গভীর রাতে তালা ভেঙে বাসভবনে ভিসি, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
Published: 25th, February 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ ক্যাম্পাসের বাসভবনে অবস্থান নিয়েছেন। এই খবরে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে তাকে বাসভবন ছেড়ে চলে যেতে আল্টিমেটাম দিয়েছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কুয়েট শিক্ষার্থীরা এই আল্টিমেটাম দেন।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কুয়েট শিক্ষার্থী শেখ রাহাতুল ইসলাম। তিনি জানান, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ভিসি তার বাসভবন থেকে বের হয়ে যাবেন বলে তারা আশা করছেন। না হলে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলে ৫ দাবিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল
রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর চাপাতি ও রামদা নিয়ে হামলা চালায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা, কুয়েটের সব শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি উত্থাপন করি। আল্টিমেটাম দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের সব দাবি না পূরণ করায়, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বারংবার মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ভিসিকে বর্জন করে। এরই অংশ হিসেবে গত ২১ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের সব শিক্ষার্থী মিলে ভিসির বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ১১ টায় খবর আসে, ভিসির বাসভবনের তালা ভেঙে ফেলা হয়েছে, আমাদের স্থানীয় কিছু শিক্ষার্থীরা সেখানে যায় এবং সত্যতা নিশ্চিত করে। তারা আরো জানতে পারে, ভিসিসহ আরো কিছু অজ্ঞাত মানুষ ভিসি বাসভবনের ভেতরে অবস্থান করছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, “আমরা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিতে চাই, মাসুদ স্যার আমাদের ভিসি না, আমরা মাসুদ স্যারকে ভিসি হিসেবে বর্জন করেছি। তাই মাসুদ স্যার ভিসির বাস ভবনে ঢুকতে পারবে না। ভিসি বাসভবনে যারা অবস্থান করছে, ভিসিসহ তাদের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য, আমরা আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিচ্ছি। এরপর আমরা আমাদের স্থানীয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে আবার ভিসি বাসভবনে তালা লাগিয়ে দেব। মাসুদ স্যারের কোনো অধিকার নেই ভিসি বাসভবনে থাকার। আমরা আমাদের নতুন ভিসির জন্য ভিসি বাসভবন সংরক্ষণ করব। এর আগে পর্যন্ত আমরা এখানে তালা দিয়ে রাখব।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আমরা আরেকটি বিষয় জানিয়ে দিচ্ছি, যেহেতু আমরা ভিসিকে বর্জন করেছি, সেহেতু এই বর্জনকৃত ভিসির নিয়োগকৃত তদন্ত কমিটিকে আমরা কেউ গ্রহণ করছি না। এখানে ভিসি তার আস্থাভাজন, আমাদের আন্দোলনে বিতর্কিত শিক্ষকদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই তদন্ত কমিটিকে আমরা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি এবং এই কমিটির অধীনে প্রকাশিত প্রতিবেদন, আমরা কখনোই মেনে নেব না। আমরা আমাদের নতুন অভিভাবকের অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য অপেক্ষা করছি।”
কুয়েটের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর শেখ শরিফুল আলম জানান, তিনি ভিসির অনুপস্থিতিতে চারদিন দায়িত্বে ছিলেন। সোমবার রাত ১১ টার দিকে ভিসি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে তিনি বাসায় ফিরে যান। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের সভা রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও আল্টিমেটাম এর বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে জেনেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আল ট ম ট ম র ব সভবন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বছরে ৬ লাখ অপরিণত শিশুর জন্ম
দেশে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৬ লাখ অপরিণত (প্রিম্যাচিওর) শিশু। জন্মের সময় গর্ভকাল পূর্ণ না হওয়ায় এসব নবজাতকের ঝুঁকি থাকে নানা জটিলতায় পড়ার, এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে বেশি। তাই নবজাতকদের মৃত্যু হ্রাসে অপরিণত নবজাতক জন্ম প্রতিরোধে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার শহীদ ডা. মিল্টন হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওন্যাটোলজি বিভাগ ও সেভ দ্যা চিলড্রেন আয়োজিত সভায় এই তথ্য জানানো হয়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইসমত জাহান। তিনি বলেন, মা ও অপরিণত নবজাতকদের জীবন রক্ষাকারী প্রকল্প সেভিং উইমেন এন্ড প্রিমেচিউর বেবিজ বা সোয়াপের মাধ্যমে দেশের পাচঁটি হাসপাতাল মা ও নবজাতক সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৬৫ হাজার গর্ভবতী মা ও ৮৭ হাজার নবজাতককে সেবা পেয়েছে। দেড় হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ভায়ু বাবল সিপ্যাপ, ফ্যামিলি সেন্টার কেয়ার, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার, নিওনেটালি লাইভ ইত্যাদিকে সফলভাবে প্রয়োগ করে নবজাতকদের জীবন রক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে।
বিএমইউর নিওনাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে বছরে ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। সেই হিসেবে বছরে অপরিণত ৬ লাখ শিশু জন্মায়। নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জন থেকে ১২ জনে কমিয়ে আনা। যদিও এই প্রকল্পের কার্যক্রমসহ সামগ্রিক প্রচেষ্টায় নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জনে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
বিএমইউর ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো অপরিণত নবজাতকের জন্ম দান। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। গত ১০ বছর ধরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। এটি প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নেই। কেনো কমানো যাচ্ছে না এবিষয়েও কোনো গবেষণা হয় না। তবে সচেতনতা, প্রসূতি সেবা এবং মাতৃস্বাস্থ্য কার্যক্রম জোরদার করলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অপরিণত শিশুর জন্মের পেছনে রয়েছে মাতৃস্বাস্থ্যের অবনতি, অপুষ্টি, সময়মতো প্রসবপরিচর্যার অভাব, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রসবকালীন জটিলতা। এ ছাড়া ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণও অন্যতম কারণ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, সোয়াপের মাধ্যমে নবজাতকদের পরিবার কেন্দ্রিক চিকিৎসা (ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ার-এফসিসি) মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় বিরাট অবদান রাখছে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বৃহৎ আকারে কাজে লাগাতে পারলে সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর গবেষণা ও উন্নয়ন অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান।