গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করল ইসরায়েল
Published: 2nd, March 2025 GMT
গাজায় সব মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। রোববার দেশটি হুঁশিয়ার দিয়ে বলেছে, হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির নতুন প্রস্তাব মেনে না নিলে ‘আরও পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। তাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় রাজি হতে হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তারা বলেছে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া নির্যাতনের এক সহজ উপায়, যুদ্ধাপরাধ ও চুক্তির (যুদ্ধবিরতি) ঘোরতর লঙ্ঘন। এই ঘটনায় মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তাও চেয়েছে হামাস।
নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রথম ধাপের বন্দিবিনিময় চুক্তি শেষ হয়েছে এবং হামাস উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আজ (রোববার) সকাল থেকে গাজায় সব ধরনের পণ্য ও সরবরাহ প্রবেশ বন্ধ থাকবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এক মাসের কিছু বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছিল। কিন্তু রোববার সকাল থেকে গাজায় আর কোনো পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করেনি। এতে গাজায় হঠাৎ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। সেখানকার মানুষ ময়দা, রুটি যা পারছে তাই খুঁজছেন। যেন সারাদিন রোজা রাখার পর অন্তত ইফতার করা যায়। পণ্য সরবরাহ বন্ধ করায় আবারও না খেয়ে থাকায় শঙ্কায় পড়েছেন গাজাবাসী।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কোনো ঐকমত্য না হলেও, এখনই হামলায় যাচ্ছে না তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মেনে রমজান মাসে যুদ্ধ বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তবে হামাস গাজার যুদ্ধবিরতির চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ৪০০ জনে পৌঁছেছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
সাইপ্রাসে গত সপ্তাহে উন্নতমানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। গত ডিসেম্বর থেকে এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় চালান এটি। তুরস্কের সঙ্গে ক্রমে উত্তেজনা বেড়ে চলার মধ্যে সাইপ্রাসকে এ ব্যবস্থায় সজ্জিত করল ইসরায়েল। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, লিমাসলের বন্দর দিয়ে একটি ট্রাক ‘বারাক এমএক্স’ ব্যবস্থার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে। এ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ১৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
সাইপ্রাসের সংবাদমাধ্যম রিপোর্টার জানিয়েছে, বারাক এমএক্স ব্যবস্থার সরবরাহ এখন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরই এটি আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) বহিঃসম্পর্ক বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়। বারাক এমএক্স তৈরি করেছে ইসরায়েলি সংস্থাটি।
আরও পড়ুনইসরায়েলের আগ্রাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে তুরস্ক৩০ আগস্ট ২০২৫গাল লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে সমন্বয় করে এ দ্বীপের উত্তর অংশ মুক্ত করার বিকল্প পরিকল্পনা করতে হবে। এতে তুরস্কের পুনরায় সেনা পাঠানোর পথ বন্ধ হবে, উত্তর সাইপ্রাসের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হবে, গোয়েন্দা ও কমান্ড সেন্টারগুলো গুঁড়িয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তুর্কি বাহিনী সরে যাবে। এর মাধ্যমে সাইপ্রাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
গ্রিসের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্য নিয়ে সাইপ্রাসে এক অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সেখানে আক্রমণ চালায় তুরস্ক। সেই থেকে দ্বীপটি দুই ভাগে বিভক্ত—দক্ষিণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র ও উত্তরে তুরস্ক-সমর্থিত উত্তর সাইপ্রাস, যা শুধু আঙ্কারার স্বীকৃত।
এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়।এখন পর্যন্ত আঙ্কারা নতুন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বারাক এমএক্সে রয়েছে উন্নত নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা। এর থ্রিডি রাডার সর্বোচ্চ ৪৬০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কার্যকর, যা দক্ষিণ তুরস্কের একটি বড় অংশের আকাশসীমা আয়ত্তে আনতে পারে।
আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫১৯৯৭ সালে দক্ষিণ সাইপ্রাস রাশিয়ার তৈরি দুটি এস–৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করলে তুরস্কের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। সে সময় আঙ্কারা পুরোদমে সামরিক জবাব দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সে সংকট মেটে গ্রিস ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে ও সাইপ্রাস বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে শুরু করলে।
এ ব্যবস্থা এস-৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস-৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।আরদা মেভলুতোগলু, তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকতুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলেন, এই ব্যবস্থা এস–৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস–৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।
ইসরায়েলের আশদোদে আইএআই বারাক এমএক্স বিমান প্রতিরক্ষা লঞ্চার। ১২ জুন ২০২৫