ফুল দিতে যাওয়া ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের ভিডিও করায় সাংবাদিকের ওপর হামলা
Published: 21st, February 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন বিএনপি ও যুবদলের নেতা–কর্মীরা। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় স্থানীয় এক সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলাকারীরা ওই সাংবাদিকের ক্যামেরা ভেঙে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি দৈনিক কালবেলা ও এনটিভি অনলাইনের নাসিরনগর উপজেলা প্রতিনিধি। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কে এম বশির উদ্দিনের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ১২টার পর উপজেলার শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যান উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। রাতে উপজেলা নাগরিক কমিটির ব্যানারে কয়েকজন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যান। তাঁদের সঙ্গে জি এম সোহেল নামের একজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে ছাত্রলীগ কর্মী অবহিত করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ হান্নানসহ স্থানীয় যুবদল-ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা বিরোধিতা করেন। একপর্যায়ে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা সোহেলসহ দুজনকে মারধর শুরু করেন। পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার সময়ও সোহেলকে মারধর করা হয়। সে সময় ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ভিডিও ধারণ শুরু করেন। তা দেখে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কে এম বশির উদ্দিনের নেতৃত্বে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে মারধর করেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেন।
আহত আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, নাগরিক কমিটির ব্যানারে শহীদ মিনারে আসা দুজন ছাত্রলীগ কর্মীকে বিএনপিসহ যুবদল-ছাত্রদলের নেতা–কর্মী মারধর করেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দিন রড দিয়ে আঘাত করে মারধর শুরু করেন। অকথ্য ভাষায় তিনি গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে বিএনপির এই নেতার নেতৃত্বে যুবদল-ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা বেধড়ক মারধর করেন। ক্যামেরা ভেঙে ফেলে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কে এম বশির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা সম্মিলিতভাবে ফুল দিয়ে শহীদ মিনার থেকে চলে যান। পরে নাগরিক কমিটির একাংশের নেতা–কর্মীরা ফুল দিতে আসেন। তাঁদের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মী জি এম সোহেলও ছিলেন। তাঁকে দেখে উপজেলা বিএনপি বিরোধিতা করে। যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা হট্টগোল ও হাতাহাতি শুরু করেন। ভিডিও করতে গেলে সাংবাদকি মাহমুদকে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মী মারধর করেন। সোহেল যে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত, সেটির প্রমাণও পুলিশ পেয়েছে। তিনি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নাগরিক কমিটির ২ নম্বর সদস্য মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘উপজেলায় নাগরিক কমিটির দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি অনুমোদিত ১২৮ সদস্যের কমিটি; আরেকটি বর্ধিত কমিটি। কমিটিতে আওয়ামী পরিবারের ও মতাদর্শী অনেকেই আছেন। সোহেল আওয়ামী লীগ নিয়ে ফেসবুকে অনেক পোস্ট দিয়েছে। সেসব থানার হাজির করা হচ্ছে। সোহেল অনুমোদিত কমিটির সঙ্গে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়েছিল আর আমি প্রেসক্লাবের সঙ্গে ফুল দিতে গিয়েছিলাম।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য বদল ও ছ ত রদল র ন ত ন স রনগর কর ম র র কর ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সংগঠনটির দেওয়া বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে ডুজার সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি ও সাধারণ সম্পাদক মাহাদী হাসান ছাত্রদলের এমন বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সরিয়ে নেওয়া, বিবৃতিতে সংবাদকর্মীদের নিয়ে আপত্তিকর শব্দচয়নের মতো আচরণকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে দাবি করেছে ডুজা।
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে পাণ্ডুলিপিবিষয়ক কর্মশালা শুরু
ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে আইডিইএ পরিচালকের সাক্ষাৎ
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের কর্মসূচি নিয়ে ‘আওয়ামী এমপিকে পুনর্বাসন/ভাগ বাটোয়ারা দ্বন্দ্বে জাবিতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিত’ শিরোনামে জাগোনিউজ২৪.কম-এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদকে ঘিরে একটি বিবৃতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। যেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ কিছু শব্দচয়ন করে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে ডুজা নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা মেনে নিউজ করার পরেও দু’একটি গণমাধ্যমের উপর ছাত্রদলের প্রভাব খাটিয়ে সংবাদ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। গত ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বিবৃতিতে আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। কেউ নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত মনে করলে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিকার চাইবেন। কিন্তু ছাত্রদলের এ ধরনের আচরণ আমাদের সে আকাঙ্ক্ষাকে আশাহত করেছে।
ডুজা নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাগোনিউজ২৪.কম-এর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সৈকত ইসলামকে ‘সময়ের আলো’র স্টাফ রিপোর্টার সাব্বির আহমেদ নামে একজন ফোন দিয়ে চাপ প্রয়োগেরও নিন্দা জানাই।
নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্তৃক সাব্বির আহমেদের অপেশাদার ও অনৈতিক আচরণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী