কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গত দুই দিন ছিল অন্যরকম আমেজ। বসন্তের মৃদু হাওয়ার দোলায় এমনিতেই মন উতলা হয়, এর মধ্যে শুক্র ও শনিবার সেই অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দেয় ‘বিচ ফেস্টিভ্যাল’। চাকমা, মারমা, ম্রো, বাঙালিসহ ২১টি জাতিগোষ্ঠী এই উৎসবে অংশ নেয়। সেখানে একুশের গান এবং দেশের গান থেকে শুরু করে ‘মারমা পাখা নৃত্য’, ‘বম জীবনধারা নৃত্য’সহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে শুক্র ও শনিবার ‘বিচ ফেস্টিভ্যাল’ হয়। এ উৎসবকে ঘিরে পর্যটকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২১টি জাতিগোষ্ঠীর পরিবেশিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরাই ‘বিচ ফেস্টিভ্যাল’-এর মূল লক্ষ্য। উৎসবে অংশ নেয় চাকমা, মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, লুসাই, খুমি, বম, খেয়াং, চাক, পাংখোয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, মণিপুরি, সাঁওতাল, মাহালী, ওরাওঁ, মালপাহাড়িয়া, গারো, হাজং, কোচ, রাখাইন সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। এ ছাড়া কক্সবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমি, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের বাঙালি শিল্পীরাও উৎসবে যোগ দেন।
শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভিন্ন ভাষায় ‘একুশের গান’ পরিবেশন করেন শিল্পীরা। সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’ গানটি। এরপর ‘মারমা পাখা নৃত্য’, ‘বম জীবনধারা নৃত্য’ এবং ‘সংগীত’ পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া ‘খুমি মাছ ধরা নৃত্য’, ‘ময়ূর নৃত্য’, ‘চাকমা গান’, ‘তঞ্চঙ্গা নৃত্য’, ‘ম্রো জুম নৃত্য’, ‘ত্রিপুরা গান’ ‘চাকমা প্রদীপ নৃত্য’, ‘লুসাই বাঁশ নৃত্য’, ‘সংগীত ও সম্প্রীতি নৃত্য পরিবেশিত হয়। ‘দেশাত্মবোধক গান’ (মাহালী সাঁওতালি পাহাড়িয়া) পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমতলের শিল্পীদের পরিবেশনা শুরু হয়। তার পর ‘দাসাই নৃত্য’ (সাঁওতালি), ‘পাহাড়িয়া নৃত্য’ এবং ‘কমেডি’ পরিবেশন করা হয়।
এ ছাড়া শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘ওরাওঁ নৃত্য’ ও ‘মাহালী নৃত্য’। সবশেষে ‘মণিপুরি মৃদঙ্গ নৃত্য’ ও ‘মণিপুরি রাস নৃত্য’। একইভাবে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীদের নৃত্য ও গানের মধ্য দিয়ে শনিবার রাতে শেষ হয় দুই দিনের ‘বিচ ফেস্টিভ্যাল’। শুক্রবার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড.

সৈয়দ জামিল আহমেদ। 
তিনি বলেন, শিল্পকলা একাডেমি জনগণের মাঝে জনবান্ধব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে চায়। সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার ফাহমিদা আকতার বলেন, কক্সবাজার সৈকতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে এ রকম একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে এবারের ভ্রমণ সার্থক হয়েছে। 
জেলা প্রশাসক বলেন, কক্সবাজার সৈকতে ২১টি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে ‘বিচ ফেস্টিভ্যাল’ পর্যটকদের ভিন্নভাবে বিনোদন দিয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন শ ল পকল পর ব শ এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ

আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে। তাই আজ রোববার আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে নাচ-গান-আবৃত্তিতে বরণ করে নেওয়া হলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আজ সকালে ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’ আয়োজন করা হয়। আয়োজক বর্ষা উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদ।

সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে শিল্পী সোহানী মজুমদারের সেতারবাদনে ‘আহির ভৈরব’ রাগ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

আয়োজনে বর্ষা নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন বিভিন্ন শিল্পী। ইয়াসমিন মুশতারি ‘রিম্ ঝিম্ ঘন ঘন রে বরষে’, সালাউদ্দিন আহমেদ ‘বরষা ঐ এলো বরষা’, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ‘শাওন আসিল ফিরে সে ফিরে এল না’, নবনীতা জাইদ চৌধুরী ‘শ্যামা-তন্বী আমি মেঘ-বরণা’, অনিমা রায় ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান’, শামা রহমান ‘মেঘের ’পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে’, মকবুল হোসেন ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে’, ফেরদৌসী কাকলি ‘গহন রাতে শ্রাবণধারা পড়িছে ঝরে’ পরিবেশন করেন।

বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানিরে’ লোকসংগীত গেয়ে শোনান। শ্রাবণী গুহ রায় বিখ্যাত ‘কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া’ গানটি করেন।

আবৃত্তি করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি, আহসান উল্লাহ তমাল। আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্যের কোলাজ পরিবেশন করে শিল্পবৃত্ত।

বর্ষা উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট ঘোষণা পাঠ করেন। ঘোষণায় বলা হয়, ষড়্ঋতুর দেশে বাংলার জীবনধারা পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত। সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে ঋতুর চরিত্র। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা অনেক রুষ্ট এলোমেলো, শীত একাধারে নরম ও চরম, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। প্রকৃতির ওপর মানুষের সীমাহীন অনাচার জন্ম দিয়েছে বিশ্বজনীন সংকটের। ভূপৃষ্ঠ হয়েছে তপ্ততর, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজন–বলয় ক্ষতিগ্রস্ত। আধুনিক জীবনযাত্রা গড়ে তুলছে অপচয়ের পাহাড়। মাটি খুঁড়ে প্রকৃতির সম্পদ গোগ্রাসে গিলছে মানুষ। প্রয়োজনের সীমানা ছাপানো অপ্রয়োজনের ভারে পিষ্ট ও বিপন্ন আজকের পৃথিবী। সভ্যতার দন্ত ও প্রকৃতির ঔদায়ের মধ্যে বৈরিতা মানব অস্তিত্বের জন্য তৈরি করছে হুমকি। প্রকৃতি আজ মানবের কাছে দাবি করছে সংবেদনশীলতা ও সহমর্মিতা। জীবনযাপন ও প্রকৃতির মধ্যে সমঝোতা তৈরি ছাড়া মানবের মুক্তির ভিন্ন পথ নেই।

মানজার চৌধুরী বলেন, ‘অনন্তকালের বাণী নিয়ে আজকের বর্ষাবন্দনায় আমরা মুখর হই গীতি-কবিতা-নৃত্য ছন্দে, প্রকৃতির সঙ্গে মানবের মিলনের প্রত্যয় নিয়ে। বর্ষার মিলনপিয়াসী মানস আমাদের সচকিত করে মানবসমাজে সৃষ্ট ঘৃণা–বিদ্বেষ সংঘাত রোধে, প্যালেস্টাইনে, দেশে দেশে, স্বদেশে। বর্ষার জলধারায় সিক্ত হোক সবার জীবন, হোক আনন্দময় ও কল্যাণব্রতী।’

অনুষ্ঠানে ধরিত্রীকে সবুজ করার লক্ষ্যে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরদের মাঝে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কপালে ১৩টি এবং থুতনিতে ৪টি সেলাই করা লাগে
  • দেশের পর এবার বিদেশেও ঈদের সিনেমার মুক্তি
  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • কলকাতায় নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করলেন জয়া
  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • সীতাকুণ্ডে ঝরনায় ২ বছরে ৮ পর্যটকের মৃত্যু, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • বরিশাল: পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা
  • বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার
  • কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ