প্রাণ ফিরে পেলো গিমাডাঙ্গা-টুঙ্গিপাড়া খাল
Published: 2nd, March 2025 GMT
গত ৪ বছর ধরে কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিপূর্ণ ছিল গিমাডাঙ্গা-টুঙ্গিপাড়া খাল। এতে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে পঁচে যাওয়ায় দুর্গন্ধে চরম ভোগান্তিতে পড়েছিল কয়েক গ্রামের মানুষ। ওই খালপাড়ের আশেপাশে রয়েছে অন্তত ১০টি মসজিদ। পঁচা পানির দুর্গন্ধে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও অসুবিধায় ছিলেন।
সাধারণ মানুষ ও মুসুল্লিদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে চার বছর পর গিমাডাঙ্গা-টুঙ্গিপাড়া খালের কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিস্কার করা হয়েছে। এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে খালটি।
রবিবার (২ মার্চ) গিমাডাঙ্গা-টুঙ্গিপাড়া খালের দুই কিলোমিটার এলাকার কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিস্কার করে টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
গিমাডাঙ্গা-টুঙ্গিপাড়া খালটির সাথে বাঘিয়ার নদীর সংযোগ রয়েছে। নদী থেকে কচুরিপানা ও আবর্জনা খালে ঢুকে জমাট বেধে ছিল দীর্ঘদিন। তাই ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে খালটি। পানি কালো হওয়ায় গোসল করা তো দূরের কথা, অজু করতেও পারত না মুসুল্লিরা। এছাড়া খালপাড়ের কয়েক গ্রামের মহিলারা থালা বাসনও ধুতে পারত না।
টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার প্রশাসক মো.
গিমাডাঙ্গা গ্রামের লিটু শেখ ও টুঙ্গিপাড়া গ্রামের ছালু কাজী বলেন, “খালপাড়ের পাশ দিয়ে প্রায় ১০টি মসজিদ রয়েছে। কিন্তু খাল ব্যবহারের অনুপোযোগী থাকায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অজু করতে পারতেন না। তাই আমরা কয়েকজন পৌর প্রশাসকের কাছে মৌখিকভাবে জানাই। তিনি তখন প্রথম রোজার মধ্যে খাল পরিস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রথম রোজার মধ্যে খাল পরিস্কার করায় পানি প্রবাহ শুরু হয়েছে। এখন থেকে আর নামাজ আগে অজু করতে কষ্ট হবে না।”
টুঙ্গিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হিমেল কাজী বলেন, “খালের দুই পাশ সুন্দরভাবে বাঁধাই করা থাকলেও খালের পানি কেউই ব্যবহার করতে পারত না। কারণ, কচুরিপানা ও আবর্জনা খালটির সৌন্দর্য নষ্ট করে দিয়েছিল। এখন পরিস্কার হওয়ার খালটি যেন প্রান ফিরে পেয়েছে। খালপাড়ের বাসিন্দারা বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি গোসল ও অজু করতে পারবেন।”
টুঙ্গিপাড়া পৌর প্রশাসক মো. মঈনুল হক বলেন, “গিমাডাঙ্গা-টুঙ্গিপাড়া খালটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি নিয়ে দুর্ভোগের কথা স্থানীয় মুসল্লিদের মাধ্যমে জানতে পেরে পরিস্কার অভিযান শুরু হয়। এখন কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিস্কারের মাধ্যমে খালটির পানি জনগণ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।”
জনসেবায় উপজেলা প্রশাসনের এমন কাজ অব্যাহত থাকবে বরে জানান তিনি।
ঢাকা/বাদল/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।