কাঁচামাটিয়া নদীর তীরে দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির অবস্থান। বৃহদাকার গম্বুজের দুই পাশে দুটি আর সামনে আছে পাঁচটি গম্বুজ। এই আট গম্বুজের চারদিকে আছে আরও ১০টি মিনার। নানা কারুকার্যখচিত পুরো মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। ময়মনসিংহ শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার পূর্বে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদরের দত্তপাড়া গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় দেড় শ বছর পুরোনো মসজিদটি।

স্থানীয়ভাবে ‘বড় জামে মসজিদ’ নামে পরিচিত এটি। ঈশ্বরগঞ্জ চৌকি আদালতের বিপরীত পাশে অবস্থিত মসজিদটি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। কথিত আছে যে মসজিদটি নির্মাণ করেন তৎকালীন সাবরেজিস্ট্রার মাসুদ মিয়া। মসজিদের প্রবেশ ফটকে নির্মাণকাল লেখা আছে ১৮৮৭ সাল। এ হিসাব অনুযায়ী মসজিদটির বর্তমান বয়স ১৩৮ বছর। কিন্তু স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকাবাসীর দাবি, মসজিদটি নির্মাণ করা হয় অন্তত দুই শ বছর আগে। সে সময় সব স্থাপত্য নকশায় সময় লিখে রাখার ব্যবস্থা না থাকায় হয়তো সঠিক তারিখ ও প্রতিষ্ঠাকাল লিখে রাখা হয়নি। ওই সময় এটিই ছিল ঈশ্বরগঞ্জের সবচেয়ে বড় মসজিদ। সে জন্যই মসজিদের নামকরণও করা হয় বড় জামে মসজিদ।

বড় মসজিদে প্রায় ১৩ বছর ধরে মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো.

রফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই মসজিদ একজন সাবরেজিস্ট্রার স্থাপন করেন। মসজিদটি প্রায় ২০০ বছর পুরোনো। দীর্ঘদিনেও এটির কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। মসজিদটি দেখতে অনেকেই এই এলাকায় আসেন। এখানে ৮টি বড় গম্বুজ এবং ১০টি মিনার আছে। আশপাশের তিন উপজেলায় এমন গম্বুজবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আর নেই। মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পুরোনো স্থাপনার পাশাপাশি নতুন করে মসজিদটি কিছুটা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এখন ৩০০ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। এটিকে আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে বলে তিনি জানান।

ছাদের প্রথম অংশে আছে বড় আকারের তিনটি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় অংশে আছে তার চেয়ে ছোট আকারের পাঁচটি গম্বুজ। মসজিদের ছাদের আটটি গম্বুজই দূর থেকে দেখা যায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গম ব জ মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য

প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।

ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী

২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।

আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছে

প্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।

তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ