হিমেল বাতাস আর কুয়াশার মধ্যেও পেটের তাগিদে গতকাল বৃহস্পতিবার কাজে যেতে চেয়েছিলেন রংপুর নগরীর চব্বিশ হাজারি এলাকার দিনমজুর ঈমান আলী (৬০)। তবে কনকনে শীতে তিনি বাড়ি ছাড়তে পারেননি। ঈমান আলী বলেন, ‘দাঁতের ওপর দাঁত থুইয়া এই ঠান্ডাত দিন কাটাওছি বাহে। তিন দিন ধরি কামোত (কাজে) যাবার পাই না। খ্যায়া-না খ্যায়া কোনো মতন বাঁচি আছি।’ ছেঁড়া লুঙ্গি গায়ে জড়িয়ে বাড়ির বাইরে খড়কুটোয় জ্বালানো আগুনের তাপে হিম শরীরে উষ্ণতা ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি।
মাঘের শীত জেঁকে বসায় রংপুরের ঈমান আলীর মতো খেটেখাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছেন। রাতে শীতের সঙ্গে কুয়াশা আর বেলা বাড়লে ঝলমলে সূর্যের আলো। সন্ধ্যায় হিমেল হালকা বাতাস। এভাবেই চলছিল পুরো পৌষ মাস। কিন্তু গত কয়েক দিন জেঁকে বসেছে শীত। হঠাৎ চলে আসা ঠান্ডার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। গতকাল রাজধানীসহ সারাদেশেই শীতের তীব্রতা বাড়ে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে কাঁপন ধরিয়েছে। সকাল ১০টার পর রাজধানীতে কুয়াশা কেটে সূর্যের আলো দেখা যায়। তবে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সূর্য দেখা যায়নি। গতকাল রাজধানীতে তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল। দেশের গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও কমে যায়। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, আজ শুক্রবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে কুয়াশা থাকতে পারে। পরদিন শনিবার থেকে তাপমাত্রা আরও কমে শীত বাড়তে পারে। দু-একটি স্থানে বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। ২৮ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা আবার বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, জানুয়ারির পর থেকেই আস্তে আস্তে শীত বিদায় নেবে।
গতকাল ঘন কুয়াশার কারণে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আটটি ফ্লাইট নির্দিষ্ট সময়ে ওঠানামা করতে পারেনি। ফ্লাইট বিলম্বিত হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে বসে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ ও আশপাশের জেলা-উপজেলায়ও শীত জেঁকে বসেছে। সূর্য মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়ে রাখায় কুয়াশায় ঢাকা ছিল উত্তরের এই জনপদ। সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরে কুয়াশা। এ ছাড়া উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল বাতাস বইতে থাকায় শীত বেড়েছে কয়েক গুণ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
আত্তীকরণ বিধিমালা সংশোধনসহ ছয় দাবি শিক্ষকদের
সরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের বৈষম্যের শিকার বলে দাবি করেছেন। একই সঙ্গে বিদ্যালয়গুলোতে বেতন সুরক্ষা ও গ্রেডেশন ব্যবস্থা না থাকায় এবং বদলির সুযোগ সীমিত থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সরকারিকৃত মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক পরিষদ' আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা ‘আত্তীকরণ বিধিমালা ২০২৪'-এর কিছু অসঙ্গতি সংশোধন ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।
আরো পড়ুন:
এক অধ্যাপকের কাছেই ‘অসহায়’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অভিযোগে শিক্ষকসহ ৩৯ জনকে শোকজ
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ছিদ্দিক আহমেদ বলেন, “২০২৪ সালে প্রণীত আত্তীকরণ বিধিমালা শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে করা হলেও এতে বৈষম্য রয়ে গেছে। বিশেষ করে একই স্মারক ও তারিখে বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং অ্যাডহক নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে বেতন নির্ধারণে বৈষম্য লক্ষ করা যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত ৩৬৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়েছে, যাদের অধিকাংশই অ্যাডহক নিয়োগপ্রাপ্ত। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৪২টি বিদ্যালয় বেতন সুরক্ষা সুবিধা পেয়েছে এবং আরো ৫টি স্কুল ও কলেজকে এই সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হলেও বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও এর বাইরে রয়েছে। এতে শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।”
তিনি আরো বলেন, “সরকারি কিংবা বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালু থাকলেও জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ‘আত্তীকরণ বিধিমালা ২০২৪' এর ১৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী বদলির অধিকার বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে সহকারী শিক্ষক (টেকনিক্যাল) পদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় ভবিষ্যতে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে বাধা তৈরি হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শিক্ষকদের ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো
১. আত্তীকরণ বিধিমালা ২০২৪-এর ১০ নম্বর ধারা সংশোধন করে পে-প্রোটেকশন নিশ্চিত করা।
২. কার্যকর চাকরিকালের ভিত্তিতে বেতন-ভাতা নির্ধারণ ও পদোন্নতি দেওয়া।
৩. বৈষম্যমূলক ১৩ নম্বর ধারা বাতিল করে বদলির সুযোগ সৃষ্টি করা।
৪. কার্যকর চাকরিকালের ভিত্তিতে আত্তীকৃত শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা।
৫. সহকারী শিক্ষক (টেকনিক্যাল) পদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জনবল কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করা ও ব্লক পোস্ট ব্যবস্থা বাতিল করা।
৬. বৈষম্য সৃষ্টিকারী ৫ (৩) নম্বর ধারা বাতিল করা।
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ