ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা প্রশাসন এবং বিএনপি নেতাকর্মীর বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দলের স্থানীয় নেতাদের চাহিদামতো সুবিধা না দেওয়ায় এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এর প্রতিবাদে গতকাল সোমবার উপজেলা পরিষদের সরকারি কর্মকর্তা-কমর্চারীরা মানববন্ধন করেছেন।
ইউএনওর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপি উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করলে তার প্রতিবাদে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাল্টা কর্মসূচি পালন করেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে দলীয় নেতাকর্মী উপজেলায় যাননি। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পাঁচবাগ গলাকাটা মৌজায় বিআইডব্লিউটিএর বালু নিতে ইউএনও রুবাইয়া ইয়াসমিনকে চাপ দিয়ে আসছেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম। ইউএনও নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। গত রোববার আলমগীর মাহমুদ দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে সোমবার উপজেলা পরিষদ ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন। বিষয়টি জানতে পেরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করার ঘোষণা দেন। তাদের অভিযোগ, ইউএনওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সোমবার সকালে বিএনপি নেতাকর্মী কর্মসূচি বাতিল করেন। স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউল হকের ভাষ্য, এ দ্বন্দ্বের কারণে গফরগাঁওয়ের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ইউএনওর বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হেনস্তা’র বিরুদ্ধে তারা একত্র হয়ে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছেন। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের সুশৃঙ্খল কার্যক্রম ব্যাহত করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে ইউএনওর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁকে হেয় করার চেষ্টা চলছে। ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা।
যদিও ইউএনওর সঙ্গে কোনোদিন দেখা হয়নি বলে দাবি করেছেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম। তিনি বলেন, ‘গত ছয় মাসে তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে মাত্র তিনবার। ইউএনও অযথা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তাঁর অনিয়মের কারণে স্থানীয় নেতাকর্মী আমার কাছে অভিযোগ দিলে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছিলাম। ইউএনও শেখ হাসিনার সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত। আওয়ামী লীগের সময়ে যেভাবে প্রশাসন চালাতেন, এখনও সেভাবেই চালাচ্ছেন।’
মানুষ ইউএনওর কাছে কাজ নিয়ে গেলে ৭ শতাংশ ঘুষ নেন অভিযোগ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পলাতকদের বেতন-ভাতা উত্তোলনে সহায়তা এবং নিয়োগ বাণিজ্য করেন। ৪১টি ইটভাটা থেকে টাকা নেন। স্কুল, মাদ্রাসা থেকে অনৈতিক সুবিধা পিএসের মাধ্যমে নেন। ইউএনও এখন বালু ব্যবসায়ী হয়ে গেছেন। নির্বাচনে নিজেই ফলাফল ঘোষণা করেছেন। এসব অনিয়মের কারণে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি করতে চেয়েছিল জনগণ। দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে– প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধে যাওয়া যাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা আলমগীর মাহমুদ কিছু অবৈধ তদবির করছিলেন অভিযোগ করে ইউএনও রুবাইয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। চর আলগী ইউনিয়ন পরিষদ সরকারি ভবনে না নিয়ে তাঁর পছন্দমতো জায়গায় নিতে চেয়েছিলেন। পাঁচবাগ গলাকাটা মৌজার বিআইডব্লিউটিএর বালু নিতে নিয়মবহির্ভূত চাপ দেন। সরকারি নিয়মে ডাকের কথা বললেও এর বাইরে বালু দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন। এসব প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘শুধু আমাকে বলেছেন– এমন না। জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিভিন্নভাবে চাপ দিয়েছেন বালু দিতে। এসব কারণে তিনি আমার বিরুদ্ধে মিছিল ও উপজেলা
পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি দেন। পরে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর প্রতিবাদ হিসেবে মানববন্ধন করেছেন।
ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শামীম রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিষয়টি আপনার কাছেই শুনেছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউএনওর ব র দ ধ ষড়যন ত র ন ত কর ম ব যবস থ কর ছ ন ব এনপ উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনা ফিরে এলে সাধারণ মানুষই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেকেই বলছেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসবেন। এ বিষয়ে বিএনপিকে কিছুই করতে হবে না, সাধারণ মানুষ তার ব্যবস্থা নেবে। তাকে আর এদেশে এসে কোনোদিন রাজনীতি করতে হবে না। সাধারণ মানুষের ওপর যে অন্যায় অত্যাচার হয়েছে এজন্য তারাই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের মোলানী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণসংযোগ কর্মসূচিতে এ মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, সনাতন ধর্মের মানুষ বিএনপির আমলে সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকবে। কারণ বিএনপি একটি শান্তিপ্রিয় দল। ফেসবুক ইউটিউব নিয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন তিনি বলেন, ফেসবুকে অসংখ্য মিথ্যা আসে। ইউটিউবে এমন এমন কথা বলে যা দেখে মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যাবে। এগুলো দেখে বিভ্রান্ত হবেন না।
তিনি বলেন, এসব মিটিংয়ে মানুষের মুখ দেখেই বুঝা যায় তারা সবাই পরিবর্তন চায়। সবাই ভোট দিয়ে সরকার গঠন করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে নির্ভরশীল, নিরাপদ দল হচ্ছে বিএনপি। বিএনপিকে নিয়েই তারা সেই সরকার গঠন করতে চায়। ধানের শীষ আপনাদের, যাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, কেউ আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় করবেন না, অন্যায় করলে মানুষ ভালোবাসবে না। আওয়ামী লীগের মতো ছুড়ে ফেলে দেবে। সুতরাং অন্যায় যেন কেউ না করে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। নিজেরা অনেক শক্তিশালী নিয়ে এ সব অপকর্ম প্রতিরোধ করবেন। সাধারণ মানুষের ওপর যেন কেউ অন্যায় অত্যাচার করতে না পারে। প্রয়োজনে অন্যায়কারীদের সরাসরি পুলিশের হাতে তুলে দেবেন।
আয়নাঘর ও শেখ হাসিনা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ যাদের ভয় পেয়েছে তাদের গুম করেছে। ১৭০০ মানুষকে গুম করা হয়েছে। ৭ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত তাদের আটকে রাখা হয়েছে। গোলাম আযমের ছেলে ফারুক ই আজমকে ৮ বছর গুম করে রাখা হয়েছে। সিলেটের এমপি ইলিয়াসের এখনও খবর পায়নি তার পরিবার।
এ সময় চিলারং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাদেরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান হান্নু, পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন। এ সময় বিএনপিসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাদেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চিলারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একই কর্মসূচিতে যোগ দেন।