চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) রমজান মাস উপলক্ষ্যে ক্লাস ও অফিসের সময়সূচি নিয়ে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৩৮টি বানান ভুল ও অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) এসএম আকবার হোছাইন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান অনুযায়ী, এ বিজ্ঞপ্তিতে পাওয়া ভুল এবং সেগুলোর প্রমিতরূপ ও ব্যাখ্যা দেওয়া হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে থাকা একাডেমিক শব্দটি অ্যাকাডেমিক হবে (বিদেশি ও বিদেশি উৎসজাত শব্দকে বাংলা বর্ণমালায় লেখার জন্য সংশ্লিষ্ট বিদেশি শব্দটির উচ্চারণ প্রধান বিবেচ্য, উচ্চারণ ‘অ্যা’-এর মতো হলে ‘অ্যা’ ব্যবহৃত হবে; ‘এ্যা’ বা ‘এ’ নয়)। তবে অ্যাকাডেমি হিসেবে ব্যবহার সঠিক হলেও একাডেমি বহুল ব্যবহৃত।)
‘তারিখঃ’ লেখা হলেও ‘তারিখ:’ হবে (বিসর্গ (ঃ) কোনো যতিচিহ্ন নয়, এটি বাংলা বর্ণমালার একটি স্বাধীন বর্ণ, এর নিজস্ব উচ্চারণ আছে, পদান্তে অবস্থিত বিসর্গ বর্ণের উচ্চারণ- হ্, যতিচিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত কোলন ( : ) বা সংক্ষেপণচিহ্নের ( .
বিজ্ঞপ্তিতে ‘উপলক্ষে’ এর স্থলে উপলক্ষ্যে হবে (‘লক্ষ্য’ থেকে ‘উপলক্ষ্য’, কিন্তু ‘উপলক্ষ’ হয় না)। আবার ‘সময়সূচি সংক্রান্ত’ এর স্থলে সময়সূচিসংক্রান্ত হবে (‘-সংক্রান্ত’ শব্দাংশের স্বাধীন ব্যবহার নেই, এটি সর্বদা অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বসে)।
‘এতদ্বারা’ শব্দটিও ভুল লেখা হয়েছে, এর স্থলে এতদ্দ্বারা হবে (এতদ্বারা=এত+দ্বারা; ‘এত’ অর্থ অতিরিক্ত, বিশাল বা বেশি পরিমাণ হওয়ায় ‘এতদ্বারা’ শব্দের অর্থ অতিরিক্ত দ্বারা, বিশাল দ্বারা বা বেশি পরিমাণ দ্বারা; কিন্তু এতদ্দ্বারা=এতদ্+দ্বারা, ‘এতদ্’ অর্থ এটা, ইহা বা এর হওয়ায় ‘এতদ্দ্বারা’ অর্থ এর দ্বারা, এটার দ্বারা বা এর দ্বারা)।
এছাড়া, ‘যাচ্ছে যে ২০২৫ সাল’ এর স্থলে ‘যাচ্ছে যে, ২০২৫ সাল’ লেখা যুক্তিযুক্ত (‘যে’-এর পর কমা দেওয়া উচিত ছিল)। ‘যোহরের’ স্থলে ‘জোহরের’ এবং ‘নামাযের’ স্থলে ‘নামাজের’ হবে (আরবি ও ফারসি বানানে ‘য’-এর স্থলে ‘জ’ হয়)।
বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেই ভুল দেখা গেছে। ‘চ.বি.’ স্থলে ‘চবি’ হবে। কারণ, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান বলছে, ‘ডিগ্রি’-র নামের বানানের সংক্ষেপণে ডট (.) থাকবে না। লিখতে হবে ডট (.) ছাড়া এবং নিরেটভাবে। যেমন- এইচএসসি, এসএসসি, এমএ, এমএসসি, এমডি, এমকম, বিএ, বিএল, বিএসসি, বিকম; ব্যতিক্রম: এম বি বি এস। অন্যান্য সংক্ষেপণের ক্ষেত্রেও ‘মুণ্ডমাল শব্দের’ ন্যায় একই রীতি অনুসৃত হবে। যেমন- এসএমএস, ঢাবি, রাবি, চবি, ইউএনও ইত্যাদি। কিন্তু নোটিশের সব জায়গায় ‘চ.বি.’ লেখা হয়েছে; যা ভুল।
অনেক জায়গায় ‘ডেপুটি’ ও ‘রেজিস্ট্রার’ শব্দের বানানে শুরুতে থাকা ‘এ’-কারের উপর মাত্রা রয়েছে; যা ভুল।
একই বানান বারবার ভুল হওয়ায় পুনরাবৃত্তি এড়াতে সেগুলো একবার করে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে 'চবি' শব্দটির ভুল সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।
এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) এসএম আকবার হোছাইন রাইজিংবিডিকে বলেন, “আসলে আমরা গতানুগতিক যে বানান দেখে আসছি, সে অনুযায়ীই বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়েছে। তবে ভুল তো ভুলই। আমরা এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। সামনে আমরা এগুলো সংশোধন করে নেব।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপলক ষ এক ড ম ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে রাশিয়াকে ১০-১২ দিনের সময়সীমা ট্রাম্পের
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের পথে অগ্রগতি দেখানোর জন্য রাশিয়াকে নতুন সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পথে অগ্রগতি দেখা না গেলে রাশিয়াকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে সাড়ে তিন বছর ধরে চলা এই সংঘাত নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে অগ্রগতি না হলে রাশিয়া ও দেশটির রপ্তানি পণ্যের ক্রেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। নতুন এই সময়সীমা ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, এর আগে এ ধরনের হুমকি বাস্তবায়ন নিয়ে ট্রাম্প দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেও এবার তিনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছেন।
‘আমি নতুন একটি সময়সীমা দিতে যাচ্ছি... আজ থেকে ১০ বা ১২ দিনের সে সময়সীমা। অপেক্ষা করার কোনো কারণ নেই... আমরা কোনো অগ্রগতিই দেখতে পাচ্ছি না।’ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টগতকাল স্কটল্যান্ডে অবস্থানকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ হুমকি দিয়েছেন।
স্কটল্যান্ডে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি সেখানে তিনি গলফও খেলেন।
সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি পুতিনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চলতি মাসের শুরুতে বেঁধে দেওয়া ৫০ দিনের সময়সীমা কমিয়ে আনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক চলাকালে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নতুন একটি সময়সীমা দিতে যাচ্ছি... আজ থেকে ১০ বা ১২ দিনের সে সময়সীমা। অপেক্ষা করার কোনো কারণ নেই... আমরা কোনো অগ্রগতিই দেখতে পাচ্ছি না।’
এ ব্যাপারে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিমিত্রি মেদভেদেভ মনে করেন, ট্রাম্প ‘সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার খেলা’ খেলছেন। আর এ ‘খেলা’ যুক্তরাষ্ট্রকে একটি যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মেদভেদেভ লেখেন, ‘প্রতিটি নতুন সময়সীমার মানে হলো একেকটি হুমকি এবং তা যুদ্ধের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে নয়, বরং তাঁর (ট্রাম্পের) নিজ দেশের সঙ্গেই এই সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ’ ও ‘সময়োপযোগী’ উল্লেখ করে প্রশংসা করেছেন। তিনি মনে করেন, এই বক্তব্য শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সময়মতো তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এবং দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শক্ত অবস্থানে যাওয়ার এটাই সঠিক সময়, যা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।
জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এই ভয়াবহ যুদ্ধ বন্ধে ও মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দিকে মনোযোগী হওয়ায় আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই।’