সিলেটে বিএনপির কোনো নেতার প্রশ্রয়ে অনুপ্রবেশকারীরা সক্রিয় হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
Published: 16th, February 2025 GMT
যেকোনো ধরনের দুর্বৃত্তায়ন রুখতে বিএনপি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। দলের ভেতরে কেউ অপরাধ, অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি কিংবা কোনো অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিলেটে বিএনপির কোনো নেতার প্রশ্রয়ে অনুপ্রবেশকারীরা সক্রিয় হলে তাঁদের বিরুদ্ধেও দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ রোববার দুপুরে সিলেট নগরের চৌকিদেখী এলাকায় সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ সহযোগী সংগঠনের যৌথ সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি খাত ধ্বংস করে দিয়ে গেছে স্বৈরাচার হাসিনা। আগামীর সরকারের জন্য দেশ চালানো হবে এক চ্যালেঞ্জ। কাজেই আগামীতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরতে পারবে না। তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণ করা যাবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সব প্রতিশোধ নেব। ৩১ দফার বাস্তবায়নই বড় প্রতিশোধ।’
যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস (লোদী)। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী যৌথভাবে সভা সঞ্চালনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথে যেকোনো ধরনের বাধা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। দলের ভেতরে কেউ এই অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকলে কিংবা কোনো নেতার প্রশ্রয়ে অনুপ্রবেশকারীরা সক্রিয় হলে তাঁদের বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যৌথ সভায় আরও বক্তব্য দেন সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আশিক উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, মহানগর যুবদলের সভাপতি শাহ নেওয়াজ বখত চৌধুরী, জেলা যুবদলের সভাপতি মোমিনুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব শাকিল মুর্শেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আফসর খান, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মির্জা সম্রাট হোসেন, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের আহমদ, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী আহসান, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দিলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে রেজাউল হাসান কয়েস বলেন, জনগণের আস্থা নষ্ট হয়, এমন কোনো কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতা-কর্মীদের এক থাকতে হবে। বিএনপির বা এর সহযোগী সংগঠনের কেউ অপরাধীদের আশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় পর্যায়ে পাড়া-মহল্লা কিংবা বাজারভিত্তিক গোষ্ঠী তৈরি করে দলীয় শৃঙ্খলা ব্যাহত করার প্রচেষ্টা বন্ধ করা হবে।
সভায় বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্টদের একেকজন মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যাংকে লেনদেন পাওয়া যাচ্ছে হাজার কোটি টাকার। তাঁরা গোটা দেশকে, গোটা জাতিকে আওয়ামী লুণ্ঠনের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। এ ছাড়া বিএনপিকে নিয়ে দেশের ভেতরে-বাইরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তবে কোনো ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। এ অবস্থায় দলের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র ব এনপ র স ব যবস থ আবদ ল য বদল
এছাড়াও পড়ুন:
২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সেই খসড়ায় বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারও কোনো মতামত আছে কি না, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা কাল জমা দেব।’
খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি একমত বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে।’
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।’
সংস্কার কমিশনের ৭০০–এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’