পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠ সাবেক কাউন্সিলর একই দিনে পাঁচ মামলায় জামিন পেয়েছেন—বলছে বিএনপি
Published: 10th, February 2025 GMT
সিলেটে কয়েক দিন আগে পতিত স্বৈরাচার সরকারের ঘনিষ্ঠ সাবেক এক কাউন্সিলর একটি আদালতে একই দিনে পাঁচ মামলায় জামিন পেয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিজমের দোসররা যেভাবে একের পর এক জামিন পাচ্ছেন, তা সত্যিই দুঃখজনক। এতে গণহত্যাকারী এবং তাদের দোসরদের যথাযথ বিচার হবে কি না, এ নিয়ে মানুষের মনে সংশয় তৈরি হয়েছে।
আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে নগরের কুমারপাড়া এলাকার একটি রেস্তোরাঁ মিলনায়তনে জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা এমন অভিযোগ করেন। এ সময় বিএনপি নেতারা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো সম্প্রতি সিলেটেও কিছু স্থানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বিএনপি কিংবা সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মীর সম্পৃক্ততা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ৩০ জানুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে পাঁচটি মামলায় সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ ও তাঁর ভাই কামরান আহমদ জামিন পান। এ খবর জানাজানি হলে আদালত প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক সংক্ষুব্ধ জনতা জড়ো হন। বিক্ষুব্ধরা পাঁচটি মামলায় জামিনের প্রতিবাদ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় আইনজীবী সহকারী সমিতির নির্বাচন পরিদর্শনে থাকা মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী সংক্ষুব্ধ জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
রেজাউল হাসান ও এমরান আহমদ সেদিন আদালতে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন বলে লিখিত বক্তব্যে বিএনপি নেতারা দাবি করেন। তাঁরা আরও জানান, বিএনপির এই দুই নেতা যদি সেদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতেন, তাহলে আদালত প্রাঙ্গণে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারত। সেটা হলে সিলেটের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হতো। অথচ পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমালোচনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি নাজমুল ইসলাম, আশরাফ আলী ও রহিম মল্লিক, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমদ পাটোয়ারী, সিদ্দিকুর রহমান, আনোয়ার হোসেন ও মামুনুর রশীদ, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহিদ ও নাদির খান, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব ও রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক সাঈদ আহমদ, মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক তারেক আহমদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ায় সিলেট বিএনপির ১০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। লিখিত বক্তব্যে বিএনপি জানায়, যদি দলের কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মীর দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়, তাঁর বিরুদ্ধে দল তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নগরে অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিয়েছিলেন। সেসব অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। দোষীরাও গ্রেপ্তার হয়নি। এসব অবৈধ অস্ত্র এখন চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ডেভিল হান্টের মাধ্যমে এসব অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সেই খসড়ায় বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারও কোনো মতামত আছে কি না, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা কাল জমা দেব।’
খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি একমত বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে।’
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।’
সংস্কার কমিশনের ৭০০–এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’