সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে অপপ্রচার ও অপবাদ রটিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক সন্ধিক্ষণকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ১৫ দিন ধরে কর্মসূচি চালিয়ে আসা গণঅবস্থানকারীরা।

তাদের আশঙ্কা জুলাই বিপ্লবের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের আগেই সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন ও ভারতীয় আগ্রাসন ঘটানো হতে পারে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর দলগুলো নিষিদ্ধ করার দাবিতে গণঅবস্থান করে আসছে একাংশের শিক্ষার্থীরা। 

আরো পড়ুন:

নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে: সেনাপ্রধান

অপারেশন ডেভিল হান্ট: আরো গ্রেপ্তার ৫৮৫

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) গণঅবস্থানকারীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক ও গণঅবস্থানের সংগঠক আবদুল ওয়াহেদ, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান ও সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ।

লিখিত বক্তব্যে আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, দেশবাসী, অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনীকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই। সময় মতো সবাই সচেতন না হলে দেশ প্রতিবিপ্লবের চোরাবালিতে আটকা পড়বে এবং জনগণ ফের গণহত্যা ও গোলামির শিকার হবে।

সেনাবাহিনীর অবদান সম্পর্কে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় গণহত্যা চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। তবে সেনা সদস্যরা ছাত্র-জনতাকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানালে ৪৯ বছরের মাথায় দেশে ফের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের জন্ম হয়। 

জুলাই অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বর্ণনা করে ওয়াহেদ বলেন, সেনাবাহিনী ফ্যাসিস্ট হাসিনার কথামতো বন্দুক চালাতে অস্বীকার করে, বহু জায়গায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে গুলি করে এবং আন্দোলনরত জনগণকে সহায়তা করে বলেই গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। বাংলাদেশ নতুন স্বাধীনতা লাভ করে। 

“জুলাই গণহত্যা ও তার আগে ১৬ বছর সরাসরি জনগণকে হত্যা-নির্যাতনে সেনাবাহিনীসহ যেকোনো বাহিনীর সদস্যদের বিচার করার বিষয়ে জনগণের মধ্যে কোনো দ্বিধা-সংকোচ নেই, যদি-কিন্তু নেই। তবে কোনো সদস্যের ভূমিকার কারণে জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অবদানকে অস্বীকার, অবহেলা ও উপেক্ষা করার সুযোগ নাই।”

জুলাই অভ্যুত্থানের অর্জনে সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান রেখে ওয়াহেদ বলেন, “ফ্যাসিবাদ পতনের জন্য সেনাবাহিনীকে শোকরিয়া জানান। বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ বিপ্লবের পক্ষের গোটা সেনা নেতৃত্বের প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কোনো সংকোচ থাকা উচিত নয়।” 

“শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখতে সামাজিক মাধ্যমে ভূমিকা রাখা কিছু লোক, বিতর্কিত দালাল বুদ্ধিজীবী ও সেক্যুলার-বামপন্থি অ্যাক্টিভিস্টরা জুলাই বিপ্লবে সেনাবাহিনীর মহান ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তারা সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে টার্গেট করে মিথ্যাচার চালাচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে মূলত সেনাবাহিনীকে দুর্বল ও জনগণের প্রতিপক্ষ করার চেষ্টা চলছে,“ অভিযোগ করেন ওয়াহেদ।

তিনি বলেন, “আমাদের সুস্পষ্ট কথা হলো, জুলাই বিপ্লব-উত্তর উন্নত শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়তে হলে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে। জুলাই বিপ্লবে সেনাবাহিনীর যে বিশাল অবদান রয়েছে, তাকে স্বীকৃতি দিয়ে বিপ্লবী ছাত্রজনতার সংকল্প অনুযায়ী ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ বাস্তবায়নেও সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের অঙ্গীকার অনুযায়ী দেশের ‘সবকিছু নতুন করে গড়ে তুলতে’ সেনাবাহিনীর সর্বাত্মক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।”

এ দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিপ্লবের পর দেশ গড়ার দায়িত্ব ছাত্র-জনতা-সেনাবাহিনীসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণের। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “বিদেশি অপশক্তি ও তাদের দেশীয় তাবেদাররা ফ্যাসিবাদকে স্বাভাবিকীকরণ করতে চায়। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের হস্তক্ষেপের ঝুঁকিতে রাখতে, পুরোনো অনৈক্য ও হিংসা নবায়নের সুযোগ রেখে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দুর্বল করতে চায়। সর্বোপরি তাদের খায়েশ হলো বিপুল অর্থনৈতিক উন্নতি করার পরে যেন বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল ও নতজানু হয়ে থাকে।”

“মূলত তাদের ইন্ধনেই প্রধান প্রধান রাজনৈতিক পক্ষগুলো পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিতে বলছে এবং নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।” 

কিন্তু তারা যেভাবে নিয়মিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিরোধিতা করছে তাতে তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয় বলে মন্তব্য করেন ওয়াহেদ। 

তিনি বলেন, “বিশেষ করে এই আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে যে, দেশ কি আবারো ভুল পথে যাচ্ছে? যে ভুল ১৯৭৫ সালের সাতই নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের পরেও হয়েছিল। তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন না করে কিছু পরিমার্জন করে মুজিব প্রণীত সংবিধানই বহাল রাখেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফেরার পর স্বয়ং শহীদ জিয়া নিহত হন। এই দল জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিরোধীদলীয় নেতাকে হত্যা করেছে। সর্বশেষ শহীদ জিয়ার স্ত্রী ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমৃত্যু বন্দি অবস্থায় কাটানোর বন্দোবস্ত করেছিল।” 

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা ও কাঠামোকেও সমূলে বিলুপ্ত করতে হবে। একে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা, নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা বা অন্য কোনো অজুহাতে পুনর্বহাল বা নবায়ন করা যাবে না। বরং রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রশ্নকে একমাত্র প্রাধান্য দিয়ে সবার আগে জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে অস্পষ্টতা, দ্বিধা-সংকোচ ও কালক্ষেপণকে বাদ দিয়ে সর্বস্তরের নাগরিকের ঐক্য ও সংহতি গড়ে তুলতে হবে।”

এই ঐক্য ও সংহতির রূপরেখা কেমন হবে তা বিগত সাত মাসে দৃশ্যমান হয়েছে বলে তুলে ধরে ওয়াহেদ বলেন, “আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পুলিশ বাহিনী জনগণের প্রতিশোধের ভয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ফেলে আত্মগোপন করেছিল। তখন ছাত্র ও তরুণ সমাজ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণসহ জননিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে জননিরাপত্তা রক্ষা ও ফ্যাসিবাদীদের নানা উপাদান দিয়ে সৃষ্ট প্রতিবিপ্লবী আন্দোলন, বিশৃঙ্খলা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় কাজ করেছে। এক পর্যায়ে পুলিশ বাহিনীও কাজে ফিরেছে।” 

সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় পাঁচ বছর মেয়াদি জাতীয় সন্ধিক্ষণ ঘোষণা করেন গণঅবস্থানকারীরা। এটি অর্জন করতে ছয়টি বিষয় বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য মনে করছেন তারা। 

১। পুরোনো সংবিধান বাতিল করে ড. ইউনুসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি শাসিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সর্বাত্মক সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রদান করা।

২। একটি শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করা, যার চেয়ারম্যান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান সেনাপ্রধান হবেন। এই পরিষদে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান, পুলিশ প্রধান, গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক ও নাগরিকরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে পুরোনো সংবিধান বাতিল এবং ফ্যাসিবাদী দল ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

৩। নতুন সংবিধান প্রণয়নে জুনে গণপরিষদ গঠন ও নির্বাচন পরিচালনা এবং পরবর্তীতে দ্রুত সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা প্রদান তত্ববধান করা। 

৪। দেশের আর্থিক খাতের নিরাপত্তা তথা ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ, আমদানি-রপ্তানির লেনদেন সামরিক বাহিনীর মনিটরিং ও তত্ত্বাবধানে হওয়া।

৫। দেশের সকল উপজেলায় স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েন রাখা যেন সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি হামলাসহ জননিরাপত্তা-সংক্রান্ত ইস্যুতে তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবিরও সহায়তা নিতে হবে।

৬। সেনাবাহিনী, জনপ্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসর, দুর্নীতিবাজ ও দেশ বিরোধীদের চিহ্নিত করে তাদের শূন্যপদে সাবেক দেশপ্রেমিক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান করা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতা বলেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারী থেকে রাজু ভাস্কর্যে আমরা যে লাগাতার গণঅবস্থান করছি, তা পবিত্র রমজান মাসেও অব্যাহত থাকবে। তবে গণঅবস্থানকারীদের সিয়াম সাধনা ও এবাদতের কথা বিবেচনা করে গণঅবস্থান সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিনই আমরা গণইফতার আয়োজন করব, ইনশাআল্লাহ। ইফতারে আগ্রহীরা খাদ্যসামগ্রী উপহার দিতে পারবেন। সবাইকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও দোসর দলগুলোকে নিষিদ্ধ করতে গণঅবস্থানে সংহতি জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব ইসতিয়াক আহমেদ ইফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সানোয়ারা খাতুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান ফার্সি, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব ফরহাদ আহমদ আলী; জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক সাইয়্যেদ কুতুব, সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, ডা. মাসুম বিল্লাহ ও গালীব ইহসান; কেন্দ্রীয় সদস্য তৌহিদ তপু,আহম্মেদ সুমন,তামিম আনোয়ার, ওয়াসিম আহমদ, মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ, কায়েস আহম্মেদ, ওমর ফরুকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/সৌরভ/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅবস থ ন ন ষ দ ধ কর ছ ত র জনত হ দ বল ন র জন ত ক সরক র র র সদস য গণহত য জনগণ র ন র জন জনত র

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে: তারেক রহমান

শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ নিতে ওত পেতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, সরকারের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্তে দেশে গণতন্ত্রে উত্তরণের যাত্রাপথকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে সবাইকে বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।

ঢাকার সাভারে শ্রমিক-ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ এ ‘নারকীয় আশুলিয়া স্মরণে’ আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার বিকেলে সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সমাবেশে বলেন, জুলাই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে এই সাভার–আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। হত্যা করে শ্রমিকদের লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। লাশের সঙ্গে এমন বর্বরতা, লাশের সঙ্গে এমন নির্মমতা, মনে হয় কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে। ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্টের পতনের দিন, সাভার আশুলিয়ায় গণহত্যা চলেছিল, মানুষের ওপর গণহত্যা চলেছিল।

জনগণ একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ হটিয়ে রাষ্ট্র রাজনীতিতে জনগণের অধিকার, আইনের অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায়, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায় তাঁরা (শহিদেরা) আত্মত্যাগ করেছেন। আজ যদি শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষ জানতে চায়, সেই শহীদদের আত্মা যদি জানতে চায়, গণ–অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি শ্রমজীবী মানুষ শাহাদাত বরণ করেছে; কিন্তু বর্তমানে সরকারে ও প্রশাসনে শ্রমজীবী কর্মজীবী মানুষের অবস্থান কি? পলাতক ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্র সংস্কারের যে কর্মযজ্ঞ চলছে, সেখানেই বা তাদের প্রতিনিধিত্ব কোথায়?

তারেক রহমান বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে নির্বাচন। প্রতিটি নাগরিক যাতে নিজের কথা নিজে বলতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করার স্বার্থে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অগ্রাধিকার দেয়। স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন প্রতিটি স্তরে জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নিজের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেলে রাষ্ট্র ও সরকারে জনগণের ইচ্ছা প্রাধান্য পাবে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন, স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় সরকার—প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপি জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার পক্ষে। কিন্তু এসব নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার নির্ধারণে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারছে কি না, এটি একটি বিরাট প্রশ্ন এই মুহূর্তে জনগণের সামনে।

শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনাদের সন্তান, স্বজনের মৃত্যু দেশ এবং জনগণকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে। দেশ আপনার শহীদ সন্তানের কাছে ঋণী, প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সাভার আশুলিয়া কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক এলাকায় শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষের আত্মত্যাগের সম্মানে একটি বিশেষ স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।’

বুধবার বেলা তিনটায় আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকার দারুল ইহসান মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির এ জনসভা শুরু হয়। সভার শুরুতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। পরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণ–অভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের উপস্থিত পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট তুলে দেন।

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, এমন কিছু করবেন না, যাতে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়। ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না, যে অবস্থায় আবার সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা কোনো সুযোগ পায় দেশে ফিরে আসার।’

গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা ও আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আহত ও শহীদ, বিশেষ করে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দেবে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করবে। কিন্তু সেটি কতটুকু বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেটি আমি জানি না।’

ক্ষমতায় চিরদিন টিকে থাকার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্বরোচিতভাবে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। গোটা জাতি শেখ হাসিনার বিচার চায় বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন এবং সেখান থেকে অডিও–ভিডিও ভার্সনে এ দেশে আবার নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য, বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। গোপালগঞ্জে ইতিমধ্যে তাঁরা (আওয়ামী লীগ) সেটি তৈরিও করেছে। জাতিকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি), চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহপরিবার কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তমিজ উদ্দিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সহসভাপতি খন্দকার শাহ মইনুল হোসেন, জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান, সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান মোহনসহ সাভার ও ধামরাই উপজেলা এবং এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে: তারেক রহমান
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০ হাজার ছাড়াল
  • গণহত্যার বিচারের পর পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি রেজাউল করীমের
  • শেখ হাসিনা যে অপরাধ করেছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও তা করে নাই: আসিফ নজরুল
  • সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
  • গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: বলছে ইসরায়েলভিত্তিক দুই মানবাধিকার সংস্থা
  • ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনই বলছে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’
  • থাইল্যান্ডে ব্যস্ত বাজারে বন্দুক হামলায় নিহত ৫, হামলাকারীর আত্মহত্যা