জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে রাশিয়াকে দোষারোপে রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয়দের সঙ্গে বিভক্তি
Published: 25th, February 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে নাটকীয় রকমের পরিবর্তন এসেছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘে উত্থাপিত তিনটি প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভক্তি দেখা গেছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করতে রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্র। আর এ নিয়েই ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে তাদের বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করতে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এমন বিভাজন বাড়ছে। গত সপ্তাহে প্রাথমিক আলোচনা থেকে বাদ রাখায় ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা হতাশ হয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইউরোপ–সমর্থিত ইউক্রেনীয় প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসন বন্ধ এবং অবিলম্বে রুশ সেনাদের প্রত্যাহারের দাবিতে ওই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রও সে কাতারে যোগ দিয়েছে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। রাশিয়াকে আগ্রাসী উল্লেখ করে ফ্রান্সের নেতৃত্বে সংশোধনী প্রস্তাবটি আনা হয়েছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের তৃতীয় বার্ষিকীতে এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এ নিয়ে ভোটাভুটি চলার সময় ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন মাখোঁ।
১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মেনে চলাটা বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য আইনত বাধ্যতামূলক নয়। তবে একে বিশ্ব মতামতের ব্যারোমিটার হিসেবে দেখা হয়।
গতকাল সোমবার// জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র তার মূল খসড়াতে ভোটাভুটির জন্য উপস্থাপন করে। নিরাপত্তা পরিষদ অপেক্ষাকৃত ক্ষমতাধর। সেখানে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো আইনত বাধ্যতামূলক এবং রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের এ ক্ষেত্রে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। ১৫ সদস্যের পরিষদে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১০টি। ৫টি ইউরোপীয় দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। এ পাঁচ দেশ হলো যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়া।
বিরোধপূর্ণ প্রস্তাবগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে উদ্ভূত উত্তেজনাকেও প্রতিফলিত করছে। যুদ্ধ চলাকালে ইউক্রেনে নির্বাচনের আয়োজন না করায় ট্রাম্প ক্রমাগত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে যাচ্ছেন। তিন বছরের ওই যুদ্ধ শুরুর জন্য কিয়েভকে দায়ী করে মিথ্যা অভিযোগও তুলেছেন ট্রাম্প। তিনি সতর্ক করে বলেন, সংঘাত অবসানে আলোচনার জন্য তাঁকেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। না হলে নেতৃত্ব না থাকাজনিত ঝুঁকি থেকে যায়। জবাবে জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার ছড়ানো অপতথ্যের জগতে বসবাস করছেন।’
কূটনৈতিক এ টানাপোড়েন চলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আছেন মাখোঁ। আগামী বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন। এ দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত। এক মাস আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের মতৈক্য ছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য জাতিসংঘে এখন তাদের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
গতকাল সাধারণ অধিবেশনে উত্থাপিত ইউক্রেনীয় প্রস্তাবের পক্ষে ৯৩টি ভোট পড়েছে। আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে ১৮টি। ৬৫ জন ভোটদানে বিরত ছিলেন। ফলাফলে দেখা গেছে, ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন কিছুটা কমেছে। কারণ, গতবার পরিষদে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটির সময় ১৪০টির বেশি দেশ রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছিল এবং অবিলম্বে সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল।
এরপর পরিষদে মার্কিন খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে প্রাণহানির কথা স্বীকার এবং সংঘাতের দ্রুত সমাপ্তি চেয়ে প্রস্তাবটি আনা হয়েছে। পরিষদে ফ্রান্স তিনটি সংশোধনী প্রস্তাব করেছে।
সব কটি সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। আর প্রস্তাবটি ৯৩-৮ ভোটে পাস হয়েছে। ৭৩ জন ভোটদানে বিরত ছিলেন। প্রস্তাবে ইউক্রেন ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত ছিল এবং রাশিয়া ‘না’ ভোট দিয়েছে।
জাতিসংঘের দুটো পরিষদেই উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোতে ইউরোপীয় দেশের পাশাপাশি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও মেক্সিকো সমর্থন দিয়েছে। এ দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত, তবে হাঙ্গেরি এ কাতারে শামিল হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউর প য় ইউক র ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
ব্যক্তিগত সম্পদ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসির এক সাংবাদিকের ওপর ভীষণ চটে যান। ওই সাংবাদিকের কারণে ‘অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে’ বলে সতর্ক করেন তিনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে ওই সাংবাদিকের ব্যাপারে নালিশ করারও হুমকি দেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের লনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। এবিসির সাংবাদিক জন লায়ন্সও তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন। লায়ন্স এবিসিতে প্রচারিত ফোর কর্নারস অনুষ্ঠানের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।
গতকাল লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কতটা ধনী হয়েছেন? তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে অবস্থান করা সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন নামে তাঁর যে পারিবারিক ব্যবসাটি আছে, সেটি এখন তাঁর সন্তানেরা পরিচালনা করেন।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বেশির ভাগ ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।এরপর লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’
এরপর লায়ন্সকে ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, তিনি (লায়ন্স) কোথা থেকে এসেছেন।
এরপর ট্রাম্প চটে গিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে লায়ন্স ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি’ করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলতে থাকেন, ‘আমার মতে, আপনি এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্ষতি করছেন। আর তারা আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। আপনি জানেন, আপনার নেতা (অ্যান্থনি আলবানিজ) শিগগিরই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। আমি তাঁকে আপনার ব্যাপারে বলব। আপনি খুব খারাপ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। আপনি আরও ভালোভাবে কথা বলুন।’
সাংবাদিক লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’এরপর লায়ন্স আবারও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘চুপ করুন’।
গত জুনে কানাডায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও আলবানিজের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হঠাৎই তা বাতিল হয়ে যায়। এর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন আলবানিজ।
আরও পড়ুনট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডার পর কী বললেন স্টারমার ও আলবানিজ০১ মার্চ ২০২৫সম্প্রতি আলবানিজ বলেছেন, নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সম্মেলন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হবে। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে তিনি একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিভিন্ন ফোরামে আমাদের দেখা হবে। এটা সম্মেলনের মৌসুম।’
ট্রাম্পের সঙ্গে আলবানিজের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে পেন্টাগনের অকাস পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বাড়াতে ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার কাছে যে দাবি জানিয়েছেন, তা নিয়ে পর্যালোচনা।