ভোর থেকে ক্রেতা বিক্রেতার হাঁক-ডাকে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরমুজ আসে এ হাটে। একেকটি ট্রাক আড়তে আসতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন শ্রমিক ও ক্রেতা-বিক্রেতারা। হাতে হাতে নামানো হয় তরমুজগুলো। ট্রলার থেকে আড়তে আসে ঝুপরি ভরে। আকার অনুসারে আড়তের সামনে ১০০ থেকে ১৫০টি করে স্তূপ করা হয়। মৌসুমের শুরুতে বেচাকেনায় এভাবে জমে উঠেছে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর আড়তগুলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তত ১২টি আড়তে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার তরমুজ। ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। পাশেই ধলেশ্বরী নদী। অপর পাশে মুন্সীগঞ্জ প্রবেশের মূল সড়ক হওয়ায় নদী ও সড়কপথে আনা যায় তরমুজ। সামনে এ ফলের আমদানি ও বিক্রি আরও বাড়বে।
ব্যবসায়ীরা জানান, চাষি ও ব্যবসায়ীরা ট্রলারে তরমুজ ও বাঙ্গি এনে নদীর ঘাটে ভিড়িয়ে রাখেন। এক ট্রলারের ফল বিক্রি করতে অনেকের কয়েক দিনও লেগে যায়। এসব কেনার জন্য মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও গাজীপুর থেকে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা আসেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনাও বাড়ে।
আড়তে তরমুজ বিক্রি করতে এসেছিলেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী এলাকার কৃষক গোবিন্দ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, এবার চারা রোপণ মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় ২৫ শতাংশ গাছ নষ্ট হয়েছে। পরিবহন খরচ বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরি ও সারের দাম বেশি। এবার প্রতিটি তরমুজ উৎপাদনে ১০০ টাকার মতো খরচ হয়েছে। সবে ফল উঠতে শুরু করায় দাম বেশি হলেও সামনে কমে যাবে।
জানা গেছে, আড়তে বড়, মাঝারি ও ছোট তরমুজ পৃথক স্থানে স্তূপ রাখা হয়। সেগুলোকে আকার অনুযায়ী বিভিন্ন দামে বিক্রি করেন আড়তদাররা। সরেজমিন দেখা যায়, বড় আকারের তরমুজ ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মাঝারিগুলো ৩০০ থেকে ৪০০ এবং ছোটগুলো প্রতিটি ৩০ থেকে ১০০ টাকা। অনেকে কিনে ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছেন। তরমুজের পাশাপাশি বাঙ্গিও বিক্রি হচ্ছে।
আড়ত মালিক সমিতি, ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, ছয় থেকে সাত বছর আগে দু-একজন আড়তদার এখানে বসা শুরু করেন। সে সময় দু-চারজন ব্যবসায়ী ও কৃষক তাদের উৎপাদিত ফল নিয়ে আসতেন। তখন ক্রেতা ও বিক্রেতা ছিল কম। গত তিন বছরে পাল্টে গেছে সে চিত্র। ব্যাপকভাবে বেড়েছে বেচাকেনা। আড়ত ও ক্রেতা-বিক্রেতাও বেড়েছে। প্রতিদিন বরিশাল, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা থেকে আসে অন্তত এক লাখ পিস তরমুজ। ভরা মৌসুমে এ সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়। মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলাসহ, কুমিল্লা, চাঁদপুর থেকে আসে বাঙ্গি।
কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তরমুজ আনেন আড়তে। আড়তদাররা এসব ফল স্তূপ করে ডাকেন ক্রেতাদের। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকাররা এ সময় ভিড় করেন। একজন ডাকতে শুরু করেন তরমুজের দাম। বড়গুলো প্রথমে ৪০০ টাকায় ডাক শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সর্বোচ্চ দামে যিনি কিনতে রাজি হন, তার কাছে একসঙ্গে একেক স্তূপের ১০০ থেকে ১৫০টি ফল বিক্রি করেন আড়তদার।
বাজারে সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে বলে জানান কৃষক রকি মিয়া। তাঁর ভাষ্য, এ বছর বৃষ্টিতে অনেক চারা মরে যাওয়ায় অন্যান্য বারের তুলনায় তরমুজ কম হয়েছে। টঙ্গিবাড়ীর বালিগাঁও বাজারের বিক্রেতা বিল্লাল বলেন, ‘আমি তিন দিন পর পর এ বাজারে আসি তরমুজ কিনতে। এখানে সারাদিন ফল পাওয়া যায়। সব আকারের তরমুজ পাওয়া যাওয়ায় দূর থেকে পাইকাররা কিনতে আসেন।’
১০-১২টি আড়তে চলতি মৌসুমে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান মায়ের দোয়া আড়তের মালিক মো.

জনি গাজী। তিনি বলেন, নদী ও সড়ক পথে তরমুজ আসে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। তিনি বলেন, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করি। সব আড়ত মিলে দিনে অন্তত কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তরম জ তরম জ ব ক র র তরম জ ব যবস য় আড়তদ র ন আড়ত

এছাড়াও পড়ুন:

হাবিব ও সজীবের জল্লারপাড় লেকে জমজমাট মাদক বানিজ্য

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের জল্লারপাড় এলাকায় হাবিব ওরফে পিচ্চি হাবিব (মাদকসহ ৫/৭টি মামলার আসামি), একটা খুনি পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা ভয়ংকর সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গাং লিডার। 

বাবা মৃত কমল মিয়া এক সময় পুলিশের সোর্স ছিলেন যে কিনা খুন হয় নিজ সৎ ছেলের হাতে। হাবিবের বড় ভাই মানিক এলাকার জনি নামের এক ছেলেকে খুন করে যাবজ্জীবন সাজায় জেল খাটছে।

হাবিব ৫ই আগস্ট এর আগে আজমীর ওসমানেরক্যাডার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলো। গণঅভ্যূত্থানের আগে এলাকায় বড় করে ১৫ আগস্ট পালন ও নাসিম ওসমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন এবং ওসমান পরিবারের পালিত ক্যাডারদের দাওয়াত করে মহড়া দেয়ার ছবি ও বিভিন্ন মিছিল মিটিং এর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। 

ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর সে যোগ দেয় বিএনপিতে। এলাকার বিএনপি'র বিভিন্ন নেতা ও দেওভোগের অনেক নেতার দেখা মিলে হাবিবের অফিসে ও আড্ডায়। অনেকেই আসে হোন্ডার বহর নিয়ে যার ফলে এলাকার মানুষ ভয়ে মুখ খুলেনা। মানুষকে আতঙ্কে রাখতে হাবিবকে দেখা যায় নিজে বড় বড় ছুড়ি নিয়ে মহড়া দিতে। 

হাবিবকে শেন্টার দিচ্ছে বিএনপি'র ক্যাডার গাল কাটা জাকিরের ছোট ভাই ডাকাত সজিব। ডিস বাবুর নির্দেশে ডাকাতি করতে যাওয়া সজিব ডাকাতি মামলায় ৯বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি, হাইকোর্ট থেকে আপিল করে জামিনে আছে। সদর থানায় ৪/৫ টির বেশি মাদকসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। হাবিব ও সজীব নারায়ণগঞ্জে আজমির ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত। 

৫ আগস্টের পর সন্ত্রাসী ও তাদের গডফাদাররা এলাকা ছাড়লেও হাবিব ও সজীব এলাকায় আছে বহাল তবিয়তে। এর কারণ হাবিবের মাদক ব্যবসার অডেল টাকা ও তাদের দুজনের ক্ষমতা। মাদকের টাকায় হাবিব করেছে এলাকায় আলিশান  দুইতালা বাড়ি। হাবিব ও সজীবের আয়ের উৎস হল  তারা পাইকারি হিরোইন ইয়াবা ও গাজা ব্যবসায়ী। 

এক নং বাবুরাইল, ২ নং বাবুরাইল, জিমখানা, পাইকপাড়া, নলুয়াপাড়া, ঋষিপাড়া সব জায়গায় হাবিব ও সজীবের মাদক বিক্রি হয়। হাবিবের দখলকৃত সবচেয়ে বড় স্পট হলো জিমখানা পানির টাংকি যা ফাইম ও সায়েম দেখে। এসব স্পটে দৈনিক লাখ লাখ টাকার নেশা বিক্রি হয়। 

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, এখান থেকে মাসোহারা পৌঁছে যায় কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার পকেটে সেই সাথে নামধারী সাংবাদিকদের কাছে মাসোহারা পৌছে। জনশ্রুতি রয়েছে, এসব অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও কথিত সাংবাদিকদের দাপটে হাবিব ধরা ছোঁয়ার বাইরে। 

হাবিবের প্রধান সেলসম্যান মিলন ও মাসুম ওরা একাধিকবার ডিবির কাছে গ্রেফতার হয় পরে বিশাল অংকের টাকা দিয়ে ছাড়া পায়। ওদের দুজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসবে বিভিন্ন তথ্য।

এলাকায় একাধিকবার অভিযান পরিচালনা হলেও হাবিবকে ধরতে পারছে না প্রশাসন এর কারণ পুরো এলাকা বিভিন্ন সিসি ক্যামেরা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা জল্লারপাড় মসজিদের সামনে বিভিন্ন দোকানদার তাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় এলাকায় পুলিশ আসছে, প্রশাসন ঢোকার আগেই হাবিব সটকে পড়ে। এলাকা ঘনবসতি হওয়ায় লুকিয়ে যায় অন্য কারো ঘরে এজন্য প্রশাসন ধরতে না পড়ে চলে আসে। 

এলাকার সবাই রাতে যখন ঘুমায় তখন তার বিচরণ দেখা যায় বিভিন্ন অলিতে গলিতে। গভীর রাতে সঙ্গী সহ অনেক পাওয়ারের টর্চ লাইট ও দেশি অস্ত্রশস্ত্র  সাথে থাকে ডাকাত সজিব ও কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা। হাবিব ও সজীবের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্যের জায়গা দখলে নেওয়ার অভিযোগও। 

একাধিক বাড়ির মালিক তাদের বাড়ির কাজ করতে পারছে না তাদের দুজনের জন্য। চাঁদা না দিলে কাজ বন্ধ। চাঁদা দিয়ে মীমাংসা করলেই বাড়ির কাজ করতে পারছেন। অন্যের কেনা বাড়িতে সাইনবোর্ড  ঝুলিয়ে দিচ্ছে তারা দুজন জায়গার দাবি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। 

এলাকাবাসী এখন হাবিব ও সজীবের হাতে জিম্মি। সবাই এর থেকে মুক্তি চায়। হাবিব এতটাই ধুরন্দর যে প্রশাসনে হাত থেকে বাঁচার জন্য ৫ ই আগস্ট এর পর এলাকায় ওয়াইফাই ব্যবসা দিয়েছে, তার সেলসম্যান মাসুম এই ব্যবসার ম্যানেজার সে সম্পূর্ণ ব্যবসা দেখাশোনা করছে। মাসুমেরও বিভিন্ন  ছবি আছে আজমির ওসমানের মিছিলে ও ১৫ ই আগস্টের খিচুড়ির বিতরনের অনুষ্ঠানে। 

ছাত্র আন্দোলনের সময়  হাবিব, সজীব ও মাসুম তাদের সবারই ওসমান পরিবারের পক্ষে ছিল নজর কাড়া ভূমিকা। মোট কথা এলাকাবাসী এখন সম্পূর্ণ জিম্মি হাবিব ও সজীবের কাছে।

নারায়ণগঞ্জের সব মাদকের স্পটে অভিযান হলেও জল্লারপাড়ায় হাবিবের মাদকের স্পটে কেন অভিযান হচ্ছে না এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এলাকাবাসী দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে তারা হাবিব ও সজীবের জিম্মি থেকে মুক্তি হতে চায়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাবিব ও সজীবের জল্লারপাড় লেকে জমজমাট মাদক বানিজ্য