দেশে দু’দফা বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে ভয়াবহ বন্যায় আউশ ও আমন  ফসলের উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরফলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় উৎপাদন কম হয়েছে ১৩ লাখ মে. টনেরও বেশি। এর মধ্যে আউশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯ লাখ ৫৫ হাজার মে. টন এবং আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩ লাখ ৫৮ হাজার মে.

টন কম হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে সরকারি অভ্যন্তরীণ মজুদ ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে চলতি অর্থবছরে আরও ৯ লাখ মে. টন খাদ্যশস্য আমদানি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সূত্র জানায়, উৎপাদন ব্যহত হওয়ার পরও দেশে বর্তমানে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমান সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। যেমন- গেল ২০২৪ সালে ১ ডিসেম্বর তারিখে যেখানে খাদ্যশস্যর মজুদের পরিমান ছিল ১১.০২ লাখ মে.টন। সেখানে বর্তমানে খাদ্যশস্যের মজুদ রয়েছে ১৩ লাখ মে. টন। দুই মাসের ব্যবধানে খাদ্যশস্যের মজুদ বেড়েছে দুই লাখ মে. টন।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ কোটি ২৫লাখ মে. টন। এর মধ্যে ধানের উৎপাদন লক্ষ্য ৪ কোটি ৪৩ লাখ মে. টন প্রাক্কলন করা হয়েছে। ধানের মধ্যে আউশ ধানের ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার মে. টন, আমন এক কোটি ৭৮ লাখ ৭৪ হাজার মে.টন এবং বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ মে. টন। এ ছাড়াও গমে উৎপাদন ১২ লাখ মে. টন এবং ভ’ট্রা উৎপাদন ধরা হয়েছে  ৬৯ লাখ মে. টন।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যশস্য বিক্রি অব্যাহত রাখতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ৮ হাজার ৫৯ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মূলত: ওএমএস, টিসিবি ও খাদ্য বান্ধব কমসূচি সারা বছর চলমান রাখার লক্ষ্যে বর্ধিত হারে এ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এদিকে সার্বিকভাবে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রকৃত চাষিদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগ বলেছে, মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার কার্যকর পদ্ধতি দ্রুত খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অন-লাইনভিত্তিক ফ্ল্যাটফর্ম, সামাজিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা অন্যান্য উপায়ে যেসব ব্যবসা সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোর অনুসরণে চাষিদের জন্যও একটি ব্যবসা মডেল তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার। এছাড়া কৃষি ও খাদ্য দ্রব্যের মজুদ/সংরক্ষণের সক্ষমতা বাড়াতে গুদাম/হিমাগারের সংখ্যাও বাড়াতে হবে বলে মনে করে অর্থ বিভাগ।

সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে অর্থ বিভাগ বলেছে, চাল-ডাল-তেল-আলু ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের বার্ষিক চাহিদার সঙ্গে বর্তমান মজুদের তুলনাভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মধ্যমেয়াদি চাহিদার প্রক্ষেপণ এবং এসব পণ্য সরবরাহের একটি রূপরেখা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি চাল-আলু-পেঁয়াজসহ কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে উৎপাদন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সাময়িক ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক শুল্ক হ্রাস/অব্যাহতির উদ্যোগ নিতে হবে।

খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি সার ও কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণ সরবরাহেও একটি রূপরেখা প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করে অর্থ বিভাগ বলেছে, সারের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ভর্তুকি দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ২৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্যের মোট কার্যকরী মজুদের সক্ষমতা হচ্ছে ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮ মে. টন। এর বিপরীতে প্রায় ১৩ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এটি এর আগের অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ কম।

ঢাকা/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর খ দ যশস য সরবর হ

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি অসম্ভব উদ্বেগের জায়গায় যাচ্ছে

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৫ সাল থেকে বিদেশি ঋণ নিয়ে বড় বড় প্রকল্প করা হয়েছে। এসব ঋণের বেশির ভাগই দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে বা সরবরাহকারী ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়। এসব ঋণের বিপরীতে এখন বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে।

বছরে চার বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, এটি বেশি মনে হতো না, যদি ওই সব ঋণের সদ্ব্যবহার করতে পারতাম; অর্থনীতিতে যদি গতি থাকত। কিন্তু এসব ঋণের প্রকল্পে অপচয়, তছরুপ ও দুর্নীতি হয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে আছে। ওই সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে রপ্তানি আয় যদি বাড়াতে পারতাম, তাহলে ডলার আসত। তখন বিদেশি ঋণ পরিশোধে সমস্যা হতো না। তাই বিদেশি ঋণ পরিশোধ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধ আরও উদ্বেগ বাড়াতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশকে তুলনামূলক বেশি সুদে বিদেশি ঋণ নিতে হয়। অন্যদিকে উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার কাছে নমনীয় ঋণ ছাড় কমেছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে তাদের ঋণ ছাড় বন্ধ করেছে বা কমিয়ে দিয়েছে।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিদেশি ঋণ নিয়ে আরও চাপে পড়বে। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা উত্তরণের পর বিদেশি সহায়তার উৎস কমে যাবে। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ নিয়ে এর সদ্ব্যবহার করতে পারি, এমন উদাহরণ নেই। এ জন্য দেশের অনেক প্রকল্পের সময় ও খরচ বেড়েছে। ভবিষ্যতে ঋণের সরবরাহের চাপ বাড়বে। আবার ঋণের অর্থ পরিশোধও চাপে থাকবে। বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি ধীরে ধীরে অসম্ভব উদ্বেগের জায়গায় যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সবজির দামে স্বস্তি, মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো কম
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে জয় হচ্ছে বোয়িংয়ের
  • হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘোষণা
  • বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি অসম্ভব উদ্বেগের জায়গায় যাচ্ছে
  • জুলাইয়ের ২৭ দিনে ৯ ব্যাংকে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি