ফিলিস্তিনের গাজার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত পরিকল্পনার প্রশংসা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, এই পরিকল্পনা ‘বাস্তবায়ন করতে’ চায় ইসরায়েল।

গতকাল শনিবার রাতে টেলিভিশন চ্যানেল ফক্স নিউজে সম্প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন নেতানিয়াহু। সাক্ষাৎকারে তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনার পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।

সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি মনে করি, বিগত বছরগুলোর মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবটি হচ্ছে একেবারে নতুন ধরনের চিন্তাভাবনা। আর এ প্রস্তাবটির মধ্যে গাজায় সবকিছু পরিবর্তন করে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ নেতানিয়াহুর মতে, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ভবিষ্যতের দিকে সঠিকভাবে অগ্রসর হওয়ার উপায় তুলে ধরেছে।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘ট্রাম্প যা কিছু বলছেন তা হলো, “আমি দ্বার খুলে দিতে চাই এবং এ জায়গাটি (গাজা) কাঠামোগতভাবে পুনর্গঠনের সময় তাঁদের (ফিলিস্তিনি) সাময়িক সময়ের জন্য অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিতে চাই।”’ তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প কখনোই বলেননি এ কাজটি মার্কিন সেনারা করবেন। অনুমান করুন তো কারা করবে? আমরা কাজটি করব।’

আরও পড়ুনগাজায় ‘জাতিগত নির্মূল’ চালানোর ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন কি সম্ভব৯ ঘণ্টা আগে

১৯৬৭ সালের যুদ্ধে গাজা উপত্যকা দখল করে নেয় ইসরায়েল। ২০০৫ সাল পর্যন্ত সেখানে দেশটির সামরিক উপস্থিতি ছিল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর সেদিনই গাজায় নির্বিচার হামলা চালায় ইসরায়েল। উপত্যকাটি পুরোপুরি অবরোধ করে দেশটির সামরিক বাহিনী। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে।

বিগত বছরগুলোতে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। তবে এবারের সংঘাতে যে পরিমাণ রক্তপাত ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা নজিরবিহীন। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। আর তখন থেকে চালানো ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি।

আরও পড়ুনট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা সফল হবে না, তবে এর প্রভাব থাকবে০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার যেকোনো প্রচেষ্টা তাঁদের ১৯৪৮ সালের দুর্বিষহ স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেবে। তখন ইসরায়েল সৃষ্টির সময় বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আরব বিশ্বে ওই ঘটনা ‘নাকাবা’ নামে পরিচিত। সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, এবার ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর ‘সন্ত্রাসবাদে জড়িত না থাকার প্রতিশ্রুতি’ দিলেই কেবল তাঁদের ফিরতে দেওয়া হবে।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘সবাই গাজাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগার হিসেবে আখ্যা দেন। সেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিন, তাঁদের চলে যাওয়ার সুযোগ দিন। জোর করে কাউকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না, জাতিগত নিধন হবে না। এই সব দেশ এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা যাকে সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগার বলেন, সেখান থেকে মানুষকে সরিয়ে নিন। আপনারা কেন তাঁদের কারাগারে রাখতে চান?’

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের যেভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছেন ট্রাম্প২০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তবতায় এর পরিমাণ ২ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ন্যূনতম জিডিপির ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জনবান্ধব বাজেট ভাবনা’ শীর্ষক আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে শিক্ষা বিষয়ক বাজেটের আলোচনায় শিক্ষাবিদরা এসব কথা বলেন। সামাজিক সংগঠন নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ (নাবিক) এর আয়োজন করেন।

অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলে মাহাথির মোহাম্মদ ১০ বছরে মালয়েশিয়ার চেহারাই বদলে দিয়েছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়াও আমাদের দেশ থেকে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু শিক্ষা উন্নতি করে দেশটি এখন বিশ্বের উন্নত দেশের তালিকায় ওঠে এসেছে। 

এশিয়ার কয়েকটি দেশের শিক্ষায় জিডিপির বরাদ্দের তালিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমে এসেছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষায় বরাদ্দ তলানির দিকে। বিগত বছরগুলোতে যেই পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, সেই টাকা শিক্ষায় বিনিয়োগ করা হলে দেশের চেহারা বদলে যেতো। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন ভাতা আকর্ষণীয়। শিক্ষায় উন্নতি করতে হলে মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে হবে। নইলে মেধা পাচার হয়ে যাবে। শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বাজেট দিতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষাকে বিস্তার করতে হবে। এছাড়া দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিএনসিসিকে আরও কার্যকর করতে হবে।

অধ্যাপক মনিনুর রশিদ বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ থাকলে পরিবর্তন আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা করতে চান। কিন্তু সে অনুযায়ী বাজেট কম। শিক্ষায় বাজেটে ঘাটতি রয়েছে। অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় এদেশের শিক্ষার বরাদ্দ খুবই কম। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মাত্র ৩৬ হাজার টাকা বেতন পান। এই টাকায় তারা কীভাবে চলবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হলে মানবেতর জীবনযাপন করেন। এই যদি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা, তাহলে অন্যান্য জায়গার কেমন সেটা বোঝাই যায়। অন্যদিকে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকদের বেতনই শুরু হয় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। অধ্যাপকরা ৮ লাখ টাকাও বেতন পান। যার ফলে ব্র্যাক, নর্থ সাউথের মতো বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই শিক্ষায় সঠিক বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ সময় তিনি শিক্ষা কমিশন করার দাবি জানান।

সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, আমরা মনে শিক্ষার কাজ হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সুনাগরিক তৈরি করা। তারা রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কী করতে হবে- তা নিয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনাই নেই। 

ধারণাপত্র সাব্বির হোসেন বলেন, বিগত বছরগুলোতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড থেকে কম ছিল। এশিয়ার কয়েকটি দেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের সঙ্গে বাংলাদেশের বরাদ্দের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ করা উচিত। এছাড়া শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষক উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। 

আব্দুল্লাহ যোবায়ের বলেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে বেতন পান, অন্যান্য সরকারি চাকুরীজীবীও একই বেতন পান। কিন্তু শিক্ষকরা সরকারি চাকুরিজীবীদের মতো সুযোগ সুবিধা পান না। শিক্ষার মানোন্নয়নে যেসব সুযোগ সুবিধা দরকার তা শিক্ষকরা পান না। তারা গবেষণায় বরাদ্দ পান না। অন্যদিকে, শিক্ষকদের সম্মান দিন দিন কমছে। বিভিন্ন সময় শিক্ষকরা অপমান হেনস্তার শিকার হন। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যেও মানসম্মত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে।

মাহফুজুর রহমান মানিক বলেন, গত অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিলো জিডিপির ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। টাকার অংকে ছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা বাড়িয়ে দেখানো হতো শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে। অন্যদিকে শিক্ষায় ন্যূনতম বাজেটটাও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় না। শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হলে সেটা পরিকল্পনা করে বাড়াতে হবে। যাতে বরাদ্দকৃত বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। সরকারের উচিত এই বাজেটটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক শিক্ষা বাজেট করা। তাহলে পরবর্তী সরকারগুলোর কাছে এটা উদাহরণ হতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে কামরুল আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা বিবেচনায় যেমন দরকার, তেমন বরাদ্দ দেওয়া দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে। আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত জায়গায় শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি। অথচ এদেশে প্রতি বছর প্রতিযোগিতা করে বরাদ্দ কমছে। এছাড়া শিক্ষা খাতে লুটপাট ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। যেসব জায়গায় বরাদ্দ করা করা হয়, তা খরচের জায়গায়ও স্বচ্ছ হতে হবে। 

তিনি বলেন, আমাদের অর্থ কম থাকলে কম বরাদ্দ হবে। সমস্যা নেই। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। যেখানে যতটা বরাদ্দ প্রয়োজন, সেখানে ততটা বরাদ্দ দিতে হবে। এ সময় তিনি মানবিক গুণাবলির উন্নয়নের ওপর জোর দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, গ্লোবাল নলেজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ওমর ফারুক, শিক্ষক ও গবেষক আব্দুল্লাহ যোবায়ের, দৈনিক সমকালের জেষ্ঠ্য সহসম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক প্রমুখ। 'বাজেটে শিক্ষা খাত: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রত্যাশা' শীর্ষক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. সাব্বির হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন