সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান রক্ষার জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম একটি হলো কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমে এর শিকার নিষিদ্ধ করা। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকে। কারণ, এ সময় মা কাঁকড়া ডিম পাড়ে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই কিছু জেলে, ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা যোগসাজশে এ নিষিদ্ধ মৌসুমেও মা কাঁকড়া শিকার অব্যাহত রেখেছেন। বছরের পর বছর একই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে।

২০২৪ সালের মতোই ২০২৫ সালেও কাঁকড়া শিকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে বন বিভাগ। কিন্তু বাস্তবে বরং অভিযোগ উঠেছে, কিছু বনকর্মী এই অবৈধ কাঁকড়া শিকারিদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করে তাঁদের নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যেতে দিচ্ছেন। বন বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তাঁরা চুরি করে কাঁকড়া শিকারের প্রবণতা বন্ধ করতে চেষ্টা করছেন এবং টহল বৃদ্ধি করেছেন। কিন্তু বাস্তবে বিশাল পরিমাণ কাঁকড়া প্রতিদিন সুন্দরবন থেকে তুলে স্থানীয় বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে।

বন বিভাগের কার্যক্রম শুধু সুন্দরবনের ভেতরেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু লোকালয়ে যখন এই কাঁকড়াগুলো বিক্রি হয়, তখন কি কোনো তদারকি থাকে? অন্যদিকে সুন্দরবনের আশপাশের দরিদ্র জেলেরা একমাত্র সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। সরকার তাঁদের বিকল্প ব্যবস্থা করেনি অথচ তাঁদের ওপর কেবল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর চাপে এবং মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া আগাম টাকার জন্য জেলেরা বাধ্য হন অবৈধভাবে কাঁকড়া ধরতে। কিন্তু ধরা পড়লে শুধু গরিব জেলেদেরই শাস্তি হয়, মূল হোতারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এ পরিস্থিতিতে অবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বাজার পর্যবেক্ষণ ও কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে সুন্দরবনের নদীগুলোতে টহল বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে কাঁকড়া বিক্রির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে যাঁরা এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়িত্বহীনতার জন্য যদি বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা অভিযুক্ত হন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

শুধু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দরিদ্র জেলেদের জীবন চালানো সম্ভব নয়। সরকারকে তাঁদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাসহ নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নিলে জেলেরা অবৈধ কাঁকড়া শিকার থেকে সরে আসতে উৎসাহিত হবেন। স্থানীয় মানুষ ও জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যে তাঁরা নিজেরাই যদি কাঁকড়ার বংশবিস্তার ধ্বংস করেন, তাহলে ভবিষ্যতে এর ফল তাঁদের জন্যই ক্ষতিকর হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র বন ব ভ গ র ব যবস থ র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ

জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।

গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি। 

উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ