চীন দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। নিজেদের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অস্ত্র বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি জানান, বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করা তাঁদের সমরাস্ত্র সেরা ও সাশ্রয়ী। চীন ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি করতে আগ্রহী।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় চীনা দূতাবাস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চীনের রাষ্ট্রদূত এ তথ্য জানান।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন গত মাসে বেইজিং সফর করেছিলেন। ওই সফরের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে চীনা দূতাবাস এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সমরাস্ত্র সংগ্রহের অন্যতম প্রধান উৎস চীন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সরঞ্জাম সংগ্রহে বিশ্বের নানা প্রান্তের দেশগুলোতে নজর দিচ্ছিল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং তুরস্ক এখন বাংলাদেশে সমরাস্ত্র সরবরাহে আগ্রহী। এই পরিস্থিতিতে চীন কোনো রকম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে কি না, জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের কাছে চীন বিপুল সংখ্যক সমরাস্ত্র সরবরাহ করেছে। সমরাস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে চীন নিজের দেশের প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণের পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় পরিস্থিতিকে বিবেচনায় রেখেছে; যা বাংলাদেশের উপযোগী। চীনের তৈরি সমরাস্ত্রগুলো সেরা, যা দামেও সাশ্রয়ী। এমন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সমরাস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে অন্য কারও প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে না চীন।

তিস্তার বিষয়ে চীন প্রস্তুত আছে

আলোচিত তিস্তা প্রকল্পে চীনের যুক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন প্রস্তুত আছে। তবে প্রকল্পটা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেই সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে বাংলাদেশকেই নিতে হবে। এই নদীর তীরে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষের কল্যাণে তিস্তা প্রকল্প যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।

তবে বাংলাদেশে যেভাবে তিস্তা বৃহদায়তন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়, চীন এমন ভাবনার সঙ্গে একমত নয়। রাষ্ট্রদূতের মতে, প্রকল্পটি একসঙ্গে বাস্তবায়ন না করে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা উচিত।

ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালে একটি প্রস্তাব পাঠিয়ে তিস্তা প্রকল্পে চীনের সহায়তা চেয়েছিল। চীন প্রকল্পটি মূল্যায়ন করে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাল্টা প্রস্তাবে জানায়, প্রকল্পটি সংশোধন করা উচিত। তবে এরপর বাংলাদেশের কাছ থেকে ফিরতি কোনো প্রস্তাব পায়নি চীন।

দুই দেশের ভবিষ্যৎ সহযোগিতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ৫০ বছর ধরে অভিন্ন স্বার্থে একে অপরকে সহযোগিতা করে আসছে দুই দেশ। একে অপরের প্রতি সম্মান, সাম্য এবং অভিন্ন স্বার্থ সামনে রেখে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যা–ই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ ও সব বাংলাদেশির সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখাটাই চীনের নীতি। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্য সুরক্ষায় সহযোগিতা করবে চীন।

ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর করেন চীনে। যা দুই দেশের রাজনৈতিক সহযোগিতারা স্পষ্ট বার্তা দেয়।

৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক। এটা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব ফেলবে—জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, এ প্রশ্ন চীন নয়, ভারতের রাষ্ট্রদূতকে করা উচিত। চীনের প্রত্যাশা, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।

ঢাকা-দিল্লির উত্তেজনা কমাতে প্রতিবেশী হিসেবে চীন মধ্যস্থতা করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি মনে করি, নিজেদের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশিরা যথেষ্ট বিচক্ষণ।’

বাংলাদেশের পাঠ্যবই এবং সরকারি ওয়েবসাইটে মানচিত্রের বিষয়ে চীনের আপত্তি নিয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে ও ওয়েবসাইটে চীন-অরুণাচল সীমান্তের ভুল মানচিত্রের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি। আমরা এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন চাই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমর স ত র স পর স থ ত সহয গ ত প রকল প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়