রিকশা-অটো ভাড়ায় নৈরাজ্য বন্ধে নীতিমালা দাবি বাকৃবি শিক্ষার্থীদের
Published: 22nd, January 2025 GMT
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাম্পাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। বৃহৎ ক্যাম্পাস হওয়ায় শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন যাতায়াতে রিকশা ও অটো অপরিহার্য। তবে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি, চালকদের দুর্ব্যবহার ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না থাকা, ছাত্রীদের যাতায়াতে নিরাপত্তার অভাব, রাতে যাতায়াতের ঝুঁকি ও চালকদের অসদাচরণের ফলে সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। গত বছর ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অটোরিকশা চালক কর্তৃক ছাত্রী হেনস্থার ঘটনাও ঘটে। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ জানিয়ে আসলেও তা সমাধানে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় রিকশা ও অটোর ভাড়ার তালিকা নির্ধারণ এবং ক্যাম্পাসের মধ্যে এসব যানবাহন চলাচলের নীতিমালা প্রণয়নের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
তাদের দাবি, বিশ্বব্যিালয়ের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টানানো, অসদাচরণকারী চালকদের চিহ্নিত করে তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে বালুর ট্রাকসহ ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ, শুধু নিবন্ধিত চালকদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি এবং প্রক্টর ও ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে পরিবহন মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খন্দকার নুজহাত তাবাসসুম ঐশী বলেন, “রিকশা বা অটোতে ওঠা এখন শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন ভাড়া নিয়ে ঝামেলা এবং চালকদের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হচ্ছে। শেষ মোড় থেকে কেআর মার্কেট পর্যন্ত ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা দাবি করা হয়। এমনকি তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চালক টাকা রাস্তায় ফেলে দেন।”
আরেক শিক্ষার্থী নাফি সরকার বলেন, “কেআর মার্কেট থেকে জব্বার মোড় পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু চালকরা তা নিতে চান না। বরং উচ্চস্বরে কথা বলা ও অসম্মানজনক আচরণ করা তাদের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ছুটির দিনে বহিরাগত চালকদের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।”
জারা তাসনীম আদীবা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “ছাত্রীদের সঙ্গে অটোচালকদের দুর্ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে। আমরা ভাড়া ঠিকমত দিতে চাই। কিন্তু চালকরা অহেতুক অশোভন আচরণ করেন। রাতের বেলা যাতায়াতে ভয় কাজ করে। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.
তিনি বলেন, “আমরা চাইলেও সব রিকশা ও অটোচালকদের আইডি কার্ড দিতে পারছি না। কারণ তারা কেউই শুধু ক্যাম্পাসে রিকশা চালান না। আমাদের ক্যাম্পাস উন্মুক্ত হওয়ায় চালকরা এক-দুজন যাত্রী নিয়েই এখানে চলে আসেন। তবে আমরা একটি সমাধান হিসেবে চালকদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক চালু করার কথা ভাবছি, যাতে তারা সহজেই শনাক্তযোগ্য হন। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভালো থাকুক। তাদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে আমরা সবসময় কাজ করে যাচ্ছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল অফিস, নিরাপত্তা শাখা এবং কমিউনিটি কাউন্সিলের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। আমরা একটি সমাধানের জন্য পরিকল্পনা করেছি। এর মধ্যে চালকদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক ও ভাড়ার চার্ট তৈরি করা অন্তর্ভুক্ত। এটি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আমরা কাজ করছি চালকদের আচরণ ও সেবার মান উন্নত করতে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস জীবন নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারে। শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তার দিক থেকেও আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে। বেশিরভাগ রিকশাচালক কোন আইন-কানুন মানে না এবং তাদের অনেকেরই প্রশিক্ষণ নেই। তবুও আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে ক্যাম্পাসের স্পিড ব্রেকারগুলো রঙ করে দৃশ্যমান করা হয়েছে, যাতে পথ চলা আরও নিরাপদ হয়।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য চ লকদ র ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’