রোহিঙ্গা ও মাদককে সমস্যা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাধার পরও ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা নতুন করে ঢুকে পড়েছে। অনেক সময় মানবিক কারণে বাধা দেওয়া যায় না। সঙ্গে বিদেশিদের একটা চাপ থাকে। এ জন্য আমরাও তাদের সাহায্য-সহযোগিতা বাড়াতে বলেছি। আর এটাও তো ঠিক, যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তারা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একটা জায়গায় আটকা।

গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের প্রশিক্ষণ মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে নতুন সৃজিত উখিয়া ব্যাটালিয়নের (৬৪ বিজিবি) উদ্বোধনের পর এসব কথা বলেন তিনি। 

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষিত। এখানে কোনো সমস্যা নেই। তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার দখল করে আছে আরাকান আর্মি। ভবিষ্যতে এটি কার হবে– মিয়ানমার নাকি আরাকান আর্মির, তা বলা মুশকিল। সেজন্য বিজিবি উভয় পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

তিনি আরও বলেন, ৬৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে আরও চারটি ব্যাটালিয়ন যুক্ত হলো। এতে বিজিবির সক্ষমতা কিছুটা বৃদ্ধি পেল। আমরা চেষ্টা করছি আরও বাড়ানোর জন্য। কারণ, পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় আমাদের বিজিবির সক্ষমতা আরও বাড়ানো দরকার।

উপদেষ্টা বলেন, এই এলাকা দিয়ে সবচেয়ে বেশি মাদক চলে আসে। রোহিঙ্গা সমস্যা তো রয়েই গেছে, মাদক চোরাচালান বন্ধে এখানে এই নতুন ব্যাটালিয়ন খুবই দরকার ছিল। আশা করি, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রয়োজনে আমরা আরও যদি ব্যাটালিয়ন দরকার হয়, তবে ভবিষ্যতে করব। তবুও বর্ডারে যেন নিরাপত্তা ও মানুষ শান্তিতে থাকে, সেটা আমরা নিশ্চিত করব।

বর্ডারের মানুষ আতঙ্কে রয়েছে– বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডারে নিরাপত্তা প্রশ্নে আরাকান আর্মি নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখানে তো সত্যিই সমস্যা একটা আছে। কারণ, অন্য দেশ মিয়ানমার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তার পরও কিন্তু সীমান্ত হত্যার মতো ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এটা কমানোর জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

‘ভারতীয়রা আইন না মানলে কঠোর হবে বিজিবি’
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সীমান্ত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রাখলে আরও কঠোর অবস্থানে যাবে বিজিবি। আরেক প্রশ্নের জবাবে এমন হুঁশিয়ারি করেন বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, সীমান্ত হত্যা কোনোভাবে কাম্য নয়। ভারতীয় যারা অনুপ্রবেশ করেন, তাদের সুন্দরভাবে নিয়মের মধ্যে গ্রেপ্তার করে হস্তান্তর করি আমরা, সেটা কতটুকু আর করা যাবে? 

সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনার বিষয়টি ১ নম্বরে ছিল জানিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবক নিহতের ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত বিএসএফ সদরদপ্তর থেকে শুরু করে যে জায়গায় হত্যা হলো, সব জায়গায় বিজিবির পক্ষ থেকে অত্যন্ত জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনের পরে এ ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। দুঃখজনক হলেও সীমান্ত লাইন থেকে ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে যাওয়ার চেষ্টা না করে তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমরা। তবে আমরা জোরালো, শক্ত ও কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানানোর পরে কিছু ছবি পেয়েছি। সেখানে সংঘবদ্ধ ১৫-২০ জন অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করছিল। তখন বিএসএফ বাধা দেওয়ার পর দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাত হয়।

বিজিবিপ্রধান বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ হোক আর যাই হোক, হত্যা কোনো চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে না। আরও একটি (হত্যা) যদি হয়, আমরা পরবর্তী সময় আরও কঠোর অবস্থানে যাব। একই সঙ্গে সবারই চেষ্টা থাকবে অবৈধভাবে কেউ যাতে ওই দিকে (ভারতে) না যায়। 

অপরাধ বিবেচনায় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ: উপদেষ্টা 
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, দলীয় নয়, অপরাধ বিবেচনায় পুলিশ ব্যবস্থা নেবে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আমরা কোনো দলের বদান্যতায় কাজ করছি না। দেশের কল্যাণে যা যা করণীয়, তাই করা হচ্ছে। পুলিশের দপ্তর থেকে বলে দেওয়া হয়নি, কোনো দলের লোকজনকে সহানুভূতি দেখাতে। কোনো দলের নেতাকর্মীরা দখল বা অন্য কোনো অপরাধে জড়ালে প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়াকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। এক সংবাদকর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিকে ফোনে এ নির্দেশনা দেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে ওই সভায় শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি); সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএন, আনসার, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, পাসপোর্ট ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স বর ষ ট র উপদ ষ ট ব এসএফ বর ড র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁয় ১০ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ

নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। 

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভোরে ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন সীমান্ত পিলার ২৫৬/৭ এস কাছ দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হলে বিজিবির সদস্যরা তাদেরকে আটক করেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ এবং আটজন নারী। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন পত্নীতলা ১৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।

আরো পড়ুন:

গাংনী সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ

বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ

আটকরা হলেন—আছমা বেগম (৪০), খাদিজা বেগম (৩৪), পাখি বেগম (২৪), রুমা বেগম (২৫), কাকলি আক্তার (২৭), রুজিনা আক্তার (৩৩), কোহিনুর বেগম (২৬), নাসরিন বেগম (৩৩), মঞ্জুরুল ইসলাম (৩৬), সুমন হোসেন (২৭)। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের নাগরিক।

বিজিবি জানিয়েছে, আগ্রাদ্বিগুন বিওপির টহল কমান্ডার জেসিও সুবেদার মো. জিহাদ আলীর নেতৃত্বে একটি টহল দল সীমান্তের শূন্য লাইন থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মহেষপুরে ওই ১০ জনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আটক করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতে যান। মুম্বাই শহরে পুরুষ দুজন রাজমিস্ত্রি হিসেবে এবং নারী আটজন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে তাদেরকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। গত ২৯ জুলাই ভারতের হরিবংশীপুর বিএসএফ ক্যাম্পে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে বিএসএফ ওই ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিলে বিজিবি টহল দল তাদের আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা/সাজু/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চুয়াডাঙ্গায় বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক, ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
  • দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ 
  • নওগাঁয় ১০ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ
  • নওগাঁর সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • পঞ্চগড়ের দুই সীমান্ত দিয়ে আরও ১৭ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • গাংনী সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ
  • চোরাচালানে গিয়ে বিএসএফের হাতে আটক, ফিরিয়ে এনে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিজিবি
  • মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ