খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন আমরা প্রাক্তন বিকসু (কুয়েট ছাত্র সংসদ) নেতারা। বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। 

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখা মেধাবীদের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কুয়েট সবসময় একটি শান্তিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সারা দেশে পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে ক্যাম্পাসে যে উত্তেজনা ও সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই, কুয়েট ক্যাম্পাসে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ছাত্রদল সবসময়ই সহাবস্থান ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। অতীতেও বিএনপি সরকারের আমলে কুয়েট কখনও সহিংসতা বা অরাজকতার কারণে একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি, বরং ছাত্রদল ছাত্রসমাজের আস্থাভাজন হয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বারবার পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হয়েছে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘দুঃখজনকভাবে ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর আমরা লক্ষ্য করছি, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠন’ এবং ছাত্রশিবির বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করছে। আমরা বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হয়েছি, ওই দিনের ঘটনাকে উসকে দিয়েছে এই দুটি পক্ষ, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা। তাদের পরিকল্পিত উসকানির ফলেই শান্তিপূর্ণ ফরম বিতরণ কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন ছাত্রদলের ওপর হামলার প্রতিবাদ করলে তাদের বাড়িঘর, দোকানপাটেও ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে সুযোগসন্ধানী গুপ্ত সংগঠন ছাত্রশিবির ও আওয়ামী লীগের দোসররা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ অন্যান্য শিক্ষকদের ওপর হামলা করে তাঁদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার মতো নজিরবিহীন এবং ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়ে সমগ্র ছাত্র সমাজের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ 

এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জোর দাবি জানাই- ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আমরা বিশ্বাস করি, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হবে এবং অপরাধীরা চিহ্নিত হয়ে শাস্তির আওতায় আসবে। এর মাধ্যমে কুয়েট আবারও তার স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে যাবে। আমরা সকল পক্ষকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানাই এবং আশা করি, শিক্ষার্থীদের নিজেদের স্বার্থেই সকলে মিলে একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস গড়ে তুলবে।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক ভিপি প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ, প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান, প্রকৌশলী সোহেল মাহমুদ ইকবাল, আমিনুল ইসলাম, সাবেক সাধারন সম্পাদক তারিকুজ্জামান তালুকদার শাহীন, আব্দুর রাজ্জাক, শওকত হায়াত সিদ্দীক, বজলুর রহমান ফারুক, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক জাকির মোহাম্মদ শফিকুল হাসান, সাজ্জাদ হোসেন, আশিকুর রসুল পিয়াল, সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক জি এম দেলোয়ার হোসেন, সাবেক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মোতাহার হোসেন,  শাহ রাজিউজ্জামান, মনিরুল ইসলাম তিয়াস, শাহরিয়ার নাজিম, সাবেক সহ-ক্রীড়া সম্পাদক নাজমুল গনি সোহেল, চৌধুরী আব্দুস সোবহান, মাইনুল ইসলাম,  
সাবেক সহ-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মামুনুল বাশরী, সহ-বহিক্রীড়া সম্পাদক স্বপন ধর, সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুস সোবহান, সাবেক বহি ক্রীড়া সম্পাদক তারিকুল ইসলাম ছোটন এবং সাবেক সদস্য আতিকুল আহসান চারু, আরিফুদ্দৌলা পালোয়ান, সাইদুর রহমান রিটন ও সালাহউদ্দীন রিয়াজ। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম ছ ত রদল

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই 

ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।

এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ