রাজধানীর গুলশানের একটি বাসায় মঙ্গলবার রাতে হানা দিয়েছিল একদল বিশৃঙ্খল জনতা (মব)। এর নেতৃত্বে ছিলেন জাতীয়তাবাদী চালক দলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খন্দকার (৪৮)। তিনিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে তিনটি গহনা জব্দ করা হয়েছে।

অভিযুক্তদের দাবি, বাড়িটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের। তানভীর সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি)। সেখানে বিপুল অর্থ, অবৈধ অস্ত্র ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে– এমন অভিযোগে তারা বাসায় হানা দেন।

স্থানীয়রা জানান, গুলশান ২-এর ৮১ নম্বর সড়কের ৮/আই কনকর্ড কটেজের চারতলার ফ্ল্যাটের মালিক প্রয়াত রহমান শরীফ। তাঁর মেয়ের সঙ্গে তানভীর ইমামের বিয়ে হয়েছিল। ২০০১ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে।

গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গুলশানের ওই বাসায় অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের দোসরদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে– এমন তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে দরজা ভেঙে ‘তল্লাশি’র নামে ২০ থেকে ২৫ জন ঢুকে পড়ে। বাসাটি তছনছ, ভাঙচুর ও লুটপাটের চেষ্টা করে তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মর্মে আবারও সতর্ক করছে, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। কোথাও কোনো অপরাধ ঘটলে যেন থানাকে জানায়। সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানিয়েছে, তানভীরের সাবেক স্ত্রী ওই বাসায় থাকেন। আওয়ামী লীগের লোকজন অবস্থান করছেন– এমন অভিযোগে সোমবার রাত ১০টার দিকে ৪০ থেকে ৫০ জন ওই বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। তাদের সঙ্গে পুলিশ ছিল। পরে পুলিশসহ চারজন ওই বাসায় ঢোকে। কিন্তু কাউকে না পেয়ে পুলিশ এবং তারা ফিরে যায়। পরদিন মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে জুয়েল খন্দকারের নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জন ফের বাড়িটির সামনে জমায়েত হয়। নিরাপত্তা কর্মী বাড়ির প্রধান ফটক খোলেননি। কয়েকজন দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে তালা ভাঙে। এর পর সবাই ঢুকে চার তলায় যায়। তানভীরের সাবেক স্ত্রী তখন বাসায় ছিলেন না। কেয়ারটেকার ও চালক আব্দুল মান্নান এবং দু’জন গৃহকর্মী বাসায় ছিলেন। দরজা ভেঙে জুয়েল খন্দকার ও তার লোকজন ভাঙচুর চালায়। আলমারি থেকে শুরু করে সবকিছু তছনছ ও ভাঙচুর করে। স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান জিনিস লুট করে। ৯৯৯-এ খবর পেয়ে গুলশান থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সেখান থেকে জুয়েল ও তাঁর ছেলে শাকিল খন্দকারসহ (২৪) তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্য ব্যক্তির নাম শাকিল আহম্মেদ (২৮)।

বাসার কেয়ারটেকার ও গাড়িচালক আব্দুল মান্নান বলেন, রাতে লোকজন দরজার ছিটকিনি ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়ে। তারা পুরো বাসা তছনছ করে। লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় তিনি গতকাল ওই তিনজনসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৪-১৫ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়েছে, আলমারি ভেঙে দুটি স্বর্ণের চেন ও একটি আংটিসহ চারটি গহনা লুট করে আসামিরা।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মোটরচালক দলের সভাপতি সেলিম রেজা বাবু বলেন, জুয়েল খন্দকার একসময় মোটরচালকদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি কিছু লোক নিয়ে চালক দল গঠন করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার তারেক মাহমুদ জানান, শাকিল আহম্মেদ এক সময় ওই বাসার কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি বাড্ডার বাসিন্দা জুয়েল খন্দকারকে তথ্য দেন, তল্লাশি চালালে ২০০-৩০০ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে। মূলত লুটপাটের উদ্দেশে তারা ওই বাসায় ঢুকেছিলেন। তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গুলশান থানার ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ওই ব স য় ত নজনক

এছাড়াও পড়ুন:

কর্মক্ষেত্রে বুলিং: শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

কর্মক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির প্রতি অন্য সহকর্মী দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে ও নিয়মিতভাবে খারাপ আচরণ করাকে কর্মক্ষেত্রে বুলিং অথবা উৎপীড়ন বলে। এটি কর্মক্ষেত্রের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে, কর্মীর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়; কর্মীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে।

প্রকারভেদ

কর্মক্ষেত্রে বুলিং বিভিন্ন রকম হয়—

মৌখিক বুলিং: গালিগালাজ, অপমানজনক মন্তব্য, সবার সামনে ছোট করা, বিদ্রূপ করা।

শারীরিক বুলিং: মারামারি, ধাক্কা দেওয়া অথবা শারীরিকভাবে আঘাত করা।

সাইবার বুলিং: অনলাইনে বা সামাজিক মাধ্যমে অপমানজনক বার্তা পাঠানো, মোবাইলে ফোন করে খারাপ ব্যবহার করা।

কেন করা হয়?

এই উৎপীড়নের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে—

কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতা জাহির করা।

সহকর্মীর প্রতি ঈর্ষা।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সামনে নিজেকে জাহির করার ইচ্ছা।

কর্মীর পারিবারিক অথবা মানসিক সমস্যা; যা কর্মক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।

কর্মীর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

বুলিং কর্মীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এর কারণে অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি চাকরি ছেড়ে দেওয়া, অনেক সময় আত্মহত্যাও করতে পারেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

ডিপ্রেশন বা হতাশা

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা

ইনসমনিয়া বা ঘুম কম হওয়া

আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া

আত্মহত্যার প্রবণতা

শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া

ওজন বেড়ে যাওয়া

হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া

মানসিক চাপ ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগকে অনিয়ন্ত্রিত করে দেয়।

প্রতিরোধের উপায়

ঊর্ধ্বতন নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার কাছে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বলা।

প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

ডা. নাজমুল হক মুন্না সহকারী অধ্যাপক (নিউরোলজি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কর্মক্ষেত্রে বুলিং: শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব