টাঙ্গাইলে বাড়ছে খুন-ডাকাতি-চুরি
Published: 27th, February 2025 GMT
টাঙ্গাইলে শিক্ষক মো. ছানোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী সালমা খাতুন শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড হতে অগ্রণী ব্যাংকের কাজ শেষে সিটি ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। বুধবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে তারা রাস্তা পার হওয়ার সময় অন্য এক নারী তার স্ত্রীর হাত ধরেন। তাদের সাথে আরো তিন নারী ছিলেন। সিটি ব্যাংকে গিয়ে সালমা খাতুনের ব্যাগে থাকা ২ লাখ ৭৪ হাজার টাকার মধ্যে ১ লাখ টাকা পান। বাকি টাকা ওই নারীরা নিয়ে যান।
ছানোয়ার হোসেন বলেন, “আমার স্ত্রী ওই অজ্ঞাত নারীদের রাস্তা পারাপার করতে সহযোগিতা করতে গিয়ে উল্টো আমাদের টাকা খোয়া গেলো। এ বিষয়ে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।”
এদিকে, ১০ দিনে ঘাটাইলে তিন ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনা বর্তমান সময়ে ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
টঙ্গীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
ছিনতাইকারী সন্দেহে উত্তরায় ২ ব্যক্তিকে ঝুলানো হয় ওভারব্রিজে
শুধু জেলায় এই কয়েকটি ঘটনা নয়, পুলিশের নথি বলছে, গত ছয় মাসে টাঙ্গাইলে ২০টি ডাকাতি, খুন ৪৫টি ও ১১টি ছিনাতইসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। এসব ঘটনায় ১২২ জনের অধিক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মহাসড়কের যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা বলছেন, নিয়মিত নজরদারি ও প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জোরদার না করায় মহাসড়কে যত্রতত্র ঘটছে দুর্ঘটনা ও ডাকাতি হচ্ছে।
বগুড়াগামী বাসের চালক একদিল মাহমুদ বলেন, “৫ আগস্টের পর রাতে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ তেমন চোখে পরে না। দিনে তারা গাড়ি সিগন্যাল দিলে কাগজপত্র দেখার নামে তারা উৎকোচ নিয়ে থাকেন। হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্বশীল আচরণ করলেও মহাসড়কে ডাকাতি, দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে।”
বাসের যাত্রী হামিম রহমান বলেন, “নগরজলফৈ বাইপাস এলাকায় রাতে পুলিশ চোখে পড়ে না। ১৫ দিন আগে রাত ১২টার পর বাস থেকে নেমে আদালতপাড়া বাসায় যাওয়ার সময় আমার মুঠো ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। মহাসড়কের গুরত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানোর পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে।”
আফাজ মিয়া বলেন, “দেশে বেকারের সমস্যা বেড়েছে। উঠতি বয়সের যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হলে অনেক অপরাধ কমে যাবে।”
জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.
পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি প্রত্যেকটা যানবাহন সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার দাবি করেন তিনি।
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল আলম বলেন, “দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে অপরাধীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের টার্গেট করে থাকে। দেশে পর্যান্ত পুলিশ সদস্য প্রয়োজন। এছাড়া ৫ আগস্টের পর অনেক পুলিশ সদস্যই যোগদান করেননি। আবার নানা কারণে পুলিশের কাজের প্রতি একটা অনীহা কাজ করছে।”
তিনি বলেন, “অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী অভ্যত্থান পরবর্তী সময়ে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তারা পুনরায় সংঘবদ্ধ হচ্ছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পরাজিত শক্তির কোনো ইন্ধন থাকতে পারে। পুলিশের সাথে জনগণের যে গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি পূরণ করে জনগণের আরো কাছে যেতে হবে পুলিশের। গুরত্বপূর্ণ এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। এতে অপরাধীরা সংগঠিত হতে পারবে না।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের আরো সচেতন হতে হবে। পুলিশের টহল টিম বাড়াতে হবে। ডাকাতি রোধে কোন সড়কের বাস কোন সড়কে যাচ্ছে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে অনেক অপরাধ কর্মকাণ্ড কমে যাবে।”
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শরিফ বলেন, “ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে দিন দুইটি ও রাতে চারটি টহল টিম দায়িত্ব পালন করছে। আর যাতে কোন যানবাহনে ডাকাতি না হয় সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “প্রত্যেকটি ঘটনা গুরত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ২৮টি টিম অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ নত ই অপর ধ ন বল ন সড়ক র অপর ধ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।
তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।”
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে।
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
ঢাকা/এএএম/রফিক