পবিত্র রমজান হলো আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের মাস। এই মাসে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ অবারিত করেন। রমজান মাসে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের কথা সবাই জানে, তবে অনেকেই হয়ত ভুলে যান যে, এই মাসের মূল্যবান সময় যারা কাজে লাগাতে পারে না তাদের জন্যও রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। 

হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.

) সেসব মানুষের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ করেছেন যারা রমজান মাসে তাদের গুনাহ ক্ষমা করাতে পারেনি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বদদোয়ার পর জিবরাইল (আ.) আমিন বলেছেন। সুতরাং এই বদদোয়া প্রতিফলিত হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। তাই মুমিনের উচিত রমজানে জীবনের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার চষ্টো করা। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তিগফার করা। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) পাপমুক্ত হওয়ার পথও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে সাওয়াবের নিয়তের রমজানে রাত্রী জাগরণ করে (তারাবি ও তাহাজ্জুদ) আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব পাপ মার্জনা করে দেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস :  ২২০২)

আরো পড়ুন:

মাহে রমজানের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য ও ইফতারের মাসয়ালা

শিশু রোজা রাখতে চাইছে, কী করবেন

হাদিসে ব্যবহৃত ঈমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (সাওয়াবের আশা) শব্দদ্বয়ের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সব অঙ্গীকারকে সত্যজ্ঞান করা এবং প্রতিটি কাজে আল্লাহর কাছে প্রতিদান প্রত্যাশা করা; একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশা করা, সবকাজের আগে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়টি বিবেচনা করা। 

ঈমান ও ইহতিসাবের বিশ্বাস মানুষের আমলের মূল্য বৃদ্ধি করে। বিশ্বাসের দৃঢ়তার সুফল হলো তা মানুষকে আরশে আজিম পৌঁছে দেয়। আর কারো ভেতর এই গুণের অভাব থাকলে তার যাবতীয় আমল ও প্রচেষ্টা অর্থহীন হয়ে যায়। বর্তমানে মুসলমানদের ভেতর যেন আমলের প্রতি অনাগ্রহ দেখা যায়, তেমনি যারা আমল করেন তাদের কেউ কেউ ঈমান ও ইহতিসাব সম্পর্কে ধারণা রাখে না। তাদের আমলগুলো হয় উদ্দেশ্যহীন ও আশাহীন। এটা অনেকটা স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে ভেসে যাওয়ার মতো। আমরা ওজু করি কিন্তু নিয়ত করি না। অথচ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করলে সাওয়াব ও প্রতিদান বেড়ে যায়। একইভাবে আমরা নামাজ আদায় করি কিন্তু তাতে বিশ্বাস ও প্রতিদানের আশা থাকে না, মনে হয় যেন সমাজের অন্য ১০ জনের দেখাদেখি সব করি। 

রমজান মাসে আমলের পরিবেশ তৈরি হয়। মানুষ অন্য সময়ের তুলনায় অধিক পরিমাণ ইবাদত করতে আগ্রহী হয়। যারা সারা বছর মসজিদে যায় না তারা মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করে, দিন-রাতের কোনো এক সময় কোরআন তিলাওয়াত করে, দান-সদকার পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। এখন দেখার বিষয় হলো আমার এই আমলগুলো নিস্ফল হয়ে যাচ্ছে কি না? বহু রোজাদার কেবল সামাজিক লজ্জার ভয়ে রোজা রাখে। এমন রোজা ও আমলে কোনো প্রাণ থাকে না, এর কোনো বিনিময়ও আশা করা যায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সমস্ত আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১)

রোজা ও সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা। তার সন্তুষ্টির জন্য যেসব বিষয় তিনি ত্যাগ করতে তা ত্যাগ করা। রোজাদার যখন বিশ্বাস করবে আল্লাহ যা বলেছেন সত্য বলেছেন, তিনি আমাকে প্রতিদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, আমি অবশ্যই তার সেই প্রতিদান পাবো, তখন সে আত্মিক প্রশান্তি খুঁজে পাবে। আল্লাহর দরবারেও এর মূল্য বেড়ে যাবে।

কোনো ইবাদত কবুল হওয়ার প্রমাণ হলো, তা আদায়ের সময় অন্তরে বিনয় ও আত্মনিবেদনের আগ্রহ তৈরি হওয়া। বিপরীতে যদি ইবাদতকারীর ভেতর অহমিকা, আত্মমুগ্ধতা ও আত্মপ্রদর্শনের ভাব জাগ্রত হয়, তবে ধরে নিতে হবে আমল কবুল হয়নি। তাতে ত্রুটি আছে। আমলের এই ত্রুটি দূর হবে ঈমানের দৃঢ়তা ও ইখলাসের পূর্ণতার মাধ্যমে। এক ব্যক্তি বলছিলেন, ইফতারের অপার্থিব প্রশান্তি লাভের জন্য আমি রোজা রাখি। অথচ আল্লাহর প্রতি তার বিশ্বাস নেই। এই ব্যক্তির রোজা পরকালে কোনো কাজে আসবে না। সুতরাং রমজান মাসের কল্যাণ, দয়া, অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভের জন্য দিনে কয়েকবার নিয়ত বিশুদ্ধ করে নেওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয়টি সবসময় স্মরণে রাখা আবশ্যক। 

রোজার প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহভীতির মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণ অর্জন। কেননা রোজা মানুষের রিপু ও প্রবৃত্তি দুর্বল করে। ফলে মানুষের ভেতর দ্বিন পালনের আগ্রহ তৈরি হয়, ইবাদতে তৃপ্তি এনে দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল পূর্ববর্তীদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

তাকওয়া সাধারণ অর্থ আল্লাহভীতি। বুজুর্গ আলেমরা এর অর্থ করেন ‘বিবেচনা' দ্বারা। অর্থাৎ এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া যে আল্লাহ কোন কাজে সন্তুষ্ট হবেন এবং কোন কাজে অসন্তুষ্ট হবেন, আল্লাহ কোন কাজ বৈধ করেছেন এবং কোন কাজ অবৈধ করেছেন। রমজানে দীর্ঘ এক মাস যখন মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়গুলো বিবেচনা করে চলবে, পাপ-পঙ্কিলতা ত্যাগ করবে, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করবে, তখন তা তার অভ্যাসে পরিণত হবে। কেউ যদি এই পথ অনুসরণ না করে তবে সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য অর্জিত হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ঘোষণা হলো ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)

সুতরাং আমাদের উচিত, রমজানের রোজাসহ অন্যান্য ইবাদতগুলো ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে করা। যেন তা পরকালে আমাদের পাথেয় হিসেবে গণ্য হয়। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক: মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
 

শাহেদ//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন রমজ ন ম স ত য গ কর ত হওয় র র জন য কর ছ ন বল ছ ন আল ল হ আমল র

এছাড়াও পড়ুন:

বিবাহবিচ্ছেদের পর আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন চাহাল

এ বছরের মার্চে পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন ভারতের লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল। ইউটিউবার–অভিনেত্রী ধনশ্রী বর্মার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁর। ভারতের ইউটিউবার রাজ শামানির সঙ্গে পডকাস্টে সংসার ভাঙা নিয়ে কথা বলেছেন চাহাল।

ভারতের হয়ে ২০২৩ সালে সর্বশেষ খেলা এই লেগ স্পিনার জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরেই তাঁর ও ধনশ্রীর মধ্যে সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছিল না। তবু তাঁরা এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগপর্যন্ত ব্যক্তিগত জীবনের ঝামেলা সামনে নিয়ে আসেননি। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যান এবং একপর্যায়ে আত্মহত্যা করার কথাও ভাবেন।

আরও পড়ুনকাঁধের চোটে ভারতের বিপক্ষে আর খেলতে পারবেন না ওকস১ ঘণ্টা আগে

ভারতের হয়ে ৭২ ওয়ানডে ও ৮০ টি–টোয়েন্টি খেলা চাহালের কাছে রাজ শামানি জানতে চেয়েছিলেন, ঠিক কী কারণে তাঁদের সম্পর্কটা ভেঙে গেল? ৩৫ বছর বয়সী চাহালের উত্তর, ‘বেশ কিছুদিন ধরে সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা ব্যাপারটা সামনে আনব না।’

২০১৬ সালের জুনে ভারতের হয়ে অভিষেক চাহালের। চার বছর পর ধনশ্রীকে বিয়ে করেন তিনি। চাহাল জানিয়েছেন, জাতীয় দলে হয়ে খেলায় তাঁর ব্যস্ত হয়ে পড়া এবং ধনশ্রীরও নিজ ক্যারিয়ার নিয়ে মনোযোগী হয়ে পড়ায় কেউ কাউকে সময় দিতে পারেননি। সাংসারিক ঝামেলার এটাই মূল কারণ বলে মনে করেন চাহাল।

যুজবেন্দ্র চাহাল ও ধনশ্রী বর্মা

সম্পর্কিত নিবন্ধ