছেন, আগে সুপারিশ আসুক, এর পর বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজ বুধবার সংস্কার কমিশনগুলোর প্রধান ও সদস্যদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদ কক্ষে বেলা ১১টায় সভাটি শুরু হবে। এ সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশন তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।

গত ৯ অক্টোবর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর পর তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির আগে খসড়া সুপারিশমালা অধিক পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের মেয়াদ ১৫ দিন বাড়ানো হয়।
বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধানসহ বিভিন্ন বিষয় সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর পর দ্বিতীয় পর্যায়ে পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আমল ক য ড র কর র জন য প কর ত দ র র র জন য আমল দ র পর ক ষ সরক র সদস য আবদ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ

১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।

বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?

দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।

মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা

এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে  বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।

এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ: 

নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা

নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে  অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।

এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে  শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।

মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক

মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।

এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও  শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা। 


লেখক পরিচিতি:

মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • র‍্যাংকিংয়ে মিরাজ-জাকেরদের অগ্রগতি
  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস