নতুন প্রজন্ম মাদকে আক্রান্ত হচ্ছে ভয়াবহ রূপে
Published: 20th, January 2025 GMT
মাদকতার কুফল বর্তমানে সারাদেশে বিস্তার লাভ করছে। নতুন প্রজন্ম এর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে ভয়াবহ রূপে। এটা দেশের আইনশৃঙ্খলা জনগণের নীতি নৈতিকতাবোধ এবং পারিবারিক সমাজ ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার ওপর মারাত্মকভাবে কুপ্রভাব ফেলেছে।
সোমবার ডিআরইউর নসরুল হামিদ মিলনায়তন, অনুষ্ঠিত দেশ ও জাতির কল্যাণে 'মাদকতার কুফল ও প্রতিকার' শীর্ষক একটি জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান-এনডিসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোস্তফা কামাল। আন্তর্জাতিক আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওলাদে রাসুল সায়্যিদ আফফান মানসুরপুরী, ভারত।
সেমিনারের প্রধান আলোচক মাদানী মজলিস বাংলাদেশ'র সভাপতি শায়খ মুফতি হাফীজুদ্দীন তার বক্তব্যে বলেন, মাদকতা বর্তমান সময়ের একটি মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে ক্রমশ সারাদেশে বিস্তার লাভ করছে। নতুন প্রজন্ম এর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে ভয়াবহ রূপে। এটা দেশের আইনশৃঙ্খলা, জনগণের নীতি নৈতিকতাবোধ এবং পারিবারিক, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার ওপর মারাত্মকভাবে কুপ্রভাব ফেলছে। এই ভয়াবহ ব্যাধি থেকে দেশবাসী এবং বিশেষত নতুন প্রজন্মকে উদ্ধার ও মুক্ত রাখার জন্য সরকার, সুশীল সচেতন নাগরিক এবং আলেম-উলামা, ইমাম-খতীব ও ধর্মীয় ব্যক্তিবৃন্দের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে সুচিন্তিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মাঠপর্যায়ে কর্ম-তৎপরতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন, শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুল গাফফার, ভাইস প্রিন্সিপাল, জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া, ঢাকা, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক নদভী দা.
সেমিনারে 'মাদকতার কুফল ও প্রতিকার' শিরোনামে একটি গবেষণা-প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয় এবং মদ ও মাদকতা' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সেমিনারে উপস্থিত ডিজি এবং কারা মহাপরিদর্শকের মাধ্যমে সরকার এবং উচ্চ নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
প্রস্তাবনা গুলো হচ্ছে ইমাম-খতিবগণ, জন-প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে সরকার যদি কমিশন গঠন করে মাঠ পর্যায়ে মাদকতা বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। মাদকদ্রব্য উৎপাদন এবং চোরাচালানের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ প্রয়োগের ব্যাপারে আরও কার্যকরী ভূমিকা অনুষ্ঠিত করা। মদের নেশার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচারে শরিয়া আইনকে প্রাধান্য দেওয়া। অবৈধ বার এবং মাদকদ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা। বিদেশি অমুসলিম নাগরিকদের জন্য সরকারের লাইসেন্সধারী কোনো বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান যেন শর্ত লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে মদ নেশাদ্রব্য বিক্রি করতে না পারে এ বিষয়টি কঠোরভাবে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করা। অবৈধ কোন প্রতিষ্ঠান নজরে আসলে সেগুলোকে বন্ধ এবং উচ্ছেদ করা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জব্দ হওয়া মাদকদ্রব্য দৃষ্টান্ত হিসেবে জনসমক্ষে প্রকাশ্যে বিনষ্ট করা এবং আটক আসামিদের বিচারিক পদক্ষেপগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরা।
মাদকাসক্ত কয়েদিদের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য চিন্তাশীল আলেমদের পাক্ষিক কাউন্সিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা গেলে মাদকতার ছোবল থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড আরইউ পদক ষ প র রহম ন উপস থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।
তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।”
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে।
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
ঢাকা/এএএম/রফিক