নারীরা এখন অবসরে নেই। সাংসারিক কাজের ফাঁকে তারা নিপুণ হাতে বিভিন্ন কারুপণ্য তৈরিতে ব্যস্ত। নিখুঁতভাবে শৈল্পিক চিত্র ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পকর্মে। এমন চিত্র দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন আয়োজিত মাসব্যাপী এ মেলা শুরু হয় গত ১৮ জানুয়ারি। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ কর্মরত কারুশিল্প প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দক্ষ নারী কারুশিল্পীরা এসেছেন।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিশাল মাঠজুড়ে চারু-কারুশিল্পীদের হাতে তৈরি নানা পণ্যের প্রদর্শনীর স্টল। তাদের ৩২টি স্টলসহ মোট ১০০টি স্টল নিয়ে এবার আয়োজন করা হয়েছে লোকজ মেলার। বাঁশ, বেত, কাঠ, শোলা, মাটি, তামা, কাঁসা, পিতলের তৈরি পণ্যসহ পাটজাত দ্রব্য, নকশিকাঁথা, জামদানি কাপড়, শীতলপাটি ও শতরঞ্জির পসরা সাজিয়ে বসেছেন চারু-কারুশিল্পীরা।
এ কারুশিল্প প্রদর্শনীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ২২ জন নারীশিল্পী। পুরুষের পাশাপাশি নারী কারুশিল্পীরা তৈরি করছেন নজরকাড়া সব পণ্য। উৎসবে আসা দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হচ্ছেন এসব মনোরম কারুপণ্য দেখে।
কথা হয় নকশিকাঁথা শিল্পী হোসনে আরার সঙ্গে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে কারুশিল্পী হিসেবে এ মেলায় অংশগ্রহণ করে আসছেন। তাঁর বাড়ি সোনারগাঁ পৌরসভার গোয়ালদী গ্রামে। তিনি নকশিকাঁথার পাশাপাশি সুই-সুতার সূক্ষ্ম কাজ করা পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, শাড়ি, রুমাল, কুশন কভারসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করেন। এ বছর মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন আজীবন পুরস্কার পেয়েছেন। এ কারুশিল্পীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন তাঁর মেয়ে আসমা। তিনি জানান, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন তাঁকে নকশিকাঁথার প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেছে। একসময় তিনিও প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। তাঁর শিক্ষক ছিলেন হাসনা হেনা। হোসনে আরা এ ফাউন্ডেশনে ‘নকশিকাঁথার মাঠ’ নামে এক প্রকল্প থেকে নকশিকাঁথার প্রশিক্ষণ নেন।
বাঁশের ছোট্ট একটি যন্ত্র। এতে লম্বা ও আড়াআড়িভাবে লাগানো হয়েছে পাটের সুতা। পাশেই দেখা গেল কাপড়ের সাদা ও রঙিন সুতা। একজন নারী বাঁশের যন্ত্রের ওপর থাকা পাটের সুতার ভেতরে উলের সুতা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। যন্ত্রটি একটু একটু করে নড়ছে। এভাবেই তৈরি হচ্ছে শতরঞ্জি। রংপুর থেকে উৎসবে এসেছেন ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জি কারুশিল্পী বিউটি বেগম। তিনি এ মেলায় ১৯৯৬ সাল থেকে আসছেন।
সোনারগাঁর নকশি হাতপাখার কারুশিল্পী হিসেবে লোকজ মেলায় অংশ নিয়েছেন বাসন্তী রানী সূত্রধর। তিনি জানান, এ মেলায় কর্মরত কারুশিল্পী হয়ে অংশ নেওয়া তাঁর জন্য গৌরবের। যান্ত্রিক জীবনে এখন তালপাতার হাতপাখার কদর কমে গেছে। এখন এ পাখা আর কেউ ব্যবহার করেন না। নকশি হাতপাখা এখন ঐতিহ্য। তাদের তৈরি হাতপাখা কেউ কিনলে তাঁর ভালো লাগে।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দেশীয় ঐতিহ্য ও কারুশিল্পীদের পুনরুজ্জীবিত করার জন্যই এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। ভবিষ্যতে লোকজ উৎসবে নারী কারুশিল্পীদের আরও বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে।’ v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নকশ ক
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।