বিয়াম ভবনে বিস্ফোরণ এখনও রহস্যে ঘেরা
Published: 6th, March 2025 GMT
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বিসিএস প্রশাসন কল্যাণ সমিতি (বিয়াম ফাউন্ডেশন) ভবনে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এখনও রহস্যে ঘেরা। সেদিন প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে দগ্ধ গাড়িচালক ফারুক মীর (৪০) বুধবার বিকেলে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি দগ্ধ হন। একই ঘটনায় দগ্ধ হয়ে সেদিনই মারা যান বিয়ামের অফিস সহকারী আবদুল মালেক খান।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক ছালেহ্ উদ্দিন সমকালকে বলেন, সেখানে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে সেটি এসি বিস্ফোরণ, নাকি অন্য কিছু তা তদন্তের পর বলা যাবে। প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো আলামত পায়নি ফায়ার সার্ভিস।
পুলিশ কর্মকর্তারা এখনই সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে রাজি নন। হাতিরঝিল থানার ওসি মোহাম্মদ রাজু জানান, সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন একজনকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত চলছে।
বিস্ফোরণের দিন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এসি বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ড। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা। তবে পরে বলা হয়, এসি বিস্ফোরিত হয়েছে নাকি অন্য কোনো ঘটনা, তা তদন্ত শেষে বলা যাবে।
এরই মধ্যে বিয়াম বিবৃতিতে জানায়, বিস্ফোরণের আগে রাত আড়াইটার দিকে মাস্ক ও ক্যাপ পরা এক যুবক ভবনে ঢোকেন, যা সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। বিস্ফোরণের পর তাকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। সার্বিক পর্যবেক্ষণে তাদের ধারণা, এটি পরিকল্পিত নাশকতা।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান বলেন, ফারুকের শরীরের ৪৭ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় শুরু থেকেই আশঙ্কাজনক ছিলেন। বুধবার তাঁর আরও অবনতি হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে বিকেল ৪টার দিকে মৃত্যু হয়।
ফারুকের ছোট ভাই তোফায়েল মীর জানান, তাদের বাড়ি ভোলার দক্ষিণ আইচা থানার নজরুল নগর গ্রামে। বাবার নাম মফিজ মীর। তার ভাই মাস্টার রোলে বিয়াম কার্যালয়ে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা মোশারফ হোসেনের গাড়িচালক ছিলেন। ফারুক বিয়াম ভবনেই থাকতেন। আগে তিনি প্রায় ১৫ বছর ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গাড়িচালক ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ফারজানা আক্তার ফাহিমা, এক মেয়ে ও দুই ছেলে গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টার দিকে বিয়াম ভবনের পঞ্চমতলায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনাকে বোমা হামলা দাবি করে ১ মার্চ বিবৃতি দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে ‘ভুল তথ্যের ভিত্তিতে বিবৃতি’ দেওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না
জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।
আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।
লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।
তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।