মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা তাঁদের প্রথম বৈঠকে উষ্ণ সুরে কথা বলেছেন। গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এ দুই নেতা বৈঠক করেন। ট্রাম্প যেসব দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন বৈঠকের পর তা এড়াতে সক্ষম হয়েছে জাপান।

হোয়াইট হাউসে বৈঠকে পরস্পরের প্রশংসা করার পাশাপাশি দুই নেতা চীনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারমাণবিক অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়া নিয়ে উদ্বেগের কারণে উভয় দেশই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জাপানের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্যঘাটতি শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য ইশিবাকে চাপ দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, বাণিজ্যঘাটতি পূরণ না হলে টোকিওকেও অন্যদের মতো শুল্ক আরোপের মুখে পড়তে হবে। জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মতো ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চাপে রয়েছেন ইশিবা।

বৈঠকের পর দুই নেতা জোর দিয়ে বলেছেন, তাঁরা উভয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী।

উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় কোনো বিদেশি নেতা হিসেবে সফর করছেন ইশিবা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সপ্তাহে ট্রাম্পের প্রথম অতিথি ছিলেন।

ইশিবা তাঁর এক দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন যান। গত শুক্রবার দুপুরে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন।

পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইশিবা বলেন, ‘টেলিভিশনে ট্রাম্পকে দেখে অত্যন্ত ভীতিকর ও কঠিন ব্যক্তিদের মানুষ মনে হয়েছিল। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর দেখেছি, তিনি খুবই আন্তরিক ও শক্তিশালী একজন ব্যক্তি।’

ট্রাম্পের পক্ষ থেকেও ইশিবার প্রশংসা করা হয়। তাঁকে সুদর্শন বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্র যদি জাপানের ওপর শুল্ক আরোপ করে তবে এর পাল্টা ব্যবস্থা ইশিবা নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাত্ত্বিক প্রশ্নের’ উত্তর দেন না তিনি। ট্রাম্প এ কথায় হেসে বলেন, খুব ভালো উত্তর।

ট্রাম্প এ সময় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত কারখানা ইউএস স্টিলে বিনিয়োগ করবে জাপানের নিপ্পন স্টিল। তবে প্রতিষ্ঠানটি অধিগ্রহণ করবে না। ট্রাম্প বলেন, তাঁরা ক্রেতার পরিবর্তে বিনিয়োগকারী খুঁজছেন। এর আগে বাইডেন প্রশাসন এ চুক্তিতে বাধা দিয়েছিল।

দুই নেতা নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই দেশের কয়েক দশক ধরে চলা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার প্রতিশ্রুতির কথা বলেন।

ট্রাম্প বলেছেন, তাঁরা চীনা অর্থনৈতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সম্মত হয়েছেন। এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে উসকানিমূলক কার্যকলাপের জন্য বেইজিংয়ের নিন্দা করেছেন।

উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণেরও আহ্বান জানিয়েছে তাঁরা। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান। ইশিবা বলেন, তাঁর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী এবং সেখানে তাঁদের ব্যয় বাড়াবে। জাপানের পক্ষ থেকে এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার বিষয়টিও রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর র প বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

রুয়া নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। এর আগে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রুয়া অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মে পুনর্মিলনী এবং ১০ মে রুয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থীরা। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই পক্ষের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি চলতে থাকে।

এদিকে গতকাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রুয়া নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসভবনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ জারি করেন রুয়ার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সিলেকশন না ইলেকশন, ইলেকশন ইলেকশন’, ‘প্রশাসন জবাব দে, রুয়া কি তোর বাপের রে’, ‘রুয়া নিয়ে টালবাহানা, চলবে চলবে না’, ‘অ্যাডহক না নির্বাচন, নির্বাচন নির্বাচন’, ‘সিন্ডিকেট না রুয়া, রুয়া রুয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

এ সময় ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা-কর্মীদেরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। পরে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। বিকেল ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মে রুয়া নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। যারা রুয়া নির্বাচন দিতে পারে না, তারা রাকসু নির্বাচন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? ১০ মের নির্বাচন সেই একই তারিখে হতে হবে। এই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ