বাঘের মুখ থেকে ফেরা মুজিবর গাজী চার যুগ পরে দস্যুদের আতঙ্কে সুন্দরবন ছাড়লেন
Published: 26th, February 2025 GMT
১৯৮১ সালের দিকে ১৬ বছর বয়সে মুজিবর গাজী বাবার হাত ধরে সুন্দরবনে যাওয়া শুরু করেন। নৌকার দাঁড় ধরা শিখতে তাঁর আরও দুই বছর লেগে যায়। বছর যখন ২০, তখন তিনি একটি বাওয়ালি দলের নেতা। নিজেই নৌকার দাঁড় টানেন। গরান কাটা থেকে মাছ ধরা সবই করেন।
মুজিবর গাজীর বয়স এখন ৬০ বছর। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় নিয়মিত জীবিকার সন্ধানে বনে গিয়ে বাঘের থাবায় সঙ্গীদের জীবন দিতে দেখেছেন মুজিবর গাজী। নিজেও বাঘের মুখে পড়লেও বেঁচে ফিরেছিলেন সাহসের জোরে। এরপরও তিনি সুন্দরবনে যাওয়া বন্ধ করেননি। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর থেকে আর বনে যাচ্ছেন না মুজিবর গাজী। কারণ হিসেবে বলছেন, ‘বাঘের থাবার ভয় না পেলেও বনদস্যুদের মার খাওয়ার শক্তি এখন নেই।’
সাতক্ষীরা শহর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের চুনা নদীর পাড়ে বুড়িগোয়ালিনী গ্রামে বনজীবী মুজিবর গাজীর বাড়ি। সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ, গোলপাতা ও গরান কাঠ কাটার পাশাপাশি নদ-নদীতে মাছ-কাঁকড়া ধরা বংশপরস্পর তাঁদের পেশা। তার বাপ–দাদাও সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশে আলাউদ্দিন মার্কেটে দেখা পাওয়া যায় মুজিবর গাজীর। আলাপচারিতায় উঠে আসে শৈশব, যৌবন ও বৃদ্ধ বয়সের নানা গল্প। নিজেকে একজন পাকা বনজীবী উল্লেখ করে তিনি জানান, বাদায় মাছ ধরতে গিয়ে তাঁর সঙ্গী ইউনুস গাজী ও আকবর সরদার বাঘের খাবার হয়েছেন। তারপরও বাদায় যাতায়াত করেছেন সাহসের সঙ্গে। গরান ও গোলপাতা কেটেছেন। মাছ ও কাঁকড়া ধরেছেন। কোনো ভয় তাঁকে বাদায় যাওয়া বন্ধ করতে পারেনি।
আরও পড়ুনসুন্দরবনে অপহরণ–আতঙ্কে পেশা বদলাচ্ছেন বনজীবীরা ১৮ জানুয়ারি ২০২৫মুজিবর গাজী বাঘের মুখে পড়েছিলেন ২০০৯ সালের জুন মাসের শেষ দিকে। তার আগের মাসেই (২৫ মে) প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলা আর জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল পুরো উপকূলীয় এলাকা। তখন এলাকার কারও হাতে টাকাপয়সা ছিল না উল্লেখ করে মুজিবর বলেন, ঠিক করলেন বাদায় যাবেন। পাঁচ সদস্যের দলে নিয়ে বাদায় যান। সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের বড়কিয়াখালী খালে নৌকা রেখে অন্যরা আশপাশে মাছ ধরছে যান। মুজিবর খালের কিনারে একা একা জাল বাইছিলেন।
এই নৌকা নিয়েই সুন্দরবের খাল–বিলে ছুটে বেরিয়েছেন মুজিবর গাজী। মঙ্গলবার সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের চুনা নদীর পাড়ে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ বর গ জ স ন দরবন
এছাড়াও পড়ুন:
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ
জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।
গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি।
উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।