নির্বাচনী সংস্কারে সংসদে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের ঠেকানোর সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন যাতে দুর্বৃত্তমুক্ত হয়, সংস্কারে তাও হাইলাইটস করা হয়েছে।

শনিবার কুমিল্লা কোটবাড়ির বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (বার্ড) এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বদিউল আলম। এ এইচ কে স্যাটেলাইট সিটি বিষয়ে সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীর ‘কার্যপত্র মূল্যায়ন ও অনুমোদন বিষয়ক’ এ সেমিনার আয়োজন করে কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ।

বদিউল আলম বলেন, আমাদের চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে প্রায় তিন হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার। অনেকে চোখ হারিয়েছেন, তাদের সবার আত্মদান যেন বৃথা না যায়।

তিনি বলেন, আমাদের সংসদ ভবন পৃথিবী বিখ্যাত। এখানে কুৎসিত লোকগুলো আবার যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সংস্কারে সে সুপারিশ করেছি। নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন, তাদের যোগ্যতা নিয়েও অনেকগুলো সুপারিশ রয়েছে। আশা করি, সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো এসব সুপারিশ গ্রহণ করবে। দুর্বৃত্তদের কোনো রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ত হওয়ার পথ আটকাতেও সুপারিশ করা হয়েছে।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ১৫০টির মতো সংস্কার সুপারিশ করা হয়েছে। গত তিনটি নির্বাচনে যে কলঙ্ক হয়েছে, যে জালিয়াতি হয়েছে, তার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি। একটি স্বচ্ছ নির্বাচন কমিশন গঠনে নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহির আওতায় আনতে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে।

‘কুমিল্লাবাসী বঞ্চনা প্রতিকারে ঐক্যবদ্ধ হোন, সোচ্চার হোন’– স্লোগানে সেমিনারে কুমিল্লা নগরী ও বিভিন্ন উপজেলার বিশিষ্টজন অংশ নেন। এতে আধুনিক কুমিল্লা সিটি করোপরেশন এবং জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন বিষয়ে প্রয়োজনীয়তা, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়।

বার্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুল করিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তৃতা করেন কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম শরীফুল করীম, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু সায়েম ভূঁইয়া, কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চের সভাপতি গোলাম ফারুক, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব মজুমদার প্রমুখ।

শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী প্রণীত ‘স্বপ্নের মেগাসিটি কুমিল্লা’ কার্যপত্র মূল্যায়ন ও অনুমোদন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। মনিরুল হক বলেন, ঘোষিত কার্যপত্র অনুযায়ী মেগাসিটি গঠনের মাধ্যমে ৬০ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত কুমিল্লার মানুষের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র স প র শ কর

এছাড়াও পড়ুন:

মানিকগঞ্জে হালনাগাদ নেই সরকারি ওয়েবসাইট

মানিকগঞ্জে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের ওয়েবসাইটগুলো দীর্ঘদিন ধরে হালনাগাদ না হওয়ায় সেবাগ্রহীতারা ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারি সেবা ডিজিটালাইজেশনের যুগে জেলার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটে নেই সদ্য প্রকাশিত তথ্য, আপডেট নেই নিরাপত্তা প্রোটোকল। এমনকি অনেক লিংক ঠিকমতো কাজও করে না। ফলে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন পুরনো ও অরক্ষিত ওয়েবসাইটগুলো ‘সাইবার নিরাপত্তা’ ঝুঁকিতে রয়েছে। 

জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ‘চিকিৎসকের সহকারী পাচ্ছেন নির্বাচন কর্মকর্তার ফোন কল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কয়েকটি দপ্তর ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ করলেও বেশিরভাগ ওয়েবসাইট বছরের পর বছর অরক্ষিতভাবে পড়ে আছে। 

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি সরকারি দপ্তরকে নিয়মিত ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে হবে। মাসে অন্তত একবার আপডেট নিশ্চিত করতে হবে। আর অ্যাক্সেসিবিলিটি ও নিরাপত্তা মানদণ্ডও পূরণ করতে হবে। কিন্তু মানিকগঞ্জে খুব কম ওয়েবসাইটই এসব মানদণ্ড অনুসরণ করছে।

জেলার সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, এলজিইডি, বন বিভাগ, উপজেলা পর্যায়ের সরকারি দপ্তরসহ অন্তত ১৫টির বেশি ওয়েবসাইটে সর্বশেষ তথ্য আপডেট করা হয়নি। কিছু ওয়েবসাইট খুলতেই সার্ভার এরর দেখায়। আবার কোথাও পুরনো নোটিশ এখনো প্রথম পাতায় ঝুলছে। আর কয়েকটি ওয়েবসাইট শুধু কর্মকর্তা কর্মচারিদের তথ্য আপডেট করেন। কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য আপডেট করেন না। আবার কোন কোন দপ্তরের কর্মকর্তা কয়েক বছর আগে বদলি হলেও তার নাম এখনও ওয়েবসাইটে শোভা পাচ্ছে। 

বেউথা এলাকার রিয়াদ হাসান বলেন, “ওয়েবসাইটগুলোতে কিছু তথ্য থাকলেও প্রয়োজন মাফিক তথ্য থাকে না। নিয়মিত হালনাগাদ না করায় অনেক সময় নট ফাউন্ড লেখা আসে। এতে সময় নষ্ট হয়, আবার অনেক সময় ভুল তথ্য নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়।”

নারী উদ্যোক্তা খাদিজা বেগম জানান, সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী নির্ধারিত সেবার হালনাগাদ তথ্য ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় না। উন্নয়ন প্রকল্পের পূর্নাঙ্গ তথ্যও ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা হয় না। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সরকারি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

সাংবাদিক সোহেল হোসেন বলেন, “আমি প্রায় সময় বিভিন্ন দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বেশিরভাগ সাইটেই বছরের পর বছর কোনো আপডেট নেই। অনেক ওয়েবসাইটে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তথ্য পর্যন্ত সঠিক নয়। যে কর্মকর্তা তিন বছর আগে বদলি হয়ে গেছেন, তার নাম এখনো সেখানে আছে।”

সুশাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “সরকারি তথ্য পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ওয়েবসাইট। কিন্তু মানিকগঞ্জের ওয়েবসাইটগুলোর এই নাজুক অবস্থা ডিজিটাল সেবাকে পুরোপুরি ব্যাহত করছে। শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী, গবেষক, সাংবাদিক কেউই প্রয়োজনীয় তথ্য সময় মতো পাচ্ছেন না। জেলা পর্যায়ের ওয়েবসাইটগুলো দেখলে মনে হয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের নজরদারি নেই।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, “শুধু হালনাগাদ না থাকা নয়, এসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অত্যন্ত দুর্বল। কোনো সিস্টেমে কোথায় দুর্বলতা আছে এবং সেই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে কেউ ঢুকতে পারে কি না এটা পরীক্ষা করাই হলো VAPT (ভালনারেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড পেনেট্রেশন টেস্টিং)। সরকারি নির্দেশে থাকার পরও এসব মানা হচ্ছে না। ফলে এসব ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীরা ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। একটি নিরাপদ, গতিশীল ও নিয়মিত পরিচালিত ওয়েবসাইট শুধু প্রশাসনিক সেবাই সহজ করে না; এটি সরকারি সিস্টেমের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি করে। এই পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।”

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, “ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিটি দপ্তরকে ওয়েবসাইট আপডেটের জন্য নির্দেশ দিয়েছি। কয়েকটি দপ্তর কাজ শুরু করেছে, বাকিরাও দ্রুত সম্পন্ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ