অন্য আট-দশজনের মতো তারকাদের হৃদয় খুঁড়েও কেউ কেউ বেদনা জাগায়। সেই বেদনার ভাষাও সাধারণ মানুষের মতো। মাঝেমধ্যে সাধারণের ব্যক্তিজীবনের একান্ত প্রিয় গল্পগুলো ক্যামেরায় তারা জুটির মাধ্যমে তুলে ধরেন, নিজেদের মতো করেই। আমরা তা দেখি গান, নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা বিজ্ঞাপনে। এ যেন ভালোবাসার চিরন্তন জয়ধ্বনি। লিখেছেন এমদাদুল হক মিলটন
ভালোবাসা ভবিষ্যতের দৃশ্যপট আঁকতে শেখায় স্বপ্নের রং-তুলিতে। সেসব স্বপ্নের আলোকেই যুগ যুগ ধরে বিশ্বব্যাপী চলছে সংগীত, টেলিছবি, চলচ্চিত্র নির্মাণ। আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফালগুন। এ বিশেষ দিবসটি ঘিরে আয়োজনের কমতি নেই। ফেব্রুয়ারি মাস শুরুর পর থেকেই নাটকপ্রেমীরা রীতিমতো মুখিয়ে রয়েছে ছোটপর্দার বর্ণিল আয়োজন দেখার জন্য। এই উদ্দীপনার খোরাক জোগাতে নির্মাতারাও টিজার, ট্রেলার ও ফার্স্টলুকে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এসব আয়োজনে একাত্ম হয়ে যাওয়া ছাড়াও মোবাইল ফোন, চিঠি, ফুলের তোড়া কিংবা অন্য কোনো উপহার নিয়ে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে দেখা করা যেন প্রেমিক-প্রেমিকার রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখটি শুধু একটি বিশেষ দিবসের মধ্যে সীমাবন্ধ হয়ে থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসা প্রকাশের এক অনন্য উৎসব। সেই উৎসব উপলক্ষে একাধিক নাটক ও টেলিছবিতে ভালোবাসার গল্প তুলে ধরেছেন ইয়াশ রোহান-তানজিম সাইয়ারা তটিনী, খাইরুল বাশার-সামিরা খান মাহি, ফারিন খান ও পার্থ শেখ জুটি। প্রথমেই ইয়াশ রোহান-তটিনীর কাছে প্রশ্ন ছিল, তাদের কাছে ভালোবসার সংজ্ঞা কী? এর উত্তরে ইয়াশ রোহান বলেন, ভালোবাসার সংজ্ঞা এক কথায় তুলে ধরা কঠিন। এটি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ, তা বলা যাবে না।
নিজের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই নিজস্ব ভালোলাগা প্রাধান্য পায়। নির্দিষ্ট কোনো কিছু বা কাউকে একান্ত আপন করে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা বড় হয়ে ধরা দেয়। তখন যে অনুভূতি নাড়া দেয়, সেটিই ভালোবাসা বলতে চাই। তটিনীর কথায়, ‘ভালোবাসা হলো এক পলকে মুগ্ধতা, যার রেশ ধরে চলে স্বপ্নের বুনন।’ এই জুটি এবার অভিনয় করেছেন ‘তোমায় পাব কি?’ নাটকে। নাটকটি প্রচার হবে সিনেমাওয়ালা ইউটিউব চ্যানেলে। অভিনেতা খাইরুল বাশার ও সামিরা খান মাহি একসঙ্গে অভিনয় করেছেন দুটি নাটকে। সেতু আরিফের পরিচালনায় ‘যদি তোমারে না পাই’ নাটকটি প্রচার হবে ভার্সেটাইল মিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে। পথিক সাধনের পরিচালনায় ‘সত্য মিথ্যার প্রেম’ নাটকটি দেখা যাবে জাগো এন্টারটেইনমেন্টের ইউটিউব চ্যানেলে। এই জুটিও কথা বলেছে ‘ভালোবাসা’ নিয়ে। সামিরা খান মাহি বলেন, ‘ভালোবাসা মানে হলো রেসপনসিবিলিটি। একে অপরকে বুঝবে।’ খাইরুল বাশারের ভাষ্যে, ‘ভালোবাসার সংজ্ঞা যতই দেওয়া হোক না কেন, এর অস্তিত্ব হৃদয়ের অনুভবজুড়ে। কোনো কিছুই ভালোবাসার বাইরে নয়।’ তরুণ জুটি ফারিন খান ও পার্থ শেখ। অভিনয় করেছেন ‘প্রথম প্রেমের গল্প’ নাটকে।
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রকাশ হয়েছে ক্লাব ইলেভেনের ইউটিউব চ্যানেলে। চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন আব্রাহাম তামিম। পরিচালনা করছেন রুবেল আনুশ। এই দুই তারকার কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়েছিল, পর্দায় তারা যেসব ভালোবাসার গল্প তুলে ধরেন, নানা চরিত্রের মধ্য দিয়ে দর্শকের মনে আঁচড় কাটেন, সেখানে কখনও বাস্তব জীবনের ছায়া খুঁজে পান কিনা? এর জবাবে পার্থ শেখ বলেন, ‘শিল্পী বা তারকারা যেসব কাজ করেন, সেখানে চেনাজানা মানুষের ছায়া না থাকলে মানুষের মনে আঁচড় কাটত না। এমন চরিত্রই কখনও কখনও দর্শককে নানাভাবে প্রভাবিত করে। আবার কখনও কখনও চলমান জীবনে ঘটনা গল্পের মতো উঠে আসে, যেখানে দর্শক তাঁর চেনাজানা মানুষের ছায়া খুঁজে পান। ভালোবাসার গল্পও তার ব্যতিক্রম নয়।’ এ নাটক প্রসঙ্গে ফারিন খানের ভাষ্য, ‘ভালোবাসার গল্পে যে অনেক বাঁকবদল থাকতে পারে, তা এই নাটকের মধ্য দিয়ে নির্মাতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে চরিত্রগুলোর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে যাপিত জীবনের অনেক মিল খুঁজে নিতে পারবেন।’
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে তারকা অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব এবার জুটি বেঁধেছেন নাজনীন নাহার নিহার সঙ্গে। ‘মনদুয়ারি’ নামে নাটকটি নির্মাণ করেছেন জাকারিয়া সৌখিন। সিএমভির ইউটিউব চ্যানেলে এটি প্রচার হবে। সংগীতশিল্পী সাবরিনা পড়শী আবারও আসছেন নতুন একটি নাটক নিয়ে। ‘মনেরই রঙে রাঙিয়ে’ নাটকটিতে এবার তিনি অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুবের বিপরীতে। নাটকটি মুক্তি পাবে সিনেমাওয়ালা ইউটিউব চ্যানেলে। ফরিদ উদ্দিন মোহাম্মদ পরিচালিত নাটক ‘কাঠগোলাপের বিয়ে’। এতে অভিনয় করেছেন মীর রাব্বি, আনিকা আইরা, সাইদা ইসলাম এবং সালমান আরাফাত। এটি মুক্তি পাবে কে এস এন্টারটেইনমেন্টের ইউটিউব চ্যানেলে। তৌফিকুল ইসলামের পরিচালনায় ‘লস্ট ইন লাভ’ নাটকে দেখা যাবে মুশফিক ফারহান ও আইশা খানকে।
মাহমুদুর রহমান হিমির ‘প্রথম প্রথম প্রেম’ নামে এ নাটকটিতে অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব ও কেয়া পায়েল। ভালোবাসা দিবসের বিশেষ নাটক ‘সমুদ্রনীলা’য় অভিনয় করেছেন সোহেল মণ্ডল ও তানিয়া ইসলাম। আব্রাহাম তামিমের গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপে নাটকটি পরিচালনা করেছেন ইমরান হাসান। এটি বারফি ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে। এ ছাড়া তানজিন তিশাকে দেখা যাবে ‘বসন্ত বৌরি’ নাটকে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাহালুর জামাই মেলায় মানুষের ঢল
বগুড়ার কাহালু উপজেলায় দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার পৌর এলাকার পাল্লাপাড়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির আয়োজনে কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ আয়োজন করা হয়। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী লাঠি ও পাতা খেলা। শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল নাগরদোলা ও নৌকাদোল।
মেলা উপলক্ষে নতুন জামাই ও আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ জানানো হয় আশপাশের কয়েকটি গ্রামে। বাড়িতে বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের ধুম পড়ে। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বেড়াতে আসেন মেয়েজামাই। তারা একসঙ্গে কেনাকেটা করেন। বাঁশ, মাটি ও প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতা। ছিল নারীদের প্রসাধনীর দোকানও।
এদিন অতিথি আপ্যায়নে মিষ্টির দোকানগুলোয় ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। হরেক রকমের মিষ্টি তৈরি করে বিক্রি করছেন দোকানি। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, তালের শাঁসসহ বিভিন্ন ফল বিক্রি করতে দেখা যায়। চটপটি, বারোভাজা ও ফুসকার দোকানেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ মেলা ঘিরে আশপাশের এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শিশু-কিশোরদের বাজানো বাঁশির শব্দ ছিল পুরো এলাকায়। মেলায় কথা হয় পাল্লাপাড়া গ্রামের জামাই মোরশেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এক বছর আগে বিয়ে করেছেন এলাকায়। কয়েকদিন আগে ঈদের দাওয়াতে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়ি। এদিন আসেন জামাই মেলা উপলক্ষে।
মেলায় সকালে মাছ ও মাংসের দোকান বসে। বিকেলে ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করেই মানুষের ঢল নামে। শিশু-কিশোরদের হাত ধরে মেলায় ঘুরতে আসেন অভিভাবকসহ স্বজনরা। শিশুদের বায়না মেটাতে হিমশিম খেতে হয় অনেককে।
আয়োজকদের অন্যতম সাবেক কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক বলেন, ৩৫ বছর থেকে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এলাকার জামাইদের দাওয়াত করা হয় বলে এটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। এ মেলা এখন এলাকার ঐতিহ্য।