নিভৃতপল্লির নারীদের হাতে তৈরি জুতা যাচ্ছে বিদেশে
Published: 14th, February 2025 GMT
আরজিনা খাতুন, লিপি বেগম, সুলতানা আক্তার, আয়েশা বেগমকে এখন আর না খেয়ে থাকতে হয় না। শুনতে হয় না স্বামীর গালমন্দও। কারণ, এখন সংসারে অর্থ জোগান দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের মতো রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের হাজারো নারী ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডে জুতা তৈরি করে দারিদ্র্যকে জয় করেছে। সংসারে এসেছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। তাঁদের হাতে তৈরি জুতা ইউরোপ–আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
ইতিবাচক কোনো পরিবর্তনের শুরুটা হয় কারও হাত ধরেই। তারাগঞ্জের সেই শুরুটা করেছিলেন দুই সহোদর মো.
হাসানুজ্জামান বলেন, আশির দশকে তাঁরা দুই ভাই বিদেশে পাড়ি জমান। আমেরিকায় শুরু করেন আবাসন ব্যবসা। সেখানে ব্যবসায় সফলতা আসে। এরপর দেশরে মাটিতে বিনিয়োগের চিন্তা করেন। সেই চিন্তা থেকেই ২০০৯ সালে নীলফামারীতে ও ২০১২ সালে মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষকদের জন্য বীজ ও আলু সংরক্ষণরে জন্য হিমাগার স্থাপন করেন।
ব্লিং লেদার নামের জুতা কারখানা তারাগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালে। এখানকার জুতা এখন ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ মানুষের। ২০২৩ সালে বড় ভাই মো. সেলিম মারা যান। হাসানুজ্জামান বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়্যারম্যান।
আজ শুক্রবার ওই প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়েছে। রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ফিতা কেটে এই ইউনিটের উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক খাজা রেহান বখ্ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৩০০ শ্রমিকের থাকার জন্য আবাসিক ভবন রয়েছে এ কারখানায়। তাইওয়ান থেকে আনা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে কারখানার ভেতরে জুতা তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের ১০ ভাগ পুরুষ ও ৯০ ভাগ নারী। ভবনটির চারদিকে শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়েছে ফুলের গাছ।
কারখানার অন্তত ৫০ জন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ থেকে ছয় বছর আগেও তাঁদের নির্দিষ্ট কোনো আয়ের পথ ছিল না। বছরের অর্ধেক সময় কাজের খোঁজে গ্রামের বাইরে থাকতে হতো পুরুষদের। কাজের অভাবে উঠতি বয়সের তরুণ ও নারীরা অলস সময় কাটাত। কারখানা গড়ে ওঠায় গ্রামবাসীর কর্মহীনতা ঘুচেছে। উপার্জন বেড়েছে, বেড়েছে জীবনযাত্রার মান।
ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মার্জিনা খাতুন (৩১) জানান, ভিটামাটি ছাড়া কিছু ছিল না। এখন টিনের ঘর ও নিজের ৪ শতাংশ জমি আছে। গাছগাছালি ঘেরা বাড়িতে হাস-মুরগি, ছাগল ও গাভি পালন করছেন। জুতা তৈরির কাজ করে মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন। সন্তানেরা স্কুলে যাচ্ছে সংসারে তাঁর (মর্জিনা) মতামতও এখন গুরুত্ব পায়।
কথা হয়, কারখানায় কর্মরত হাজীরহাট গ্রামের নারী শ্রমিক সীতা রানীর সঙ্গে (২৫)। তিনি বলেন, ‘স্বামী ছেড়ে গেছে তিন বছর আগে। খুব সমস্যায় ছিলাম। পরে ব্লিং লেদারে এসে প্রশিক্ষণ নেই। তারপর এখানে চাকরিও করছি। এখন আর কোনো চিন্তা নেই। মাস গেলেই টাকা পাচ্ছি ভালো আছি।’
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘দেশে নারীদের র্কমসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বড় ভাই সেলিমের উদ্যোগে নিভৃতপল্লীতে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। কারখানাটি পরিচালনা করার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতা পাচ্ছি। গ্রামীণ নারীদের ছোঁয়ায় ৩০০ জোড়া থেকে এখন ১০ হাজার জোড়া জুতা উৎপাদন হচ্ছে। ২০২৬ সালের শেষে দৈনিক ৫০ হাজার জোড়া জুতা উৎপাদনের ইচ্ছে আছে। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রুয়া নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। এর আগে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রুয়া অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মে পুনর্মিলনী এবং ১০ মে রুয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থীরা। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই পক্ষের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি চলতে থাকে।
এদিকে গতকাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রুয়া নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসভবনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ জারি করেন রুয়ার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সিলেকশন না ইলেকশন, ইলেকশন ইলেকশন’, ‘প্রশাসন জবাব দে, রুয়া কি তোর বাপের রে’, ‘রুয়া নিয়ে টালবাহানা, চলবে চলবে না’, ‘অ্যাডহক না নির্বাচন, নির্বাচন নির্বাচন’, ‘সিন্ডিকেট না রুয়া, রুয়া রুয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
এ সময় ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা-কর্মীদেরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। পরে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। বিকেল ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মে রুয়া নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। যারা রুয়া নির্বাচন দিতে পারে না, তারা রাকসু নির্বাচন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? ১০ মের নির্বাচন সেই একই তারিখে হতে হবে। এই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’