বাগে আসছে না চালের বাজার, চড়া মুরগিও
Published: 24th, January 2025 GMT
কয়েক মাস ধরেই চালের বাজার চড়া। শুল্ক কমানো, আমদানিসহ কয়েকটি উদ্যোগ নিলেও বাগে আসছে না চালের দাম। আমদানির খবরে মাঝে দু-এক টাকা কমলেও ফের দাম বাড়ছে। এক মাসের ব্যবধানে মানভেদে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ১০ টাকা। তবে বাজারভেদে দামের ক্ষেত্রে কিছুটা তারতম্য দেখা গেছে। এ ছাড়া এখনও চড়া দর রয়েছে মুরগির বাজারে। সবজির বাজারে রয়েছে স্বস্তি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যায় ফসল ফলনে যে ক্ষতি হয়েছে, তার কিছুটা প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে চাল আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশ থেকে আমদানি বাড়লে দাম কমে আসবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কলমিলতা, সেগুনবাগিচা ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
নতুন করে সরু, মাঝারি ও মোটা– তিন ধরনের চালের দামই বেড়েছে। খুচরায় প্রতি কেজি সরু বা মিনিকেট চাল মানভেদে ৭৮ থেকে ৮২ টাকা, নাজিরশাইল মানভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাস খানেক আগে মিনিকেট ৬৮ থেকে ৮০ এবং নাজিরশাইলের কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ছিল।
মাঝারি বা ব্রি-২৮ ও পাইজাম জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়। মোটা বা গুটি স্বর্ণা জাতের চালের কেজি কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। এক মাস আগে মাঝারি চালের কেজি ৫৮ থেকে ৬৪ এবং মোটা চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
তিনটি বাজারে চালের দর যাচাই করে দেখা গেছে, কলমিলতা ও সেগুনবাগিচার তুলনায় কারওয়ান বাজারে দু-এক টাকা কমে কেনা যাচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের মুক্তা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জালাল আহমেদ সমকালকে বলেন, দুই মাস ধরে দফায় দফায় চালের দাম বেড়েছে। নতুন করে চিকন ও মাঝারি মানের চাল কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভারতসহ অন্য দেশ থেকে চাল আমদানি বাড়লে দাম কমতে পারে।
কলমিলতা বাজারের শহিদুল হক বলেন, দাম দুই মাস ধরেই বেশি। এখন আড়তদাররা বলছেন, নতুন করে চাল নিতে হলে দাম আরও বেশি দিতে হবে।
মুরগির বাজার চড়া, স্থির ডিম
চালের মতো দেড় মাসের বেশি সময় ধরে মুরগির বাজার বাড়তি। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। আর সোনালি জাতের মুরগির কেজি কিনতে হলে কেজিপ্রতি খরচ পড়বে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা। ডিমের বাজার স্থির রয়েছে। ফার্মের প্রতি ডজন ডিম কেনা যাবে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।
সবজিতে স্তস্তি
প্রতি কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০, শিম ৩০ থেকে ৫০, কাঁচা পেঁপে ২৫ থেকে ৩০, শসা ২৫ থেকে ৩০, উচ্ছে ও করলা ৫০ থেকে ৬০, মুলা ১৫ থেকে ২০, বরবটি ৫০ থেকে ৬০, গাজর ৪০ থেকে ৪৫ এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। প্রতি পিস ফুল ও বাঁধাকপি মানভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং লাউয়ের পিস কেনা যাবে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। আরও দাম কমেছে আলুর। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কাঁচামরিচের দর বেড়েছে। গত সপ্তাহে কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পেঁয়াজ কিছুটা বেড়ে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
এ ছাড়া প্রতি কেজি আমদানি করা মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ ও দেশি চিকন মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫, মুগডাল ১৬৫ থেকে ১৭০ ও ছোলার কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাছের বাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ রদর ৩০ থ ক আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।