ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শড়াতলা গ্রামে বাদ্যযন্ত্র, হকার ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নিষিদ্ধ করে দেয়ালে সাঁটানো সব ‘নোটিশ’ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ওই ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএন) ওই গ্রামে যান। পরে ওই নোটিশ সরিয়ে ফেলা হয়।

এ বিষয়ে ইউএনও তারিক-উজ-জামান বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তা তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আর ওই নোটিশে তাঁর মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি শড়াতলা গ্রামে অসুস্থ এক ব্যক্তির বাড়ির পাশে উচ্চ স্বরে মাইক বাজিয়ে আনন্দ করছিলেন একদল তরুণ-যুবক। নিষেধ করলেও তাঁরা মাইক বন্ধ করেননি। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়া গ্রামের এক দরিদ্র দম্পতির সন্তান জন্মের পর তাঁদের বাড়িতে এসে জোর করে টাকা আদায় করেছে হিজড়াদের একটি দল।

এ পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসের শুরুতে গ্রামের মাতব্বরেরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, এখন থেকে গ্রামে কেউ বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারবেন না; হকার ও হিজড়াদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্ত গ্রামের সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য ১০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মাতব্বরেরা স্বাক্ষর করেন। ওই কাগজের ফটোকপি বাড়ির দেয়াল ও দোকানে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়।

ওই কাগজে মোট ১৯ জনের স্বাক্ষর ছিল। এক নম্বরে ‘টিএনও’ লিখে মুঠোফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে, তবে কোনো নাম লেখা হয়নি। গ্রামবাসীর পক্ষে এই কাগজে স্বাক্ষর করেন পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি এনামুল হক, ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী, শিক্ষক মজিবর রহমান, ব্যবসায়ী সাজেদুল ইসলাম, মসজিদের ইমাম আবদুর রহমান, শিক্ষক আবু সালেহ, মসজিদের সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী, ইউপি সদস্য তৌহিদুর রহমান, মসজিদ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোহব্বত আলী, মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুল মালেক, কলেজ শিক্ষক ইন্তাজুল হক ও ফজলুর রহমান, ব্যবসায়ী নওয়াব মোল্লা, মসজিদের সাবেক সভাপতি মো.

আজিম, ব্যবসায়ী মশিউর রহমান, গোলাম মোস্তফা ও শিক্ষক আবদুল ফাত্তাহ।

১০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ‘নোটিশ’ দেওয়া হয়েছিল

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র রহম ন ব যবস য় মসজ দ র

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ