প্রধান উপদেষ্টার কাছে বাজেটের খসড়া উপস্থাপন বুধবার
Published: 4th, February 2025 GMT
আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটের খসড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আগামী বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে খসড়া উপস্থাপনকালে অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। প্রধান উপদেষ্টা সামনে আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি সম্ভাব্য সার সংক্ষেপ উপস্থাপন করবেন অর্থ সচিব। এ সময় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সম্পদ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় আগামী অর্থবছরে জন্য ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেটের খসড়া তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার ধরা হয় ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বাজেট আকার আরো খানিকটা কমানোর জন্য। এ জন্য এডিপি আকারও কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরই আলোকে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বাজেটের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে বাজেটের আকার ৮ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হবে। এ জন্য এডিপি আকারও কমানোর প্রয়োজন পড়বে। এর ফলে এডিপির আকার ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হতে পারে।
তিনি বলেন, “এবারকার উন্নয়ন বাজেট অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন বেশি করা হবে। এক্ষেত্রে রেশিও (অনুপাত) হবে ৬৩: ৩৭। অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন হবে ৬৩ শতাংশ এবং বিদেশি অর্থায়ন ধরা হবে ৩৭ শতাংশ। অন্যান্যবার দেশীয় অর্থায়নের হার হয় ৬০ শতাংশ এবং বিদেশি অর্থায়ন ধরা হয় ৪০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে বাজেটে দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এবারই প্রথম করজাল সম্প্রসারণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভব্য আয়কর দাতাদের চিহ্নিত করা হবে। বাজেটে আয়কর খাত থেকে বেশি রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করা হবে।
সূত্র জানায়, আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে জন্য এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার চিন্তা ছিল পাঁচ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন তা কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হবে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজস্ব আদায়ের এই টার্গেট কোনোভাবেই পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ আগামী অর্থবছরের শেষ ভাগে একটি সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই পরিস্থিতি বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়। আর আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের বাড়ানোর জন্য যে ব্যাপক করজাল সম্প্রসারণ করা দরকার বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষে তাও করা সম্ভব হবে না। এসব কারণে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে টার্গেট পাঁচ লাখ কোটি টাকার নীচে রাখাই সমীচীন হবে।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা এর মধ্যে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্য ধরা রয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য আদায় লক্ষ্যমাত্র রয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বছরের মাঝ পথে এসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে কমানো হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৪ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ কম। পাশাপাশি গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ের চেয়েও প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কম। ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৫৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা।
এদিকে, আগামী অর্থবছরে জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি(এডিপি) আকার নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরে যা রয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তী সংশোধন করে তা কমিয়ে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি পাওয়া গেলেই খসড়া অনুযায়ী বাজেট প্রণয়নের চূড়ান্ত কাজ শুরু করা হবে। আর খসড়া বিষয়ে তার কোনো নির্দেশনা থাকলে সেভাবেই চূড়ান্ত করা হবে।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমতি ছাড়াই গাসিক কর্মকর্তা কিবরিয়ার বিদেশ যাত্রা
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘন, তথ্য গোপন, অনুমতি ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ ও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর গত ১৫ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিক শাহেদ আলম নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গোলাম কিবরিয়া সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তথ্য গোপন করে বেসরকারি পাসপোর্ট (নং A০১২৬৬৬১২) সংগ্রহ করেছেন, যা সরকারি চাকরি বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি একাধিকবার কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
অভিযোগকারী দাবি করেন, তিনি ২০২৪ ও ২০২৫ সালের বিভিন্ন সময়ে কানাডা সফর করেছেন, যার কোনো অনুমোদন তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেননি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ ২০২৫ সালের ১৯ জুন কানাডা সফরের সময় তিনি প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, গোলাম কিবরিয়া নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে কানাডায় সেকেন্ড হোম এবং ব্যবসায়িক বিনিয়োগ করেছেন। তার নামে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা পাচারের দুর্নীতির মামলাও চলমান রয়েছে। এমন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি এখনো পদে বহাল থেকে প্রভাব খাটাচ্ছেন এবং যেকোনো সময় বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অভিযোগকারী বলেন, “তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নিয়মিত বিদেশে যাচ্ছেন, যা সরকারি চাকরি বিধিমালার সরাসরি লঙ্ঘন এবং গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
সূত্র জানায়, গোলাম কিবরিয়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা। তার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। তিনি দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে কানাডায় স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন। গাজীপুরবাসীর স্বার্থে এমন বেপরোয়া ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মুহাম্মদ সোহেল হাসান বলেন, “লিখিত অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করা হয়েছে। প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন। তথ্য গোপন করে বিদেশ যাত্রা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, প্রমাণ মিললে বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হবে।”
এ বিষয়ে জানতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে শোকজ করা হয়েছিল এবং তিনি জবাবও দিয়েছেন। শোকজের প্রতিবেদনটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।”
এ বিষয়ে গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/রেজাউল/এস