ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে হামাস। এর জেরে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জিম্মি মুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এ ঘোষণার পর হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের পাল্টা অভিযোগ এনেছে ইসরায়েল। গাজায় যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে দেশটি। এতে ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েলের কারণে যুদ্ধবিরতির পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফিরতে দেরি হয়েছে। তাঁদেরকে গুলির লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে দেয়নি ইসরায়েল। তাই পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত জিম্মি মুক্তি স্থগিত থাকবে।

হামাসের এই বিবৃতির পর পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। তিনি বলেন, ‘হামাস জিম্মি মুক্তি বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছে, তা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির পুরোপুরি লঙ্ঘন। আমি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে গাজায় সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি।’ আর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, হামাসের ঘোষণার বিষয়ে জিম্মি ব্যক্তিদের পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার গাজা কিনে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। সংগঠনটির নেতারা বলেন, ট্রাম্প এ ধরনের উদ্যোগ নিলে আবারও বিপর্যয় নেমে আসবে। গাজা কারও সম্পত্তি নয় যে, এটা কেনাবেচা যাবে।

ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, তিনি গাজা ‘কিনে নিতে ও এর মালিকানা পাওয়ার অঙ্গীকার’ করেছেন। এ বক্তব্যের পর হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য ইজ্জাত আল-রিশেক বিবৃতিতে জানান, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অবাস্তব। আবাসন ব্যবসায়ীর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।

১৫ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপে ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এরই মধ্যে হামাসের কাছে বন্দী থাকা ১৬ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মুক্তি পাচ্ছেন ইসরায়েলে বন্দী কয়েক শ ফিলিস্তিনিও। এ ধারাবাহিকতায় আগামী শনিবার আরও তিনজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল হামাসের।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী চুক্তির প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই বন্দি বিনিময় হবে। একইসঙ্গে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘরে ফেরার অনুমতি পাবে। পাশাপাশি ত্রাণবাহী লরিগুলোকে প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।

দ্বিতীয় ধাপে হামাসের হাতে থাকা বাকী জিম্মিরা মুক্তি পাবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হবে। এর মাধ্যমে ‘টেকসই শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে’।

তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে গাজা পুনর্গঠন হবে- যা শেষ করতে কয়েক বছর পর্যন্ত লাগতে পারে। একই সাথে মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেয়া হবে।

পশ্চিম তীরের বিখ্যাত পাঠাগারে অভিযান
সিএনএন জানায়, অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে পাঠাগারে অভিযান চালিয়ে বই জব্দ ও মালিক ইয়াদ মুনাসহ দু’জনকে আটক করেছে ইসরায়েলের পুলিশ। ছবিতে দেখা যায়, বই, নোটবুক ও লেখার উপকরণ মাটিতে ছড়িয়ে রয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে শেয়ার সূচকে পতনের আভাস, বেড়েছে তেলের দাম

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবাইকে ‘তেহরান থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার’ আহ্বান জানানোর পর বিশ্ববাজারে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে চলমান যুদ্ধের পঞ্চম দিনে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি। বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কায় তেলের দাম বেড়েছে, শেয়ারবাজারেও পতনের আভাস মিলেছে।

মঙ্গলবার এশিয়া ও ইউরোপের বাজার খোলার আগেই ট্রাম্প হঠাৎ কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সিচুয়েশন রুম (আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাসংক্রান্ত আলোচনার কক্ষ) প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি। মার্কিন প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করেছে।

এর আগে সবাইকে এখনই তেহরান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার আহ্বান জানান ট্রাম্প। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ইরানের উচিত ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে নেওয়া। ট্রাম্পের এ বক্তব্য ও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ফিউচার্স শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ কমেছে। ইউরোপিয়ান ফিউচার্স কমেছে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ আজ মঙ্গলবার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার সূচকের পতন ঘটতে পারে।

সেই সঙ্গে অপরিশোধিত তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে ২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। পরে অবশ্য দাম আবার কিছুটা কমেছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৩ দশমিক ৪৭ ডলার হয়েছে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৭২ দশমিক শূন্য ৯ ডলার হয়েছে।

বিশ্ববাজার বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, ‘অনেকে আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইরানে সামরিক অভিযান চালাতে যাচ্ছে। এতে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।’

সোমবার মার্কিন বাজার কিছুটা চাঙা ছিল। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান নাকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে জরুরি যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এতে তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা থেমে যায়। তবে সোমবার ইসরায়েল তাদের সবচেয়ে বড় হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল, ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্র ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো।

এ অনিশ্চয়তার মধ্যেই বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ ও মার্কিন সরকারি বন্ডের মতো নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। সোনার দাম শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩৯৩ ডলার হয়েছে। ১০ বছরের মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদহার কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সেই সঙ্গে ইউরো, ইয়েন ও পাউন্ডের তুলনায় ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে।

ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের বাইরেও এ সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকে নজর রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। আজকের মধ্যেই জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির ঘোষণা করতে পারে। বাজারে ধারণা, ব্যাংক অব জাপান এখনই সুদের হার না বাড়িয়ে অপরিবর্তিত রাখবে। তবে ব্যাংক অব জাপান ভবিষ্যতে বন্ড কেনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে কি না, বিনিয়োগকারীরা সেদিকে তাকিয়ে আছেন। এ ছাড়া জাপানের নিক্কেই সূচক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে, যদিও জাপানি মুদ্রা সামান্য দুর্বল হয়ে ডলারপ্রতি ১৪৪ দশমিক ৯৬ ইয়েন হয়েছে।

বাজারে গুঞ্জন আছে, বাজারে বড় অস্থিরতা তৈরি না হতে দিতে ব্যাংক অব জাপান হয়তো আগামী বছর থেকে দীর্ঘমেয়াদি বন্ড কেনা হ্রাস করবে।

এ ছাড়া আগামীকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার অপরিবর্তিত রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ভবিষ্যৎ যে দিকনির্দেশনা দেবেন, সবার নজর এখন সেদিকে। ‍বিনিয়োগকারীরা অবশ্য মনে করছেন, ফেড বছরের শেষ নাগাদ দুবার সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা আছে, এমন পূর্বাভাস নিয়ে এগোচ্ছেন।

সিকামোর আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের কাজ সবচেয়ে কঠিন। একদিকে শুল্কনীতি, অন্যদিকে বাণিজ্য চুক্তির সময়সীমা—তার ওপর আবার মধ্যপ্রাচ্যের অনিশ্চয়তা। তাঁর মত, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এর চেয়ে জটিল হতে পারে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ