নেতারা দুশ্চিন্তায়, কর্মীরা উৎফুল্ল
Published: 22nd, February 2025 GMT
প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছর পর এই প্রথম সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ হবে খুলনা মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব। আগামীকাল সোমবার সকালে সার্কিট হাউস মাঠে দলের মহানগর শাখার সম্মেলন হবে। বিকেলে জেলা স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে অনুষ্ঠিত ভোটে নির্বাচিত হবেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক। প্রধান তিনটি পদে ১২ নেতা প্রার্থী হয়েছেন। ভোট দেবেন নগরীর পাঁচ থানার ৫০৫ কাউন্সিলর।
নেতা নির্বাচনের জন্য ভোট আয়োজন করায় উৎফুল্ল বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা। এতদিন যে নেতাদের নাগাল পাওয়া কষ্টকর ছিল, তারাই প্রতিদিন তৃণমূল কর্মীদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। বিগত দিনের ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চাইছেন। নির্বাচিত হলে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নেতাদের নমনীয় এই রূপে খুশি কাউন্সিলররা।
তবে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে নেতাদের মধ্যে। কারণ দলীয় পদের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের তোষামোদি ও লিয়াজোঁতে ব্যস্ত বেশির ভাগ নেতা ছিলেন কর্মীবিচ্ছিন্ন। নগর আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পেয়ে কার্যালয়মুখী হননি অনেকে। অনেক নেতার বিরুদ্ধে কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। ভোটে এসব বিষয় প্রভাব ফেলবে কিনা, সেটি এখন ভাবাচ্ছে নেতাদের।
দলীয় কার্যালয় থেকে জানা যায়, মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে বর্তমান আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহির এবং দৌলতপুর থানা বিএনপির সদস্য সাহাজী কামাল টিপু প্রার্থী হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তারা হলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদ আলী এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর।
সাংগঠনিক সম্পাদক ছয় প্রার্থী হলেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুদ পারভেজ বাবু, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ সাদী, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহবুব হাসান পিয়ারু, যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শের আলম সান্টু, সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ ও তারিকুল ইসলাম তারেক। এর মধ্যে তারেক ছাড়া বাকিরা বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।
মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ তাঁর অনুসারীদের কেউ প্রার্থী হচ্ছেন না। কাউন্সিল ঘিরে তাদের তৎপরতা চোখে পড়েনি।
নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সভাপতি পদে শফিকুল আলম মনা ও তরিকুল ইসলাম জহিরের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে শফিকুল আলম মনা রাজনীতিতে আসেন। যুবদলের রাজনীতি শেষে দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং সর্বশেষ খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীর পাশে ছিলাম। কর্মীরা ত্যাগী ও যোগ্য নেতা চিনতে ভুল করবেন না বলে বিশ্বাস করি।
আর তরিকুল ইসলাম জহির মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। জহির অভিযোগ করেন, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কাউন্সিলর তালিকা তৈরি করেছেন। অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন। এ ছাড়া প্রার্থী হয়েও তারা দু’জন দলীয় পদ ও প্রভাব ব্যবহার করে থানার নেতাদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন। আমরা ভোট চাইতে গেলে তাদের সহযোগিতা পাচ্ছি না। তার পরও ভোটে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
সাধারণ সম্পাদক পদে শফিকুল আলম তুহিন ও নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে কর্মীরা ধারণা করছেন। তুহিন মহানগর ছাত্রদল ও যুবদলের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব। কর্মীরা যোগ্য ব্যক্তিকেই নেতা নির্বাচন করবেন বলে বিশ্বাস করেন তুহিন।
নাজমুল হুদা সাগর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাগর বলেন, থানার নেতাদের জোর করে সদস্য সচিবের পক্ষে প্রচার চালাতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা এখনও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, নমুনা ব্যালট পাইনি।
সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দলের মধ্যে জবাবদিহির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মী এতে খুশি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত র য বদল র স র ক ল ইসল ম সদস য স কর ম র
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।