বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা। স্টেডিয়াম উদ্বোধনের অতিথিসহ অন্যরা মাঠে ঢুকে মূল মঞ্চের দিকে যান। প্রায় শেষের দিকে ধীরে ধীরে হেঁটে মাঠে প্রবেশ করেন রোকেয়া খাতুন। একটু যেতেই ডান পাশে রাখা একটা বিলবোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখছিলেন। মুখ থেকে আবেগাপ্লুতভাবে বলে উঠলেন, ‘আবরার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমাকে ডাকছে বাবু।’

রোকেয়া খাতুন বুয়েটে ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে নিহত আবরার ফাহাদের মা। আজ বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ায় ছেলের নামে শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করা হয়েছে। আবরারের বাবা মো.

বরকত উল্লাহ স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

রোকেয়া খাতুন যখন মঞ্চের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী তাঁর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, কতজন আসামি পলাতক? জবাবে রোকেয়া খাতুন জানান, তিনজন আসামি আগে থেকেই পলাতক। নতুন করে এক আসামি জেল থেকে পালিয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের রায় কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।

ছেলের নামে স্টেডিয়ামের নামকরণের ব্যাপারে জানতে চাইলে রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘যখন আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তখন আইন, প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক, প্রত্যেক পেশাজীবী যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সে কারণে আজকে আবরারকে স্মরণে রাখার জন্য এটা হয়েছে। সবার প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘আবরারকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অপবাদ দিয়ে থাকে। সেটা যেন আর কেউ না করে।’ রোকেয়া খাতুন মূল মঞ্চে বসলেও বক্তব্য দেননি।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে তিনি নিহত হন। এ ঘটনায় তাঁর বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছায়, যেটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শেষ হয়। মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন হাইকোর্ট। এখন যেকোনো দিন রায় ঘোষণা হতে পারে।

গত সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জানান, আবরার ফাহাদ এবার মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবকে এখনও দেশের সবচেয়ে বড় তারকা মানেন তামিম

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে মুখ খুলেছেন তামিম ইকবাল। সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তারকা খ্যাতি বা ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এই দুই তারকার দূরত্বের পেছনে অন্য কারণ কাজ করেছে। তবে সেই দূরত্ব ঘোচানোর জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলেও আক্ষেপ করেছেন তিনি।

তামিম বলেন, ‘অনেকে বলে, কে কার চেয়ে সেরা। কার এনডোর্সমেন্ট বেশি। এগুলো কিছুই আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করেনি। আমি সব সময় বলেছি, বাংলাদেশের স্পোর্টসে সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব। আমি নিজেই যখন এটা বলি, তখন তারকা খ্যাতি সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে না।’

তিনি জানান, বিসিবির পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হলে সাকিব ও তার মধ্যকার দূরত্ব কমত। ‘তারা আলাদাভাবে কথা বলেছেন, কিন্তু দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেননি’, বলেন তামিম।

তামিম আরও বলেন, অধিনায়ক থাকার সময় সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে তিনি নিজেই চেষ্টা করেছেন। যদিও সে চেষ্টা তখন সফল হয়নি, ভবিষ্যতে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা এখনও তিনি দেখেন।

এমনকি নিজের অসুস্থতার সময় সাকিবের সহানুভূতিশীল আচরণের কথাও কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করেন তামিম। বলেন, ‘আমার অসুস্থতার সময়ে সাকিব তার ফেসবুকে দোয়ার অনুরোধ করেছিল। তার বাবা-মা হাসপাতালে আমাকে দেখতে গিয়েছেন। আমরা দু’জনই পরিণত। সামনাসামনি হলে এবং নিজেদের মধ্যে কথা হলে সম্পর্ক উন্নত হতে পারে।’

তামিমের এই মন্তব্যেই বোঝা যায়, ব্যক্তিগত বিরোধ থাকলেও তামিম এখনও চান সাকিবের সঙ্গে তার সম্পর্কটা সুস্থতায় ফিরুক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ