শিশুর শৈশব চুরি বন্ধে বড়রা কী করছে
Published: 16th, February 2025 GMT
ইতালীয় লেখক ও শিক্ষা দার্শনিক মারিও মনতেসেরির ‘দ্য সিক্রেট অব চাইল্ডহুড’ (১৯৩৬) বইটি শিশুদের মনোজগৎ-বহির্জগতের বিকাশ আর সেখানটায় প্রতিবেশ ও মা-বাবার ভূমিকা ও দায় নিয়ে অসাধারণ বিশ্লেষণ রয়েছে।
মারিও মনতেসেরি তাঁর ১৯৪৬ সালের লন্ডন বক্তৃতামালায় শিশুদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা তুলে ধরেছিলেন। তার মধ্যে আমার কাছে বেশি দাগ কাটে এই কথাগুলো: সত্যিকার অর্থে শিশুদের প্রতি আমাদের গভীর সামাজিক দায় রয়েছে, কেননা তারাই আগামী দিনে পরিপূর্ণ মানব হয়ে উঠবে।
মনতেসেরির মতো রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও সুকুমার রায়, সত্যজিৎ রায় ও এস এম সুলতানের কর্মে-দর্শনে শিশুদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন ও সামর্থ্যসম্পন্ন পূর্ণ মানুষ হিসেবে দেখার প্রবল প্রয়াস রয়েছে।
নিজস্ব চিন্তা-যুক্তিতে পরিবর্তন ও কল্যাণের জন্য কাজ করার ক্ষমতা শিশুদের মধ্যে আছে। এই ক্ষমতাকে ইংরেজিতে ‘এজেন্সি’ বলা হয়ে থাকে।
পরিতাপের বিষয়, শিশুদের সেই ক্ষমতাটা বড়রা করায়ত্ত করে নেন। নানা অজুহাতে বিদ্যা-বুদ্ধি-সফলতা অর্জনের দোহাইয়ে শিশুদের নিজস্ব এজেন্সি তৈরি হতে দেওয়া হয় না।
আরও পড়ুন‘সবার জন্য শিক্ষা’ কি শুধু আপ্তবাক্য হয়েই থাকবে২৩ অক্টোবর ২০২৪বড়দের এজেন্সির জন্য শিশুদের একধরনের প্রতিপক্ষ ও প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখার প্রবণতাও কম নেই। ইতিহাস নিয়ে সেটা প্রকটভাবে চোখে পড়ে।
সেই ঔপনিবেশিক সময় থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা রাজনৈতিক প্রপঞ্চ ও লক্ষ্যের কবলে পড়ে পাঠ্যপুস্তক বদলে যায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বদলে যেতে থাকে ইতিহাসের অনেক কিছু; এমনকি মীমাংসিত অনেক অস্তিত্বের অধ্যায়।
যেহেতু এসবই শিশুদের ইতিহাস বোধ নির্মাণের বড় জায়গা, এর বড় একটা প্রভাব শিশুদের ইতিহাস ও রাজনৈতিক বোধ নির্মাণের জায়গাগুলোতে পড়ে। আসল ইতিহাস নিয়ে বড় একটা ধূম্রজাল ছড়ানো থাকে তাদের মগজে।
শিশুদের সঙ্গে ইতিহাস সম্পর্কিত আলোচনার জায়গাও নিতান্তই কম। সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে শিশুদের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত করার সুযোগ শহরে কিছুটা থাকলেও গ্রাম ও মফস্সলে তা নেই বললেই চলে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সেখানে একমাত্র অবলম্বন হিসেবে কাজ করতে পারার কথা থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতায় সেটা সম্ভব হয় না।
আরও পড়ুনপরীক্ষার বোঝা নয়, শিশুরা বেড়ে উঠুক আনন্দময় শিক্ষায়০৯ অক্টোবর ২০২১কোনো শিশুই নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক বিশ্বাস নিয়ে জন্ম নেয় না। বিভিন্ন সময়ে চিন্তার জগৎ ও বাইরের জগতে আকাল নামে। স্বপ্ন থেকে শুরু করে সত্য অনেক কিছু তখন অচেনা মনে হয়। ধ্বংস নেমে আসে।
‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ’—জীবনানন্দের কবিতায় সেই আকালের চিত্র ধরা পড়ে।
এই আকাল শিক্ষা, সাহিত্য ও সমাজের অন্যত্র ইথারের মতো ছড়িয়ে পড়ে। অন্ধদের চোখ-চিন্তা-চিৎকার চারপাশটাকে নতুন সত্য দিয়ে গড়ে দিতে থাকে।
এই আকালের সময়টাতে শিশুদের মারাত্মক ক্ষতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। সামাজিক বাস্তবতায় শিক্ষার গুরুত্ব আছে বলে আমরা পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলামের পরিবর্তনে শিশুদের ধাক্কা খাওয়ার কথা খানিকটা আলোচনায় আনি।
এর বাইরে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার পরিবর্তনে শিশুদের মনোজগতের ওপর কী প্রভাব পড়ে, সেটা নিয়ে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাভাবনা ততটা দৃশ্যমান নয়।
চারপাশের অসংবেদনশীলতা, হিংস্রতা ও বিকার-বিকৃতির যাবতীয় সবকিছু শিশুদের হাতের নাগালে চলে আসছে।
টিভি কিংবা মুঠোফোনের পর্দায় সেসব রগরগে বাস্তবতা ভেসে বেড়ায়। আবার বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানে এবং বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে চলমান যুদ্ধে অগুনতি শিশু আহত ও নিহত হয়েছে এবং হচ্ছে।
এই সংঘাত আর চিন্তার আকাল দুটোই শিশুর মনোজগতে বিনাশী প্রভাব বয়ে আনে। বিংশ শতকের ব্রিটিশ ছোটগল্পকার ফ্র্যাংক ও’কনোর তাঁর ‘মাই ইডিপাস কমপ্লেক্স’ (১৯৫৩) নামক গল্পে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে এমনই একটি ধ্বংস ও বিকারের আখ্যান তুলে ধরেছেন।
মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা, বৈরিতা ও নির্মমতার প্রতিচ্ছবি চিরাচরিত। মানুষ প্রকৃতির সঙ্গেও এই বিরোধ ও বৈরিতা নিয়ে চলতে থাকে এবং অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। শিশুদের ভেতরে প্রকৃতির প্রতি একটা টান থাকে, যা ক্রমাগতভাবেই কমতে থাকে।
আমরা কোনো জন্তু/পশু বা প্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে যূথবদ্ধভাবে লড়ে এসেছি। একটা সাপ কিংবা হিংস্র প্রাণীদের মারার জন্য মানুষ দলবদ্ধ হয়ে যায়।
এই দলবদ্ধতা মানুষের বিরুদ্ধে মানুষ ভালো-মন্দ বিবেচনা কিংবা ভালোমন্দহীন বিবেচনাতেও প্রয়োগ করে। শিশু-কিশোরদের মধ্যেও এই যূথবদ্ধতার বোধ জন্ম নেয়।
যে সমাজে শিশুদের চারপাশে অন্যায় ও বিবেচনাহীন ঘটনার আধিক্য বেশি, সেই সমাজে শিশুদের ভেতরেও দলবদ্ধ প্রতিযোগিতা, ক্রোধ, বিরোধ, বৈরিতা ও ক্ষমতা প্রদর্শনের মতো বিষয়গুলো দেখা দেয়।
আরও পড়ুনসন্তানকে প্রোগ্রামিং শিক্ষা: অভিভাবকেরা যেটি বিবেচনায় নিতে পারেন২৬ অক্টোবর ২০২৪আধুনিক ইংরেজ ঔপন্যাসিক উইলিয়াম গোল্ডিংয়ের উপন্যাস ‘লর্ড অব দ্য ফ্লাইজে’ (১৯৫৪) এই বাস্তবতার অকাট্য চিত্র দেখা যায়।
যে সমাজ ও সভ্যতায় প্রতিযোগিতার বদলে সহযোগিতা, দরকারের বদলে দরদ, হিংসার বদলে হাসি, বৈরিতার বদলে বন্ধুত্ব, অনুমানের বদলে যুক্তি, মূর্খ তর্কের বদলে বইনির্ভর যুক্তি এবং অন্যায্যতার বদলে ন্যায্যতার জায়গা প্রশস্ত হবে, সেই সমাজ-সভ্যতায় শিশু-কিশোরেরা মানবিক হয়ে বেড়ে উঠতে পারবে।
প্রায়ই কিশোর অপরাধী চক্রের কথা শুনছি আমরা। নানা জায়গায় স্কুল-কলেজপড়ুয়াদের ভেতরে অসহিষ্ণু ও অসংবেদনশীল আচরণ দেখা যায়। বছর দুয়েক আগে এক কিশোর শিক্ষার্থীর স্টাম্পের আঘাতে শিক্ষক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল।
অতি সম্প্রতি দলবদ্ধ কিশোর ও তরুণদের উন্মত্ত হয়ে উঠতে দেখা গেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ওপরে।
এই উন্মত্ততা ও অসংবেদনশীলতাকে সমাজবিচ্ছিন্ন চিন্তা দিয়ে বিচার করলে কেবল কিশোর-তরুণদেরই একপেশেভাবে দায়ী করা হবে।
আমাদের অন্যায় রাজনীতি ও তার বলয়ের প্রভাব দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থার ভেতরে শিকড় গেড়ে থাকে। পরিবার, বাজার, রাস্তাঘাট, যানবাহন, অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক অন্যায়-অবিচারের আসর পড়ে।
শিশুকাল থেকেই খুব সহজেই বোধগম্য হয়ে যায়, অন্যকে ঠকিয়ে, কষ্ট দিয়ে কিংবা বল প্রয়োগ করে নিজের অবস্থান তৈরি করা যায়।
হাটে-বাজারে কিংবা বাসে-ট্রেনে কিংবা বিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ই জিতে যাচ্ছে; পরিশ্রমের বদলে তোষামোদই পরিশ্রম হিসেবে মূল্যায়িত হচ্ছে।
শহর-গ্রাম বিভাজন শিশুদের মনোজগতে একটা শ্রেণিবোধ তৈরি করে, যা কারও ক্ষেত্রে অহংকার আবার কারও ক্ষেত্রে হীনম্মন্যতা জন্ম দেয়। পারিবারিকভাবে শিশুরা যতটা যত্ন ও সুবিধা পায় সেটাও শহরে বেশি। বড়দের সম্মান ও সামাজিক অবস্থানের দরকারেই শিশুদের ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়া ও ভালো ফলাফল করার জন্য পারিবারিক অনেক বিনিয়োগ থাকে।এখনকার বাস্তবতায় মানবিকতা ও দর্শন-আদর্শে উন্নতির চেয়ে শিশুকাল থেকেই শিশুদের মানব সম্পদে পরিণত করার ওপরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
শিল্পের চেয়ে অর্থ, বইয়ের চেয়ে যন্ত্রের গতরে ভেসে বেড়ানো কৃত্রিম মনগড়া জ্ঞানের কদর বেশি চোখে পড়ে এই বাস্তবতায়। ন্যায়পরায়ণ লেখক, শিক্ষক, কবি, বিজ্ঞানী, সাধক ও শিল্পীরা এখানে বনবাসী ঊনমানুষ বনে যান।
যে সমাজে এই ধারা চলমান, সেখানে শিশুরা স্বপ্ন-সততায় বেড়ে উঠতে ধাক্কা খেতে বাধ্য। বদল হোক তবুও: শিশুদের মতো স্বপ্ন-সত্যরা পবিত্রতায় ভরে উঠুক। কল্যাণ হোক সবার।
শিশুদের নিয়ে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক চিন্তার জায়গা একেবারেই কম। গ্রামে সেটা একেবারে নেই বললেই চলে।
শহর-গ্রাম বিভাজন শিশুদের মনোজগতে একটা শ্রেণিবোধ তৈরি করে, যা কারও ক্ষেত্রে অহংকার আবার কারও ক্ষেত্রে হীনম্মন্যতা জন্ম দেয়। পারিবারিকভাবে শিশুরা যতটা যত্ন ও সুবিধা পায় সেটাও শহরে বেশি।
বড়দের সম্মান ও সামাজিক অবস্থানের দরকারেই শিশুদের ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়া ও ভালো ফলাফল করার জন্য পারিবারিক অনেক বিনিয়োগ থাকে।
শিশুর ইচ্ছা-অনিচ্ছা সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গৌণ। গ্রামেও এই প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।
প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে শিশুদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করানো হচ্ছে। ইংরেজি বলা-শেখায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বড়দের মতো শিশুদের ব্যস্ততা নেহাত কম নয়!
যতটুকু মুক্ত সময় মেলে টিভি-মুঠোফোনে শিশুদের মনোজগৎ ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
অনেক শিশুর ভাষিক বৈকল্য দেখা দেয় এতে করে। আবার কেউ কেউ ইংরেজি-হিন্দি বলতে-বুঝতে পারলেও নিজের মাতৃভাষা বলতে পারে দেরিতে।
এসবে মা-বাবার দায় রয়েছে। অতীতে মা-বাবারা ব্যস্ত থাকতেন, খাটুনি তাঁদেরও হতো কিন্তু সন্তানদের বড় হওয়া ও সফলতা নিয়ে তাঁদের মানবিক ও মমতাময় বোধ ছিল।
সন্তানদের হাতে ধরে শেখানো আর তাঁদের হাত ধরে প্রাণপ্রকৃতির ভেতর দিয়ে হেঁটে প্রতিবেশকে চেনানোর মাধ্যমে জীবনঘনিষ্ঠ ক্রমবিকাশের সেই সময়টা আর এখন নেই।
এখন সেখানে প্রতিযোগিতা ও শ্রেণির বোধ ঢুকে গেছে। এতে করে মা-বাবার ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। কবি জয় গোস্বামীর ‘টিউটোরিয়াল’ কবিতায় এই চিত্র ধরা পড়ে:
‘.
তোমার জন্য আন্টি রাখতাম?
মোটা মাইনে, ভদ্রতার চা-জলখাবার
হপ্তায় তিন দিন, তাতে কত খরচা হয় রে রাস্কেল?
বুদ্ধি আছে সে হিসেব করবার?
শুধু ছোটকালে নয়, এখনো যে টিউটোরিয়ালে
পাঠিয়েছি, জানিস না, কি রকম খরচাপাতি তার?
ওখানে একবার ঢুকলে সবাই প্রথম হয়। প্রথম, প্রথম!
কারও অধিকার নেই দ্বিতীয় হওয়ার।’
মা-বাবার আর্থিক, শারীরিক, মানসিক এই চাপের ভার শিশুদের নিখাদ শৈশব থেকে বঞ্চিত করে। অল্প বয়সেই তাদের বড় হওয়ার তাড়না পেয়ে বসে।
এত বস্তুগত তাড়না নিয়ে সার্থকতার জ্ঞান অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে। ভালো ফলাফলের বিপক্ষ হয়ে ওঠে ভিন্নধর্মী বই ও আনন্দ লাভের অন্যান্য উপাদান।
এই চোখা জীবন নিরানন্দ ও স্বার্থপর হয়ে উঠতে পারে সহজেই। এসব নিয়ে গভীর সচেতনতা ও দায়বোধ বাড়াতে নানামুখী কাজ করার সময় চলে যাচ্ছে—নিজের ঘর থেকেই অনেক কল্যাণ লাভ করতে পারে শিশুরা।
হাবিবুর রহমান শিক্ষক, ইংরেজি বিভাগ, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও পিএইচডি গবেষক, কার্টিন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ শ দ র মন র জন ত ক ব স তবত দলবদ ধ র জন য আম দ র র র জন ক ষমত প রথম র বদল
এছাড়াও পড়ুন:
মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী
গত মার্চে ৪৪২ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ করা হয়েছে ১২৫ কন্যাসহ ১৬৩ জনকে। ১৮ কন্যাসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দুই কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। দুই কন্যা ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া ৫৫ কন্যাসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাম্প্রতিক নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ তথ্য জানান। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মোট ১৮৯ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩০ কন্যাসহ ৪৮ জন। তার মধ্যে তিন কন্যাসহ ১১ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ২০৫ নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৩ কন্যাসহ ৪৯ জন। তার মধ্যে ১৪ কন্যাসহ ২০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাসহ দুইজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া দুইজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
মডারেটরের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নম্বর ধারা জেন্ডার সমতা। এটি উপেক্ষা করা কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী আন্দোলনের অন্যতম দাবি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন ও সরাসরি নির্বাচন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৫৪টি। এর আগে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৯৯ কন্যাশিশু।