আইএমএফের চতুর্থ কিস্তির জন্য সরকার মরিয়া নয়
Published: 9th, February 2025 GMT
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকার আইএমএফ ঋণের চতুর্থ কিস্তির জন্য মরিয়া নয়। শুধু আইএমএফের চতুর্থ কিস্তিই নয়, যে কোনো ঋণের বিষয়েই একই কথা। আইএমএফের সঙ্গে মার্চের আগে সরকারের আলাপ হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি পিছিয়ে যাচ্ছে কিনা– গতকাল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি ওই উত্তর দেন। এর আগে তিনি বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আগামী মার্চে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হবে। চতুর্থ কিস্তি ছাড় জুন পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে এবং তা ঠিক কিনা– এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত আইএমএফের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে বর্তমানে দেশের চলতি হিসাব এবং আর্থিক হিসাবের ভারসাম্য পরিস্থিতি ভালো।
জানা গেছে, মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে না দেওয়া এবং কর-রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় বাংলাদেশের চলমান ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের জন্য পর্ষদের বৈঠক গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে আরও এক মাস পিছিয়েছে আইএমএফ। বৈঠক আরও পিছিয়ে জুনে নিয়ে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক
বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোসহ অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ে বিভাগ আলাদা করার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা তাদের জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে। তারা এর বাস্তবায়ন করতে চান।
বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ দেওয়া হয়েছে কি–এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে অগ্রগতি আশা করছে। তবে তারা এও জানেন, সরকারের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মার্টিন রাইজার আরও বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। তিনি বলেন, তারা এটি বোঝেন, নতুন করে করারোপ এবং কর ছাড়ের বিষয়টিতে আইনি অনুমোদনের দরকার হয়।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে গত ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। অবশ্য নানা সমালোচনার পর প্রায় ১০টি পণ্য বাড়তি শুল্ক-কর কমানো হয়। এখনও বিভিন্ন সংগঠন থেকে সরকারের এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড.
বিএসআরএফের সঙ্গে বৈঠক
এদিকে গতকাল বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টর্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ভ্যাট বাড়ানো নিয়ে কথা কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ভ্যাটের ব্যাপারে চাপ আছে। ভ্যাট কমাতে বলা হয়। সব ভ্যাট যদি কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সরকারের আয় আসবে কোথা থেকে। আবার বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ বলছে– কোনোক্রমেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ কমানো যাবে না।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ আনতে কিছু শর্ত মানতে হবে। বাংলাদেশ শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়নি। ঋণদাতারা ভ্যাট বাড়াতে বলে। আবার ভ্যাট বাড়িয়ে নানা রকম বিপত্তি হয়। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সব সময় জনপ্রিয় দাবির ভিত্তিতে করা যায় না।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭৪১ কোটি ডলার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ২০৪ কোটি ডলার। আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে রিজার্ভ এখন যে রিজার্ভ আছে, এর সমান ছিল।
২০২৪ সালের ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সপ্তাহে মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ফলে মোট রিজার্ভ ও নিট রিজার্ভ—উভয়ই বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, এর আগে ১৪ এপ্রিল রিজার্ভ বেড়ে হয় ২৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৩৯ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয় ২১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১১১ কোটি ডলার।
প্রবাসীদের পাঠানো আয় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়ছে। গত মার্চ মাসে ৩২৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে; এক মাসের হিসাবে যেকোনো সময়ের চেয়ে এটি বেশি। আর চলতি মাসের ২৬ দিনে এসেছে ২২৭ কোটি ডলার। ফলে ব্যাংকগুলো উদ্বৃত্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনলে আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান এলেই রিজার্ভ বাড়ে। এতে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ওপর চাপ কমেছে। ডলারের দাম না বেড়ে ১২২ টাকায় অনেক দিন ধরে স্থির আছে। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে। ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ডলার নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। ৮৫ টাকার ডলার বেড়ে ১২৮ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সরকার পরিবর্তনের পর নানা উদ্যোগের কারণে প্রবাসী আয় বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ছে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। ২০২২ সালের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে গেছে অনেক ব্যাংক।