সুহান রিজওয়ানের ‘নয়পৌরে’ তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ। মনে হয়েছে গল্পগুলো এক বসায় পড়ে ওঠার মতো। অবশ্য এক বসায় আমার পড়া হয়নি। মেট্রোরেলে যেতে-আসতে বেশ ক’দিন সময় নিয়ে পড়েছি। আমার ধারণা যাদেরই রিডার্স ব্লক চলছে, এ বই তাদের ব্লক কাটাতে সহায়ক হতে পারে।
প্রথম গল্প, ‘ডেড সোলস’ পড়তে গিয়ে সাই-ফাই সিরিজ ‘ব্ল্যাক মিরর’–এর কথা মনে পড়তে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চুয়াল জীবন থেকে আয়-উন্নতির প্রলোভন কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে তার টানটান কাহিনি। শুরু থেকেই গল্পের মধ্যে ঢুকে যেতে হয়। সমাপ্তির টুইস্টটা পরিচিত। অনুমেয়ও লাগতে পারে।
দ্বিতীয় গল্পটা, ‘জট’ আমার ব্যক্তিগত পছন্দের। অদ্ভুতুড়ে, অতিপ্রাকৃতিক গল্পের মধ্যে যদি একটা লুক্কায়িত বার্তা থাকে, একটা দ্বিতীয় গল্প থাকে, চমৎকার ব্যাপার হয়। এই শহরের ভয়াল, স্থবির জ্যাম গল্পের নায়িকাকে যে পরিণতির মুখে ঠেলে দিয়েছে, আদতে আমরা সবাই বোধহয় এমন পরিণতি বরণ করে নিচ্ছি। ভূত-প্রেত-দানব বা শয়তানের চেয়ে এইসব দৈনন্দিন জীবনের হরর আমাকে বেশি অস্বস্তি দেয়। যে কারণে এই গল্প আমার কাছে শুধু এই বইয়ের প্রিয় গল্প হয়ে থাকবে। সামগ্রিকভাবে নয়। মনে হয়েছে, শেষ দিকে এখানে এ গল্পের আবহ অনেক বেশি ব্যাখ্যা করে ফেলেছেন লেখক। পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলেই হয়তো ভালো হতো।
পরবর্তী গল্পে একটা উৎসবের দিন, স্বামী-স্ত্রীর প্রতিদিনের স্বাভাবিক আলাপ, শীতল বিতণ্ডা এবং এসব থেকে একটি অবশ্যম্ভাবী মোচড় এবং ভয়াল পরিণতি–একটি নিখুঁত ‘নিত্যদিনের হরর’। দেখা যায়, স্ত্রী স্বামীকে এটা-ওটা কাজ করতে বলছেন, অনীহা দেখলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন, উৎসবের দিনে বিশেষ খাবার বেড়ে দিচ্ছেন, এর মধ্যে সন্তান কাঁদছে। এইসব স্বাভাবিক দৈনন্দিন ঘটনার মধ্যে যে লুকিয়ে থাকা অস্বস্তি, তা একসময় প্রকট হয়ে ওঠে ক্রমশ দানবীয় রূপ ধারণ করে। শিহরণ জাগানো ভয়ের গল্প। এটিও বইয়ের অন্যতম প্রিয় গল্প হয়ে থাকবে। এর পরেরগুলোয় ‘সমাপ্তি’ বিষয়টি উপস্থিত মনে হয়েছে। বিশেষ করে ‘স্বপ্ন’ পড়তে গিয়ে ‘ফাইনাল ডেস্টিনেশন’ সিরিজের কথা মনে না পড়ার কোনো কারণ নেই। ‘বাজি’র সমাপ্তিতে কিছুক্ষণ বিষণ্ন হয়ে না থাকার উপায় নেই। ‘দ্বিতীয়জন’ গল্পের মূল বিষয় বেশ আলাদা। এমন গল্প আরও অননুমেয় হোক, এমনটাই আশা রাখব। ‘সঙ্গী’ গল্পটার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন ছিল বৈচিত্র্যময়। ‘মাছবাজার’ গল্পটা হঠাৎ করে যেদিকে মোড় নেয়, তা অপ্রত্যাশিত ছিল। একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ ভাগ করে নিলে ভাবি পাঠকদের অসুবিধা হবে না আশা করি। ব্যক্তিগত অভিমত, গল্পটির মূল অতিপ্রাকৃত উপাদান ‘লাল থকথকে জেলি’ জাতীয় পদার্থ না হয়ে যদি বিমূর্ত কিছু হতো, পাঠক হয়তো আরও আনন্দ পেত। এরপরও ব্যক্তিগত জীবনের ভয় থেকে বৈশ্বিক আতঙ্ক তৈরি হওয়ার গল্পটিকে আলাদা অবস্থান দিতে হবে। সর্বশেষ গল্পটা ‘সিডি সংক্রান্ত জটিলতা’–মানুষের আদিম প্রবৃত্তির সঙ্গে শয়তানের উপাসনার বিষয় মিলিয়ে বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এর সমাপ্তিটা যে অস্বস্তি সৃষ্টি করবে, তা সহজে ঝেড়ে ফেলা সম্ভব হবে না।
সুহান রিজওয়ানের গদ্য ভালো। বিভিন্ন ঘটনা ও চরিত্র নিয়ে তাঁর ছোট ছোট লেখা পাঠককে আকর্ষণ করে। তবে এই বইয়ে তাঁর গদ্যের সেই বিশেষ সৌন্দর্য কম খুঁজে পেয়েছি। ঘটনা ও চরিত্রগুলোর বর্ণনা অনেকটাই একরৈখিক; তবে সিংহভাগ পাঠকের কাছে লেখাগুলো ভণিতাহীন বা মেদহীন মনে হতে পারে। এই ধারার গল্পকে মনে রাখতে হলে গল্পে স্বকীয়তা ও চমকপ্রদ সমাপ্তি উপকারী। বৈশিষ্ট্য দুটোর অভাব উপলব্ধি করেছি। সুহান রিজওয়ান আধুনিক সময়ের নিবিড় পর্যবেক্ষক। তাঁর ছোটগল্পে উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আইপিএল, পর্নো সিডি, ইন্টারনেটসহ নানা বিষয়। বিষয়গুলো আকর্ষণ করবে যে কোনো পাঠককে। আবারও বলছি, অনেকদিন ধরে যারা পড়াশোনার বাইরে, তারা বইটিকে বেছে নিতে পারেন, পাঠাভ্যাস নতুন করে আয়ত্ত করার জন্য। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কানাডায় নির্বাচন: মার্ক কার্নির লিবারেল সদর দপ্তরে উৎসব শুরু
কানাডায় ভোট গ্রহণ শেষে চলছে গণনা। ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল আসতে আরও খানিকটা সময় লাগবে। তবে এরই মধ্যে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির দল লিবারেল পার্টির সদর দপ্তরে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। কারণ, দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিবিসি বলেছে, এবার লিবারেল সরকার হতে চলেছে।
কানাডার ৩৪৩ আসনের হাউস অব কমন্সে লিবারেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, নাকি তাদের সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে মার্ক কার্নিই যে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লিবারেল ১৫৬টি আসনে এগিয়ে আগে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করতে চাই ১৭২টি আসন। খুব একটা পিছিয়ে নেই প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টি। দলটি ১৪৭ আসনে এগিয়ে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমাদের নির্বাচন থেকে দূরে থাকুন। কানাডা সব সময় গর্বিত, সার্বভৌম ও স্বাধীন দেশ থাকবে এবং আমরা কখনো ৫১তম অঙ্গরাজ্য হব না।—পিয়েরে পলিয়েভর, বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতাপুরোপুরি বদলে যাওয়া এক নির্বাচনী পরিবেশে গতকাল সোমবার ভোট দিয়েছেন কানাডার জনগণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার ইচ্ছা দেশটিতে নির্বাচনের আগে প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল।
ট্রাম্পের এ ধরনের হুমকি কানাডায় দেশপ্রেমের জোয়ার সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে লিবারেল পার্টির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মার্ক কার্নির প্রতি জনসমর্থন বেড়ে যায়।
লিবারেল ১৫৬টি আসনে এগিয়ে আগে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করতে চাই ১৭২টি আসন। খুব একটা পিছিয়ে নেই প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টি। দলটি ১৪৭ আসনে এগিয়ে।অথচ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক কথাবার্তা শুরু হওয়ার আগে জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বী পিয়েরে পলিয়েভরের কনজারভেটিভ পার্টি থেকে সামান্য পিছিয়ে ছিল কার্নির লিবারেল দল। ট্রাম্প কানাডাকে নিয়ে আক্রমণাত্মক কথা বলা শুরু করলে কানাডীয়দের মধ্যে দেশপ্রেমের জোয়ার ওঠে এবং জরিপের পূর্বাভাসে হঠাৎ বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ভোটের দিন সকালেও ট্রাম্প কানাডাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। ট্রাম্প লিখেছেন, কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম কাঙ্ক্ষিত অঙ্গরাজ্য হয়, তবে শূন্য শুল্কের সম্মুখীন হবে।
লিবারেল পার্টির সদর দপ্তরে সমর্থকদের উল্লাস