সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুল মোতালেবের বাড়িতে ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিস্ফোরণে একটি চরমপন্থি দলের সদস্য ফজলু হক নিহতের ঘটনায় সংশ্লিষ্টরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। কথিত আছে, ওই ঘটনার মূল হোতা সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডল ও তাঁর নির্বাচনী সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম ওরফে ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল। কিন্তু শুরু থেকেই রহস্যজনক কারণে পুলিশের সন্দেহের বাইরে ছিলেন তারা। বিস্ফোরণের ঘটনাটি শুরু থেকেই আড়ালের চেষ্টা করেন বেলকুচি থানার সাবেক ওসি আনিছুর রহমান ও সহকারী পুলিশ সুপার জন রানা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েক দিন আগে জন রানা চাকরি ছেড়ে সস্ত্রীক কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। 
তবে বিস্ফোরণের ঘটনার ১৩ মাস পর ওই মামলার তদন্তে হঠাৎ গতি ফিরেছে। যদিও ঘটনার মূল অভিযুক্তরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন বেলকুচির থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.

আহসানুজ্জামান। কিন্তু তদন্তে ধীর গতির কারণে মামলাটি পরে স্থানান্তরিত হয় ডিবি পুলিশে। জেলা ডিবির সাবেক ওসি জুলহাজ উদ্দিন তদন্তের ভার নিয়ে শ্রমিক লীগ নেতা মোতালেবের ভাই আবু তালেবকে গ্রেপ্তার করেন। কিন্ত মোতালেবকে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হন। এ কারণে তদন্ত মাঝপথে ঝুলে যায়। এর পর ইন্সপেক্টর জুলহাজ উদ্দিন বদলির পর নতুনভাবে তদন্তের দায়িত্ব পান জেলা ডিবির এসআই নাজমুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধেও ঘটনার মূল হোতাদের না খুঁজে কালক্ষেপণ ও গড়িমসির অভিযোগ ওঠে। 
এদিকে স্থানীয়দের সহায়তায় গত ৫ জানুয়ারি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন শ্রমিক লীগের সাবেক নেতা মোতালেব। এর পর মূল হোতাদের ইন্ধনে মোতালেব ও তালেবকে অভিযুক্ত দেখিয়ে আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিলের পরিকল্পনা করেন এসআই নাজমুল। অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি জেনে গণমাধ্যমকর্মীরা তৎপর হলে এসআই নাজমুলের কাছ থেকে নথিপত্র জব্দ করেন জেলা ডিবির নতুন ওসি একরামুল হক। এরই মধ্যে তিনি তদন্ত শুরু করেছেন। ওসি একরামুল গত সোমবার বেলকুচিতে তদন্তে যান। কিন্তু পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ও সাবেক এমপি মমিন মণ্ডলকে খুঁজে পাননি তিনি।  ২০২৩ সালের ওই ঘটনায় মোতালেবের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে মারা যান একটি চরমপন্থি দলের সদস্য কুষ্টিয়া জেলা সদরের মিলপাড়ার বাসিন্দা ফজলু হক। অভিযোগ আছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডলের প্রতিপক্ষ আরেক সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে ঘায়েলে নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগের লোকজন কুষ্টিয়া থেকে বোমা তৈরির কারিগর ফজলুকে ভাড়া করে বেলকুচিতে আনে। কিন্তু বোমা তৈরির সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে মারা যান ফজলু। নিহতের ভাই বিপুল হক মামলা করেন। 
গত সোমবার বেলকুচিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা একরামুল হক বলেন, ‘যেহেতু খুব শিগগিরই চার্জশিট দাখিল করা হবে, তাই আসামিদের ভূমিকার বিষয়ে জানতে নিজেই সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছি। সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম বলেন, বাদীর এজাহারে সাবেক এমপি মমিন মণ্ডল ও ইঞ্জিনিয়ার আমিনুলের নাম নেই। 
সিরাজগঞ্জ সিআইডির সাবেক ইন্সপেক্টর ছায়া-তদন্ত কর্মকর্তা মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, বোমা বিস্ফোরণকে প্রেশার কুকার বিস্ফোরণ উল্লেখ করে মামলার আগেই আলামত নষ্ট করে ফেলে আসামি মোতালেব ও তার স্বজন। বেলকুচি থানা পুলিশের গড়িমসির কারণে ঘটনার আলামত বাড়ির পাশে খালে ফেলা হয়। এমনকি বোমার আগুনে ঝলসে যাওয়া ঘরের দেয়াল রঙ করা এবং ভাঙা টাইলসও পরিবর্তন করা হয়।  
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব ক এমপ ল ইসল ম ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানকে পরমাণু জগতে ঠেলে দিয়েছে ইসরায়েলই

ইতিহাসবিদরা ২০২৫ সালের ১৩ জুন দিনটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে রাখতে পারেন। এদিন বিশ্ব এমন এক সীমা অতিক্রম করেছে, যা থেকে তারা সহজে পিছিয়ে আসতে পারবে না। ইসরায়েল ১৩ জুন ভোরে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্তব্ধ করে দিয়েছে এবং বিশ্ববাজারকে অস্থির করে তুলেছে। এতে রাজধানী তেহরান ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কেন্দ্র তাবরিজসহ কমপক্ষে ১২টি প্রদেশে হামলা চালানো হয়।

ইসরায়েলি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযানের নাম ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ দিয়ে হামলার দায় স্বীকার করে। ইরানি কর্মকর্তারা এটিকে দেশটির দশকব্যাপী ছায়া সংঘাতের মধ্যে সবচেয়ে সরাসরি যুদ্ধের ঘটনা বলে বিবৃতি দিয়েছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দুটি উদ্দেশ্য তুলে ধরতে চেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। প্রথমত, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন– ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিগত সক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। নেতানিয়াহু প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও তাদের প্রতিরোধ করা হবে বলে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েল আশা করছে– নাটকীয় উত্তেজনা তেহরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি স্বার্থের জন্য আরও সুবিধাজনক একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি গ্রহণে চাপ তৈরি করবে। যার মধ্যে রয়েছে দেশটির সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত অপসারণ। ঠিক যেমন নেতানিয়াহু সামরিক শক্তির মাধ্যমে হামাসকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উভয় লক্ষ্যই শেষ পর্যন্ত কেবল একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধ স্থায়ী করতে পারে।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষীণ ছিল। শুক্রবারের ঘটনাগুলো বিপজ্জনকভাবে ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে। আক্রমণের মাত্রা, সাহস ও প্রভাব এবং প্রায় নিশ্চিতভাবেই ইরানের প্রতিক্রিয়া একটি আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করে, যা তার যুগ যুগ ধরে নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়ছে। 

২০১১ সালের আরব বসন্তের পর থেকে সৌদি-ইরানের মধ্যে একটি শীতল যুদ্ধ শুরু হয়। কারণ প্রতিটি দেশ তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে চীনা মধ্যস্থতায় সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেমে যায়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সম্মুখ ও গোপন উভয় উপায়েই যুদ্ধের সূচনা ঘটে। এটি এমন একটি সংঘাত, যা এখন আগামী বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের গতিপথ নির্ধারণের হুমকি তৈরি করেছে। এই সংঘাত এখন আরও তীব্র হবে কিনা– তা মূলত একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। তিনি হলেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা যদি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অস্তিত্বকে মৌলিকভাবে হুমকির মুখে দেখেন, তাহলে তেহরানের প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলি ভূখণ্ডের বাইরেও বিস্তৃত হতে পারে।

তেল আবিবের গোয়েন্দা বাহিনীর মূল্যায়নে দাবি করা হয়েছে, ইরান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো উৎপাদনের পথে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে এ দাবির বিরোধিতা করেছিলেন, তবুও এটি ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল। একই সময়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছিল, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করা এবং একটি সংশোধিত পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে উত্তেজনা কমানো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সমর্থন করেছিলেন, তিনি এগুলো আশঙ্কাজনক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের চেয়ে ভালো বলে তুলে ধরেছিলেন। ইরান তার নিজস্ব মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানালে আলোচনা ভেস্তে যায়।
মার্কিন প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক উত্তেজনা বাড়ানোর বিরোধিতা করলেও সীমিত আকারে ইসরায়েলি হামলার পক্ষে নীরব অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে, এ ধরনের হামলা আলোচনার ভারসাম্য বদলে দিতে পারে এবং একটি বার্তা পাঠাতে পারে যে, ইরান শক্তিশালী অবস্থান থেকে আলোচনা করছে না, ঠিক যেমন ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের অবস্থান তৈরি করেছেন।
ইসরায়েলের হামলা ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিলম্বিত করতে সফল হয়েছিল কিনা, নাকি তেহরানকে তা ত্বরান্বিত করতে প্ররোচিত করেছিল– তা এখনও অনিশ্চিত। যা স্পষ্ট তা হলো, সংঘর্ষ একটি নতুন পর্যায়ে ঢুকে পড়েছে। ইরান যদি এনপিটি থেকে বেরিয়ে যায় এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির বাধ্যবাধকতা ছাড়াই তার পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া শুরু করে, তাহলে কারও কারও মতে ইসরায়েলের অভিযান বরং এর নির্মাণকে ত্বরান্বিত করার সমতুল্য হতে পারে। অথচ এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল বোমা তৈরি বন্ধ করা।

ইব্রাহিম আল-মারাশি
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি সান মার্কোসের মধ্যপ্রাচ্য-ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক।

মোহাম্মদ ইসলামি
পর্তুগালের মিনহো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন গুণ
  • গোপালগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ৩ বাসের ধাক্কা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ২
  • গোপালগঞ্জে ৬ যানবাহনের সংঘর্ষ, পুলিশ সদস্যসহ নিহত ২
  • শাহরুখের পারিশ্রমিক ৪২৩ কোটি টাকা!
  • অন্য বছরের চেয়ে এই জুনে ডেঙ্গু বেশি
  • ইরানকে পরমাণু জগতে ঠেলে দিয়েছে ইসরায়েলই
  • রেললাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন মুঠোফোনে, ট্রেনে কাটা পড়ে চা–শ্রমিকের মৃত্যু
  • গোপালগঞ্জে সুদের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২৫
  • চার দেশের পাঁচ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশ
  • চার দেশের পাঁচ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার নির্দেশ