শৃঙ্খলা ফেরাতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) প্রশাসক নিয়োগের কথা ভাবছে সরকার। রোববার সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ কেআইবিতে গিয়ে এ তথ্য জানান।

এক যুগেরও বেশি সময় কেআইবিতে চলেছে লুটপাট। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপিপন্থি কৃষিবিদদের দখলে চলে যায় কেআইবি। ভাগবাটোয়ারা নিয়ে তারা দুই ধারায় বিভক্ত। গত শুক্রবার রাতে দু’পক্ষ সংঘর্ষেও জড়ায়। ৩৫ হাজার কৃষিবিদের এই সংগঠনটির এখন কোনো কমিটি নেই। 
দু’পক্ষের সংঘর্ষের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, স্বনামধন্য এ সংগঠনে বিশৃঙ্খলা কাম্য নয়। এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। শৃঙ্খলা ধরে রাখতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মাসিক আয়ের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) আহ্বায়ক রাশিদুল হাসান হারুন ও বিএনপির গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। হারুন গ্রুপের নেতৃত্ব দেন কৃষিবিদ নুরুন্নবী শ্যামল আর শামীম গ্রুপের নেতৃত্ব দেন কৃষিবিদ শফিক, কৃষিবিদ ইয়ার মাহমুদ প্রমুখ।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধনপ্রাপ্ত এই সংগঠনের কৃষিবিদরা আওয়ামী লীগ আমলেও দুই ধারায় বিভক্ত ছিলেন। একটির নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড.

আবদুর রাজ্জাক। অন্যটির নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। কেআইবির সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালে। তবে মামলা-পাল্টা মামলায় এক কমিটি দিয়েই চলেছে আট বছর। হাইকোর্টের নির্দেশে ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। সে সময় আওয়ামীপন্থি কৃষিবিদরা কেআইবির দখল ছাড়েননি। তারা প্রশাসককে কেআইবিতেই ঢুকতে দেননি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপিপন্থি কৃষিবিদরা কেআইবির দখল নেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, রোববার উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ কেআইবিতে যাওয়ার পর লুটপাটের নানা তথ্য বেরিয়ে আসে। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মূল মিলনায়তন ছাড়াও একাধিক হলরুম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া হয়। এসব অনুষ্ঠানের খাবার সরবরাহ ও সাজসজ্জার জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তির নিয়ম থাকলেও মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ‘ইকবাল ক্যাটারিং’ নামে এই প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে মুনাফা তুলে নিতেন কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। বিএনপি নেতারাও ঠিক একই পথে হাঁটছেন। এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে খাবারের প্লেট প্রতি টাকা নেন বিএনপিপন্থি কৃষিবিদরা। এ ছাড়া  নিয়ম অনুযায়ী অনুষ্ঠানে অতিথিপ্রতি ১০০ টাকা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনকে দিতে হয়। কিন্তু এক হাজার অতিথি উপস্থিত থাকলে দেখানো হয় ৩০০ জন। এর মাধ্যমে এক দিনেই অন্তত ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এই টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিএনপিপন্থি কৃষিবিদদের মধ্যে চলছে বিরোধ। উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, এত অনিয়মের পরও তিন-চার মাস ধরে এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না। দ্রুত প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সব অনিয়মের তদন্ত করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক আইব ক ষ ব দ ইনস ট ট উপদ ষ ট আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ