ইরানের সেনাবাহিনী এবং ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস গত তিন মাস ধরে বৃহৎ আকারের সামরিক মহড়ায় নতুন প্রতিরক্ষামূলক এবং আক্রমণাত্মক অস্ত্র প্রদর্শন ও পরীক্ষা করছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ইরানি পারমাণবিক স্থাপনা, গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি অবকাঠামো এবং সামরিক স্থাপনাগুলিতে বোমা হামলার হুমকির মধ্যে দেশটি আরও একটি অস্থির বছরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার আল-জাজিরা অনলাইন এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজায় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান ইসরায়েলের উপর তৃতীয়বারের মতো বড় সামরিক হামলা চালানোর প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে। একতেদার, জোলফাকার এবং গ্রেট প্রফেট - এই মহড়াগুলো ইরান, ওমান সাগর এবং উত্তর ভারত মহাসাগরজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অস্ত্র পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে, ইরান ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের প্রতি তার অবাধ্যতা বজায় রাখতে চায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতির অধীনে তার সাথে আলোচনা করতে অস্বীকার করছে এবং পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
আইআরজিসি তিনটি প্রধান ভূগর্ভস্থ সামরিক ঘাঁটি উন্মোচন করেছে। কমান্ডাররা জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এই ঘাঁটিকে ‘ক্ষেপণাস্ত্র মেগাসিটি’ বলে অভিহিত করেছে। এই ঘাঁটির ভেতরে কয়েক ডজন ব্যালিস্টিক প্রজেক্টাইল দেখা যাচ্ছিল।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
খোররামশাহর-৪, একটি তরল জ্বালানি রকেট যার পাল্লা ২০০০ কিলোমিটার, তরল জ্বালানি রকেট জাহাদ, যা ওয়ারহেড সহ এক হাজার কিলোমিটার (৬২১ মাইল) পর্যন্ত যেতে পারে, কঠিন জ্বালানি-চালিত রকেট এল৩৬০, যা 150 কেজি বিস্ফোরক বহন করে ১৮০ কিলোমিটার যেতে পারে এবং দুই-পর্যায়ের রকেট কদর, যা দুই কিলোমিটার দূর আঘাত হানতে পারে।
ইরান একটি মহড়ার অংশ হিসেবে শত্রুপক্ষের ড্রোনকে আটকাতে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি নতুন রাশিয়ান তৈরি ইয়াক-১৩০ ব্যবহার করেছিল। ইরান দীর্ঘদিন ধরে অর্ডার করেও পায়নি এমন উন্নত সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমানের পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মস্কো থেকে সাবসনিক দুই আসনের ইয়াক-১৩০ জেটটি সরবরাহ করা হয়েছিল।
রাশিয়ার তৈরি এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াও ইরানের কাছে নিজেদের তৈরি বাভার-৩৭৩ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। এটি ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে ধ্বংস করতে সক্ষম। ইরানের অস্ত্রাগারে বছরের পর বছর ধরে থাকা আরো বিভিন্ন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৫-খোরদাদ, মাজিদ, আরমান, জুবিন এবং তোন্ডার।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি